হ্যালো, ভাইরে তুই কইরে??
-আরে মর জ্বালা আমি আবার কই যাব? বাসাতেই আছি। ঘুমাচ্ছিলাম
-জলদি আয় সোনা ভাই আমার।
আবার কী হলো?
-আরে তুই আয় না রে ভাই।আসলে সামনা সামনি সব কমু রে ভাই।আমার সংসার ভাইংগা গেলো রে
চুপ থাক আপ্পি। সাত সকালে অলুক্ষনে কথা
আরে না রে ভাই সত্যি কইতাছি রে। তুই জলদি আয় নাইলে আমি কইলাম বিষ খামু
আজ ছুটি কাল চরকি তে মুভি দেখলাম ভোর রাত অবধি। তার পর যে ই চোখের পাতা লেগেছে অমনি শুনি মোবাইল ভাইব্রেট করছে।চোখ বন্ধ করেই কেটে দিয়েছিলাম। এই সময় কেউ ফোন
দেয়?
এরপর আবার ভাইব্রেট করছে।
ধ্যেত ধরব না। দেখি কলার নাছোড় বান্দা।
কল আসছেতো আসছেই
ঘুম ঘুম চোখে দেখি বড় আপ্পির ফোন
ধড় মড়িয়ে উঠলাম। ঘড়ির কাঁটায় দেখি ছটা দশ।অজানা আশংকায় বুক ধ্বক করে উঠল।ফোন টা ধরলাম।
আমার এই বড় আপ্পি টা হল অভার সেন্সিটিভ।কথায় কথায় খালি “‘ কেন্দে” দিবে।রাগ করলে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিবে।তাদের একটাই ছেলে।সে আরেক বিচ্ছু।দিন রাত দুস্টুমির শেষ নেই।একবার করল কি ডেটল খেয়ে বলল মদ দেখ আম মদ খাইছি। অই যে একটা বুড়া আছে না যে ভিডিও তে সারাক্ষন বলে মদ খা মদ খা।আমি মদ খাইছি।তারপর একে মেডিক্যালে নিয়ে পেট ওয়াশ টুয়াশ করিয়ে এক মহা কান্ড।এদিকে ওর মা বার বার অজ্ঞান হচ্ছে আমার সোনা রে বাঁচা ভাই বলে। এদিকে আমি মা কে সামল্যাব না ছেলেকে।
উফফ কী ভয়াবহ অবস্থা গেছিল বছর দুয়েক আগে। তার পর আরেকদিন অই ক্ষুদে শয়তান টা ব্যাটমান ব্যাট ম্যান বলে কালো।মুখোশ আর কালো চাদর একটা পিঠে ঝুলিয়ে দিল দোতলার চিলে কোঠা থেকে লাফ।ভাগ্যিস নিচে বালুর স্তুপ রাখা ছিল।পাশের বাড়ির বিল্ডিং কন্সট্রাকশনের কাজ চলছিল।কিছু হয়নি।এরপর ওর জন্যে ছাঁদের সিড়ি তালাবন্ধ করে রাখা।
*****************–****************
সকালে নাস্তা টাস্তা খেয়ে গেলাম আপ্পির ওখানে। দেখি অতিচঞ্চল ভাগনে টা আজ একেবারেই চুপচাপ।
কীরে খেয়েছিস কিছু??
মাথা নাড়ল ভাগ্নে।
জানতাম।ওকে একটা প্যাকেট দিলাম।
খেয়ে নে।
সবার জন্যেই নাশতা এনেছি।আজ যে চুলা জ্বলবেনা সেটা বলা বাহুল্য
দুলা ভাই মুখ খানা গম্ভীর করে পেপার পড়ছেন। বুঝাই যায় ঘরে থার্ড ওয়ার্ল্ড উয়ার হয়ে গেছে।সব জিনিস পত্র ইতি উতি ছড়ানো। মেঝেতে ভাংগা গ্লাস কাপ প্লেট। সব আমার বোনের কাজ। মাঝে মাঝে ভাবি ধৈর্য্যের জন্যে যদি নোবেল দেয়ার ক্ষমতা থাকত আমার তাহলে এই দুলা ভাই কে দিতাম। বিচ্ছু ভাগনে আমাকে একবার কানে কানে বলেছিল জানো আম্মু না আব্বুকে মারে। আম্মুকে আব্বু খুব ভয় পায়। আমি ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিলাম।ছিহ বড় দের সম্বন্ধে এসব বলতে নেই। বেশি পাকা হয়ে গেছিস
সবার আগে আমি শুরু করলাম পরিস্কার অভিয়ান। কারন। মেঝেতে ছড়ানো ভাংগা কাঁচের টুকরা পায়ে বিঁধে গেলে যে কারো সর্বনাশ হবে।রান্না ঘর থেকে ঝাড়ু বেলচা এনে নিজেই কাজ শুরু করে দিলাম
আহা হা করছ কী? দুলালের মা আসবে তো একটু পর।বলে দুলা ভাই এগিয়ে এলেন
বললাম চুপচাপ বসে থাকুন লড়বেন না।আপনি দেখছি আবার খালি পা। যান যান সোফায় যেয়ে বসুন।আমি সব ভাংগা কাঁচের টুকরা গুলা মেঝে থেকে পরিস্কার করলাম। ছড়ানো ছিটানো জিনিস গুলা আবার স্ব স্থানে রাখলাম। এবার ভাগনে এগিয়ে এসে কানে কানে বলল
“আম্মু আজ তোমার সাথে চলে যাবে।
আম্মু বলছিল আব্বু কে ডিভোর্স দিবে ”
এই টুকুন ছোঁড়ার মুখে এই রকম কথা- আপ্পির উপির ভীষন বিরক্ত লাগল
বয়স হয়েছে কিন্তু কান্ডজ্ঞ্যান হলনা।বাচ্চার সামনে এগুলা বলে কেউ?
আমি কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বললাম” এই যাহ বেশি পাকা কথা বলবি নাহ।” বড়দের কথায় কান দিতে নেই।
টিভিতে কার্টুন দ্যাখ গে।
বারে আমাকে বকছ কেন? আম্মু চিৎকার করে বলছিল যে।
এই বার আমি আর কী বলব?আপ্পির উপর রাগ লাগছিল
দুলাভাই কি হয়েছে বলুন দেখি।
যাও নিজের বোনের কাছেই শুনে এসো।নির্জীব কন্ঠে বললেন
আপ্পির বেড রুমে আস্তে করে টোকা দিলাম
কে??
আমি
সাথে সাথে দরজা খুলে গেল।আমাকে হাত ধরে একঝটকায় ভেতরে টেনে নিয়ে দরজা লাগিয়ে
বললে অই হারামিটার সাথে কথা হয়েছে? ওর একটা কথাও বিশ্বাস করবিনা। ও একটা লুইচ্চা ইতর পাঁজির পা ঝাড়া।মুখে এমন এক ভাব করে রাখে যেন কিছুই বোঝেনা।
ভাজা মাছ টা ও উলটে খেতে জানেনা।
এক।নিস্বাসে গড় গড় করে বলে গেল আমার বোন।
দেখলাম চোখ ফুলে কদম ফুল সেই সাথে জবা ফুলের মত টকটকে লাল আপ্পির চোখ।সারা রাত মনে হয় কেন্দেছে।
এদিকে দেখি ব্যাগ স্যুটকেস সব গুছিয়ে রেখেছে।
আরে কি হয়েছে টা কি সেটা তো বল??
তোমাদের মধ্যে এর আগেও তো ঝগড়া ঝাটি হয়েছে। বললাম আমি
তার আগে বল অই লোফার টা তোকে কী বলেছে?ওর একটা কথাও বিশ্বাস করবিনা।হারামি একটা।পাক্কা নিমকা শয়তান।
ফোপাচ্ছে আপ্পি
আগেই বলেছি আমার এই বোন হল হাইপার সেন্সিটিভ মহিলা।তিল কে তাল করে দেখা ওর স্বভাব।এর আগেও খুব তুচ্ছ কারনে রাগ করে ছেলে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে এসেছে। দুলাভাই দুদিন পর সলজ্জ হাসি দিয়ে মিস্টির প্যাকেট নিয়ে বাসা থেকে আবার আপ্পি কে নিয়ে গেছে।
ওর এসব কান্ড দেখে আমি অভ্যস্ত।একবার কী হল ওর বার্থ ডে তে দুলাভাই রাত বারোটায় কেন উইশ না করে নাক ডাকিয়ে ঘুমালো এই নিয়ে অভিমান করে আমাদের বাসায় চলে এলো।
আপ্পি বলছে ভাইরে এবার মামলা সিরিয়াস। ওর মত একটা গুয়ের পোকার সাথে একত্রে থাকা যাবেনা।
দ্যাখ আমার কিন্তু বিরক্ত লাগছে।কি হয়েছে সেটা না বলে খালি ত্যানা পেচাচ্ছ। আমি কিন্তু চলে যাব।
এই বার আপ্পি তার বিশাল বপু নিয়ে আমার বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পারে ভ্যা করে বাচ্চাদের মত কেদে দিল।কান্না ফোপানি কঁকানির ভেতর তার বক্তব্য যা উদ্ধার করলাম সেটা হল
কাল দুলাভাই অফিস থেকে আসার পর উয়াশ রুমে গেছে ফ্রেশ হতে।এমন সময় তার মোবাইলে কল এসেছে। আপ্পি সেটা ধরেছে।ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ বলছে
উবায়দুর রহমান সাহেব কি আছেন?
আমার বোন ঝাঁঝের সাথে উত্তর দিল তাকে আপনার কি দরকার?
সেই নারী কন্ঠ বলল আজ উনার জন্মদিন তাই উনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ফোন দিয়েছিলাম।
ব্যস আমার বোনের মাথা গরম।
কে ওই “” মাগী”” যে আমার জামাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়।তার সাথে ওর কিসের সম্পর্ক।নিশ্চই সে তার গার্ল ফ্রেন্ড।
ব্যস তার পর এই লংকা কান্ড।
ভাইরে তুই এক্ষন আমারে লইয়া যা
বললাম তোর এই চেহারা দেখলে আম্মা ফিট হয়ে যাবে।তুই আগে ফ্রেস হয়ে আয় বলে তাকে ফ্রেশ হতে বাথরুমে পাঠিয়ে দুলা ভাইএর কাছে এলাম
ভাইয়া কি হয়েছে আপনি একটু বলবেন প্লিজ।আমি জানি আপনি।মোটেই সেরকম লোক নন।আমার বোন কে তো আমি চিনি।আপনার কাছ থেকে ব্যাপারটা শুনতে চাই।
দীর্ঘস্বাস্ ফেলে দুলাভাই বললেন বছর দুয়েক আগে উনার অফিসে একটা স্বেচ্ছা রক্তদান সংস্থার ব্লাড ক্যাম্প হয়েছিল।উনি রক্ত দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই রক্তের দরকার হলে তিন চার মাস পর পর ফোন দেয়। আবার উনার জন্মদিনে নে ফোন করে শুভেচ্ছা জানায়।
অঃ এই কথা হা হা হা।আমি হেসে উঠলাম। ওরা তো আমাকেও উইশ করে। আমি ওদের লাইফ ডোনার।
তারপর ঝাড়া দু ঘন্টা ধরে আপা কে। বোঝানোর পর শান্ত হল।দুজন কে খাবার টেবিলে বসিয়ে খেতে দিলাম।খেতে চায়না জোর করেই খাওয়ালাম।
এরপর ফোনে আমার বন্ধুর সাথে একটু কথা বলে নিয়ে দুলাভাই কে বললাম
ভাইয়া আপনার জন্ম দিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।আমি তো আপনার জন্মদিনের তারিখ জানতাম না।কারন আপনি এসব পালন টালন করতে পছন্দ করেন না।তবে আজ আমি ছোট্ট একটা উপহার দিতে চাই। আমার বন্ধুর একটা পিকনিক রিসোর্ট আছে সাভারে।ওর সাথে কথা হল
গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে। আপনারা আজ সারা দিন অই রিসোর্টে বেড়াবেন।দ্রুত তইরি হয়ে নিন।গাড়ি চলে আসবে আধ ঘন্টার মধ্যেই।যান কুইক রেডি হয়ে নিন।
আপ্পি আবার বেড রুমে আমাকে ডেকে বলে
তুই যাবিনা??
না আপ্পি আজ আমার বিয়ের দাওয়াত আছে।তোমরা গিয়ে বেড়িয়ে এসো
এই শোন না। এই শার্ট টা ওর জন্যে এনে রেখেছিলাম ওকে সারপ্রাইজ দিতে। তুই ওটা অকে দিয়ে আয়।এটা পরে গেলে সুন্দর লাগবে।
সে কী তোমার জামাইএর জন্যে শার্ট এনেছ আমি দেব কেন??
আমার লজ্জা লাগছে।
সলজ্জ কিশোরীর মত মুখ লুকালো আপ্পি
পাগলি বোন আমার।