হিমশীতল-ঠান্ডা রাত। পশমি টাইপের জামা ছাড়া বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকার দুঃসাহস হবে না কারো। আকাশে চাঁদ-তারা নেইই বোধহয় । চাঁদ থাকলে থাকতেও পারে। সে থাকুক বা না থাকুক, খালাদের বাসায় আমার চাঁদের মতোই একটা আম্মু আছে।
সালাতুল ইশার পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে মেডিকেল থেকে বাসায় ফিরছি। আধ্যাত্মিক রাজধানীর ব্যস্ত অলিগলিতে নিয়নবাতির আলো গায়ে মেখে-মেখে ভবঘুরে হয়ে যাওয়াও খারাপ না। আর আমি তো লক্ষ্য নিয়ে হাঁটছি। ভাল্লাগছে। জানি না, এই ভালো লাগাটা কী জন্য। আমার কিউট আম্মুর জন্য, না আঁচ করতে না পারা অন্য কোন কারণে।
বাসায় আমার উপস্থিতি টের পাওয়ার মাত্রই শুরু হলো তার লাফালাফি। দু’বছরের মেয়ে। মুক্তাঝরা স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকায়। আমার ইচ্ছে না থাকলেও ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা আঁকতে হয়। তখন সে যারপরনাই খুশি হয়। আনন্দে লাফায়। কাছে আসার জন্য বলি, আসে না। আসলেও মায়া নিয়ে চোখাচোখি হতে চাইলে হয় না। মুখোমুখিও না। হ্যাঁ, তবে একবার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলো। মুখোমুখি হয়ে একটা হাসিও দিয়েছিলো।
কালই বোধহয় পৃথিবীর সবচে’ আপন দু’টো মানুষকে নিয়ে মেডিকেল থেকে ফিরতে হবে জল জোছনার শহর পানে। তাই সুন্দর একটা কাজ করলাম। আমার কিউট আম্মুটার মায়ের কাছে ‘ছোটদের মহানবী সা.’ নামের একটি বই আমানত হিসেবে দিলাম। বললাম— ‘ও যখন পড়তে শিখবে, তখন এটা তাকে পড়তে দিবেন!’ উনিও জিহ্বাটাকে তালুতে লাগিয়ে শুধু ‘আচ্ছা’ শব্দ যবানে ফুটিয়ে আমানত হিসেবে বইটি রাখলেন। ভাল্লাগলো।
এক-আকাশ পুলকতৃপ্তি নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ভাবলাম, এভাবে কোন নিষ্পাপ ফুল তো আমাকে কখনো মায়ায় জড়ায় নি। কোন ছোট শিশুর জন্য এতো অল্প সময়ে অতোটা মায়া অনুভব কখনো করি নি আমি। আম্মুটার মা-দাদুর ভাষ্যমতে সেও নাকি কখনো কারো সাথে অতোটা অন্তরঙ্গ হয় নি।