আমি আমেনা খাতুন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত কিন্তু চাকরি না করা একজন সাধারণ গৃহিণী। শৈশবের বেশিরভাগ সময়ই পার করেছি গ্রামের পরিবেশে। আর এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশুনাও করেছি মফস্বলে থেকেই। বাকি পড়াশুনা করেছি রাজধানী শহর ঢাকায়। বর্তমানে আমার বয়স পঁয়ত্রিশ ছুঁইছুঁই। আমার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটানো নিজ এলাকায়ই বিয়ে হয় আমাদের চেয়েও ধনী পরিবারের একজনের সঙ্গে। মোটামুটি ধরণের ব্যবসায়ী স্বামীর সুখ-দুঃখের সংসারজীবনে আমার এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেছে। এবার ক্লাস টেইনে উঠেছে। আর ছেলেটা মাত্র তৃতীয় শ্রেণিতে পা রেখেছে। প্রতিদিনের মতো আজও খুব সকালবেলা উঠেই বিভিন্ন কাজ এবং রান্না-বান্না সেরে হাজব্যান্ড ও ছেলে-মেয়ের নানাকিছু গুছিয়ে দেই। এবার খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে টিফিন রেডি করে দিয়ে সবাইকে বিদায় দিয়ে হাফ ছেড়ে একটু সোফায় গিয়ে বসেছি। জানি না, আজ কেন যেন বারবার মনে পড়ছে উঠতি যৌবনের শুরুর দিকে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এক অম্লান স্মৃতির কথা।
তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। একদিন আমার ছোট চাচ্চু এসে মাকে ডেকে বলল, ভাবি আপনার ছেলেমেয়ের জন্য একজন হোম টিউটর ঠিক করেছি। আমারই পরিচিত এক বন্ধু। বিজ্ঞান বিভাগে ডিগ্রীতে (স্নাতক) পড়ে। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করে। আমি যদ্দুর জানি, ভালো গণিত পড়ায়। আপনার তিন ছেলেমেয়েকে পড়ালে মন্দ হবে না।
আমার বাবা মোটামুটি স্বচ্ছল একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। এখনও ব্যবসার সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। তিনি ছেলেমেয়ের পড়ালেখায় টাকা-পয়সা খরচ করতে কার্পণ্য করেননি কখনো।
মা মিষ্টিমুখে বললেন, ঠিক আছে। তুমি যা ভালো মনে করো। স্যারকে একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে আসো।
চাচ্চু বললেন, ঠিক আছে। আগামীকালই নিয়ে আসব।
আমি মনে মনে ভাবছি, মন্দ হবে না। চাচ্চুর বন্ধু অর্থাৎ নতুন স্যারের কাছে ভালোভাবে গণিত পড়তে পারব। আমি রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি স্যার দেখতে জানি কেমন হয়! আবার পরক্ষণেই মনে মনে আওড়াই, স্যার যেমনই তাতে আমার কী।
যেই কথা, সেই কাজ। পরের দিন বিকেলে চাচ্চু স্যারকে সঙ্গে নিয়ে এলেন আর বললেন, আমি এখন যাই। আমার একটু তাড়া আছে। তোমরা ঠিকঠাক মতো পড়ালেখা করবে সোনাবাবুরা। আমি প্রথম দিনের প্রথম দেখাতেই স্যারের মায়াময় সুদর্শন চেহারা দেখে বিমোহিত হয়ে গেলাম। মনে মনে উৎফুল্লতা অনুভব করলাম।
আমরা তিন ভাই-বোন। সবার মধ্যে আমিই বড়। আমার বাকী দু’জনের মধ্যে বোনটা ক্লাস সেভেনে ও সর্বকনিষ্ঠ ভাই ক্লাস ফোরে পড়ে। স্যারকে পড়ার রুমে নিয়ে বসালাম আর আমরাও বই নিয়ে পড়তে বসলাম। স্যার কেমন যেন একটু একটু লজ্জা পাচ্ছেন, তা-ই মনে হলো আমার কাছে।
স্যার একে একে সবার নাম জিজ্ঞেস করার পর্বে আমি উত্তর দিলাম, আমার নাম আমেনা খাতুন। আমার একটা ডাকনামও আছে স্যার।
স্যার বললেন, তোমার ডাকনামও আছে?
আমি উত্তর দিলাম, জ্বী স্যার। আমার ডাকনাম হচ্ছে ‘দিনা’। আমাকে এ নামেও ডাকতে পারেন।
স্যার মুচকি হেসে বললেন, আমি তোমাকে আমেনা নামেই ডাকব।
আমি বললাম, আপনি যা ভালো মনে করেন।
আমার ছোট দুই ভাই-বোন কেমন যেন ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে আর মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় আমার ও স্যারের কথা গিলছে। প্রথমদিনই স্যারের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দর্শনে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করেছে আমার মনের ভেতর। কেন যেন স্যারকে অনেক অনেক আপন মনে হয়েছে আমার কাছে।
আমি প্রশ্ন করলাম, আপনার নাম কী স্যার?
স্যার উত্তর দিলেন, মোঃ আবু তাহের।
আমি এবার বললাম, আপনাকে তাহের স্যার বলে সম্বোধন করব। কী বলেন স্যার?
স্যার জবাব দিলেন, সমস্যা নেই।
স্যার আমার ছোট ভাই-বোনকে পড়া বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, এবার তোমার পালা। আচ্ছা, তুমি কী বীজগণিতের সূত্রগুলো ভালোভাবে পারো?
এতোক্ষণ হাসিমুখে টুকটাক কথা চালিয়ে ছিলাম স্যারের সঙ্গে। কিন্তু সূত্রের কথা জিজ্ঞেস করায় বুকের ভেতর কেমন যেন ভয় অনুভব করলাম।
তারপরও মাথা নেড়ে ধীরে ধীরে উত্তর দিলাম, পারি স্যার।
স্যার আমাকে একে একে সূত্রগুলো ধরলেন। কোনোটা পারালাম আর কোনোটা আটকে গেলে স্যার সুন্দর করে বুঝিয়ে বুঝিয়ে খাতায় লিখে দিলেন।
স্যার বললেন, এক বছর পরেই তোমার এসএসসি পরীক্ষা। আমি যতটুকু বুঝলাম তুমি ছাত্রী হিসেবে খারাপ না। একটু সিরিয়াস হলে বোর্ড পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। দেখতে দেখতে কখন যে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেছে টেরই পাইনি। স্যারের জন্য হালকা নাস্তা এনে বললাম, নাস্তা নেন স্যার।
স্যার তাড়াহুড়ো করে দুই-একটা বিস্কুট মুখে দিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে বললেন, আজ আসি।
আমি বললাম, ঠিক আছে স্যার। আগামীকাল আসবেন না?
স্যার মাথা নেড়ে জবাব দিলেন, হ্যাঁ। ও আরেকটা কথা, আমি প্রতি শুক্রবার পড়াতে আসবো না। আর অন্য যেদিন আসতে পারব না, তা আগের দিন জানিয়ে যাব কিংবা ফোন করে বলে দিব।
স্যার আবারও বললেন, আজ তাহলে আসি। আমি সালাম দিয়ে স্যারকে বিদায় জানালাম। কেমন যেন লাগছে আমার। স্যার যদি আরও কিছু সময় থেকে যেতেন! বাসায় এসে এর আগেও এক স্যার এক ঘণ্টার মতো পড়াতেন। কিন্তু তাহের স্যার তো প্রায় দু’ঘণ্টা সময় দিলেন। তারপরও চলে যাওয়ার সময় মনটা এতো আনচান করছে কেনো বুঝতে পারছি না। জানি না, প্রথম দিনেই স্যারের প্রতি কেনো এতো মায়া বা টান অনুভব করছি!
আমি মনে মনে ঠিক করে ফেললাম পড়ালেখা নিয়ে আর আলসেমি চলবে না।
ভালোভাবে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করলাম। দেখতে দেখতে দু’তিন মাস চলে গেল। স্যার ভালোই পড়াচ্ছেন। সামনে এসএসসি প্রি-টেস্ট পরীক্ষা শুরু হবে। স্যার আমার প্রতি বেশ মনোযোগী। গণিতের পাশাপাশি ইংরেজি গ্রামারও দেখলাম স্যার সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে পারেন। স্যার যখন আমাকে পড়ান, তখন নিজেরই অজান্তে স্যারের দিকে মাঝে-মধ্যে আনমনা হয়ে চেয়ে থাকি। যতোই দিন যাচ্ছে স্যারের প্রতি মায়া বেড়েই চলেছে। স্যারও হয়তো টের পেয়েছেন কিছুটা। স্যার আমার সঙ্গে যখন মিষ্টি হাসি দিয়ে কথা বলেন, তখন আমার বুকের ভেতরে কেমন যেন লাগে। আমি মনে হয় স্যারের মোহে বন্দি গেছি শুরু থেকেই। হঠাৎ হঠাৎ ভাবি, স্যারকে বলে দেই সবকিছু। আর স্যারকেও জিজ্ঞেস করি, আমাকে উনি ভালোবাসেন কিনা। আর কতোবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনোভাবেই স্যারকে আমার ভালোবাসার অনুভূতি জানাতে পারিনি। বিকেল হলেই স্যারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি, স্যার কখন আসবেন। স্যার যেদিন পড়াতে আসতেন না, সেদিন এতো খারাপ লাগত তা বলে বুঝানো যাবে না।
একদিন মা বললেন, আমেনা তোমার পড়া কেমন হচ্ছে আর স্যার কেমন পড়াচ্ছেন?
আমি আনন্দের সঙ্গে উত্তর দিলাম, ভালো আর স্যারও ভালো পড়ান।
মা বললেন, পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো চাই।
আমি বললাম, ঠিক আছে মা।
স্যারও আমাকে প্রফুল্ল চিত্তে যেভাবে পড়ান, মনে হয় তিনিও আমাকে ভালোবাসেন।
এভাবে আরও বেশ কিছুদিন চলে গেল। আমি ভালোভাবে পড়াশুনা করি। স্যারের কথাও ভাবি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণে। মাঝে-মধ্যে আনমনা হয়ে থাকি, জানি না আমার পছন্দের মানুষটিকে অর্থাৎ স্যারকে আমার জীবন চলার আপন করে পাবো কিনা। প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষা দু’টোই ভালো হয়েছে। বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষায়ও ফলাফল ভালো করেছি।
বাবার ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। ঢাকায় ভর্তির আশা বাদ এমতাবস্থায় এলাকার একটা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছি সবেমাত্র। আমার মাথায় আরও একটা বিষয় কাজ করেছে যে স্যারের অনুসঙ্গ ছেড়ে আমি আপাতত দূরে কোথাও গিয়ে পড়তে নারাজ। আমার মনে এই ছিল, আর তা বাবা-মাকেও বুঝতে দেইনি। কিন্তু স্যার এখন বাসায় পড়াতে আসতে নারাজ। কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, আমেনা তুমি তো এসএসসি পাশ করেছো। আমি আর এসে কী করব?
স্যারের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে আমার মনের ভেতর কেমন যেন কষ্টের ঝড় উঠেছে। স্যার আমাদের বাসায় আর আসবেন না, ব্যাপারটা কোনোভাবেই মেনে নিতে চাচ্ছে না আমার স্যারের মায়ামোহে আটকা আমার পাগল মনটা।
আমি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম, আমার ছোট দুই ভাই-বোনকে পড়াতে আসবেন না? আর আমিও আপনার কাছে টুকটাক ইংরেজি পড়ব।
আমার মা-ও তাই বলেছেন।
স্যার বললেন, দেখা যাক কী করা যায়।
এই বলে আজকের মতো স্যার বিদায় নিলেন। আমি কেমন যেন হয়ে গেছি। একা একা নীরবে কেঁদেছিও স্যারের জন্য।
স্যারের জন্য প্রত্যহ অপেক্ষা করতে করতে তিনদিন পর স্যার আবার এলেন। আমার কাছে মনে হলো আমি আমার হারিয়ে মানুষটাকে আবার কাছে পেয়েছি।
আমি মৃদু হাসি দিয়ে বললাম, কেমন আছেন স্যার?
স্যার মাথা নেড়ে জবাব দিলেন, ভালো আছি। তোমার খবর কী?
আমি বললাম, ভালো আছি।
স্যার বললেন, এবার পড়া শুরু করো।
এতোদিন স্যার আমার পড়ায়ই বেশি বেশি সময় দিতেন। আজ কেমন যেন আনমনা হয়ে আমার ছোট ভাই-বোনের দিকে নজর দিচ্ছেন বেশি।
তারপরও স্যার যে পড়াতে এসেছেন এতেই আমি মহাখুশি। চুপিসারে স্যারের দিকে তাকাই আমি। স্যারও কেমন যেন যাদুমাখা দৃষ্টি ফেলেন আমার দিকে। এভাবেই আজকের পড়ার পর্ব শেষ।
রাতে বাবা বাড়ি ফিরলেন। মাকে ডাকলেন, কই গেলে?
মা পাশের রুম থেকে উত্তর দিলেন, আসছি।
কেন যেন বাবা-মার কথাবার্তার দিকে আমার নজর চলে গেল। আমি আমার রুম থেকেই কান পেতে বাবা-মা কী বলছেন সেদিকে কান পেতে রাখলাম।
মা বাবার রুমে এসে বসলেন আর বললেন, কী হয়েছে? কিছু বলবেন?
বাবা মুচকি হেসে বললেন, আমেনার জন্য একটা ভালো সম্বন্ধের কথা বলছে আমার এক আত্মীয়।
তুমি কী বলো? আসতে বলব তাদের?
মা বললেন, আপনি যা ভালো মনে করেন।
বাবা বললেন, ছেলে লেখাপড়া খুব বেশি করেনি। কিন্তু বিত্ত-বৈভবের কমতি নেই। খারাপ হবে না মনে হয়।
কিছুক্ষণ পর মা আমার রুমে এলেন পিছু পিছু আমার ছোট দুই ভাই-বোনও। মা বললেন, তোমার বাবা তোমার বিয়ের কথা বলছেন। কী বলো?
আমি থমকে গেলাম। কেমন যেন লাগছে আমার, এর আগে কখনো এরকম লাগেনি। আমার মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। তারপরও আমার সারাদেহ ঘেমে যাচ্ছে। কেন যেন বারবার স্যারের কথা মনে পড়ছে। মনে মনে ভাবছি, আমি স্যারকে ছাড়া অন্য কাউকে কীভাবে জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নিবো? আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
মা বললেন, কী হয়েছে? কিছু বলছো না কেন?
আমি চুপচাপ বসে রয়েছি। কিন্তু মা নাছোড়বান্দা! আবারও বললেন, উত্তর দিচ্ছ না কেন?
এবার আমি মুখ কালো করে জবাব দিলাম, মা আমি এখন বিয়ে করব না। আমি আরও লেখাপড়া করব।
মা রাগে গড়গড় করে আমার রুম থেকে চলে গেলেন। সে রাতে আমার একেবারেই ঘুম হয়নি। বারবার স্যারের কথা ভাবছি। মনে হচ্ছে স্যারকে ছাড়া বোধহয় আমি বাঁচব না। দরজা বন্ধ করে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পাতা ফুলে গেছে।
পরের দিন স্যার পড়াতে এলেন। স্যার চেয়ারে বসতে না বসতেই আমার ছোট বোন বলে উঠল, স্যার আমেনা আপুর বিয়ের ব্যাপারে গতকাল রাতে কথা হয়েছে। বাবা বলেছেন পাত্র নাকি অনেক ধনী পরিবারের। স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখি, কেমন যেন হয়ে গেছেন আমার বিয়ের কথা শুনে। আমিও ভেতরে ভেতরে কাঁদছি।
আজ একটা মেকি হাসি দিয়ে স্যার বললেন, আমেনা তুমি কী বলেছো?
আমি চুপ করে রইলাম। ভাবছি স্যারকে আমার ভালো লাগা ও ভালোবাসার কথা সব উজাড় করে বলে দেই। কিন্তু আমি নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।
স্যার কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিছু বলবে না? ঠিক আছে কিছু শুনতে চাই না।
জানি না আমার কী হয়েছে! আমার ছোট ভাই-বোন কাছে থাকায় আমি কোনো কথাই বললাম না। ভাবলাম পরে সময় করে এক ফাঁকে স্যারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে মন খুলে সব কথা বলব। কোনোরকম পড়িয়েই আজকের মতো স্যার বিদায় নিলেন।
এদিকে আজ রাতেও বাবা বাসায় ফিরে মাকে ডাকলেন। আর বললেন, সঙ্গে আমেনাকেও নিয়ে আসো।
মা ও আমি বাবার কাছে গিয়ে বসলাম। বাবা বললেন, আমেনা তোমার জন্য বিয়ে ঠিক করেছি। তুমি বলো?
আমি আজ লাজ-লজ্জা ঝেরে সাহস করে বললাম, বাবা আমি তাহের স্যারকে ভালোবাসি।
বাবা বললেন, এমনটা বলবে আমি আগেই কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি। তোমার স্যারের ব্যাপারে আমি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সে একেবারেই নিম্ন ফ্যামিলির। তার চাল-চুলো বলতে কিছুই নেই।
আমি বললাম, স্যার যে গরীব ফ্যামিলির তা জানি বাবা। আমার কাড়ি কাড়ি টাকা-পয়সা লাগবে না।
বাবা রাগে গদগদ করে বললেন, তুই বেশি বুঝিস! আমার পছন্দ করা ছেলের সঙ্গেই তোর বিয়ে হবে।
আমি মাকে বললাম, মা তুমি কিছু একটা বলো। মা বাবার ভয়ে চুপ করে রইলেন।
আমি এবারও বললাম, বাবা আমি আমার ভালোবাসার প্রিয় স্যারকেই বিয়ে করতে চাই।
এবার বাবা আমার দিকে তেড়ে এসে কষে আমার দুই গালেই জোরে থাপ্পড় মারলেন। আমি কাঁদতে কাঁদতে আমার রুমে চলে গেলাম।
স্যারও সেই যে গেলেন, আর কোনোদিন আমাদের বাসায় পড়াতে এলেন না। আর আমিও পারিবারিক চাপে কোনোদিন স্যারকে ফোন দেইনি আসার জন্য। অতীতের বাবার দেয়া এই থাপ্পড় ও স্যারকে ভালো লাগার স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি। আর জানি না, মৃত্যুর আগে ভুলতে পারব কিনা।