• আজ- শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন

ফিচার লিখবেন যেভাবে

লেখক : / ৫৬৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪

add 1

গতানুগতিক সংবাদ থেকে ভিন্ন, তথ্যবহুল, ভিন্নধর্মী প্রতিবেদনকে ফিচার বলা হয়। গতানুগতিক সংবাদ আর ফিচার, দুটো লেখার প্রক্রিয়া ও শৈলী আলাদা। ফিচার যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়, ঘটনা বা ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে লেখা হয়। ফিচারের মাধ্যমে পাঠক ঐ বিষয়, ঘটনা বা ব্যক্তি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দেয়।

গতানুগতিক সাধারণ সংবাদকে বলা হয় হার্ড নিউজ এবং ফিচারকে বলা হয় সফট নিউজ। গতানুগতিক সংবাদ লেখার জন্য সাংবাদিককে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া, `উল্টো পিরামিড কাঠামো` মেনে চলতে হয়। কিন্তু একজন ফিচার লেখক নিজের ইচ্ছেমতো সাহিত্যিক ভাষায় ফিচার লিখতে পারেন। শব্দ ও বাক্যের খেলায় যে যত দক্ষ, তার ফিচারটি হয়ে ওঠে তত আকর্ষণীয়।

কীভাবে ফিচার লিখবেন তা জানার আগে জানা জরুরী ফিচার কত ধরনের হয়। তাই শুরুতেই জেনে নেই ফিচারের কিছু ধরন।

ফিচারের কিছু প্রকার
ব্যক্তি কেন্দ্রিক: বিশেষ কোনো ব্যক্তি নিয়ে এই ধরনের ফিচারে লেখা হয়। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজ, দেশ বা পৃথিবীর ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য ঘটনার সমারোহ ঘটে এই ধরনের ফিচারে। এই ধরনের ফিচার লেখার ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির জীবনী সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে হয়।

স্পর্শময়ী: মানুষের আবেগকে স্পর্শ করে যে ফিচারগুলো সেগুলো এ পর্যায়ে পড়ে। এ ধরনের ফিচার পড়ে মানুষ আবেগাপ্লুত হয়। এই স্পর্শময়ী ফিচারগুলো যেকোন বিষয় নিয়ে লেখা যায়। এ ধরনের ফিচারগুলো পড়ে মানুষ দুঃখ বা সুখ, উভয় অনুভূতিই পেতে পারেন।

নির্দেশনামূলক: এই ধরনের ফিচারগুলোকে বলা হয় `হাউ টু` ফিচার অর্থাৎ কোনো একটি কাজ কীভাবে করতে হয় তা নিয়ে এই ধরনের ফিচার লেখা হয়। আপনি এখন যে ফিচারটি পড়ছেন তা একটি নির্দেশনামূলক ফিচার।

ঐতিহাসিক: ইতিহাসের ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা এই ফিচারগুলো। এই ধরনের ফিচারগুলোকে পাঠককে অতীতে নিয়ে যায়। ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে এই ধরনের ফিচারগুলো।

জানা হলো ফিচারের কিছু প্রকার। এবার আসুন জেনে নেই কিভাবে লিখবেন ফিচার।

শুরতেই বিষয় নির্বাচন
ফিচার লেখার শুরতেই আপনাকে আগে ঠিক করতে হবে কী নিয়ে লিখবেন। এরপর আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনার লেখার বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোণ নিয়ে থেকে লিখবেন। লেখার বিষয় খুঁজে বের করার পুরো লেখার মূলভাবের সারমর্ম কয়েকটি বাক্যে লিখে ফেলুন। এই সারমর্মের ওপর ভিত্তি করেই ধাপে ধাপে আপনার ফিচারটি পরিপূর্ণতা পাবে।

অতঃপর গবেষণা
বিষয় নির্বাচনের পর আপনাকে সেই বিষয়ের ওপর গবেষণা করতে হবে। প্রচুর পড়ালেখা ও ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে আপনি আপনার লেখার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। গবেষণার জন্য আপনি বিভিন্ন বই, ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করতে পারেন। কাজটা একটু সময়সাপেক্ষ হলেও ভালো মানের ফিচার লেখার জন্য এই সময় আপনাকে দিতে হবে।

এবার লেখা শুরু
বিষয় নির্বাচন ও গবেষণার কাজ শেষ করার পরই শুরু হবে লেখা। শিরোনাম, ভূমিকা, মুল লেখা এবং সমাপ্তি পর্ব; এই ৪টি অংশ নিয়েই হবে ফিচার।

শিরোনাম
আপনার লেখা ফিচারটি মানুষ পড়বে কিনা তা নির্ভর করবে ফিচারের শিরোনামের উপর। শিরোনাম যত আকর্ষণীয় হবে, তত বেশী পাঠক হবে আপনার ফিচারের।

ভূমিকা
ফিচার লেখার সময় হার্ড নিউজ লেখার নিয়মের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। একজন লেখক গল্প বলার ঢঙে ফিচার লেখেন। তাই তার সূচনাটা হওয়া চাই আকর্ষণীয় যাতে পাঠক সূচনা পড়ে পুরো ফিচার পড়ার আগ্রহ লাভ করে। সূচনা অংশে আপনি পুরো লেখার সারমর্ম কী তা খুব সংক্ষেপে উল্লেখ করতে পারেন।

মূল লেখা
ভূমিকা পড়ে পাঠক আকৃষ্ট হলেই লেখার মূল অংশ পড়া শুরু করে। পাঠকের আগ্রহটুকু মূল লেখায়ও ধরে রাখতে। এই অংশে একজন লেখক তার সৃজনশীল লেখনশৈলীর প্রকাশ ঘটাতে পারেন। কয়েকটি অংশে ভাগ করতে পারেন এই ফিচারটি। প্রতিটি অংশেই থাকবে নতুন কিছু তথ্য এবং ধারাবাহিকভাবে অংশগুলো সুবিন্যস্ত করতে পারে। মূল লেখায় কোনো অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দেওয়া উচিত নয় যা পাঠকের ফিচার পড়ার মনোযোগ ব্যাহত করে।

মূল লেখায় যা থাকবে:

পর্যাপ্ত তথ্য

ফিচার লেখার সময় খুব অল্প কথায় পর্যাপ্ত তথ্য দিতে হবে। ফিচারের সাথে অপ্রাসঙ্গিক সকল তথ্য বাদ দিতে হবে।

মন্তব্য

ফিচারে অনেক সময় ফিচারের বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মন্তব্য নেয়ার প্রয়োজন হয়। বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তির মন্তব্য কিংবা মতামত ফিচারকে আরও সমৃদ্ধ করে।

সমাপ্তি পর্ব
ফিচারের সমাপ্তি পর্বও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পর্বটি পুরো ফিচারটির মূল নির্যাস ধারণ করে। সমাপ্তি পর্ব খুব অল্প কথায় লিখতে হবে। সমাপ্তি পর্ব শেষে পাঠক যেন ফিচারের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারনা পায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

পুনরায় ফিচারটি পড়ুন
ফিচারটি লেখা শেষ হওয়ার পর পুনরায় ফিচারটি পড়ুন। নিজেকে তখন পাঠকের ভূমিকায় চিন্তা করে পড়ুন এবং ফিচারের ভুল খুঁজে বের করুন। কোথাও কোন ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক কিছু থাকলে তা আপনি সহজেই শুধরে নিতে পারবেন।

এই নিয়মগুলো জানা থাকলে খুব সহজেই আপনি একটি ফিচার লিখতে পারবেন। ফিচার কেবলমাত্র আপনার জ্ঞান ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করবে তাই নয়, এটা হতে পারে আপনার উপার্জনের উৎসও। আপনার ফিচারটি যদি মানসম্মত এবং চমকপ্রদ হয়, তাহলে বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ইত্যাদিতে লিখেই অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT