সাহিত্যপাতা: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর জন্ম ১৮৯৬ সালে সাতক্ষীরা জেলার বাঁশদহ গ্রামে। বাবা মুনশী মোহাম্মদ ইব্রাহিম ছিলেন পল্লী চিকিৎসক। বাবার ডাক্তারখানায় সংবাদপত্র আসত। বিভিন্ন লেখা নিয়ে চলত বিতর্ক। বিষয়টি কিশোর ওয়াজেদ আলীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
ওয়াজেদ আলী সিদ্ধান্ত নেন, বড় হয়ে সাংবাদিকই হবেন। শিক্ষাজীবন শুরু বাঁশদহের মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ে। পরে তিনি বাবুলিয়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে বৃত্তিসহ এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে এফএ ক্লাসে ভর্তি হন। তবে মওলানা আকরম খাঁর প্রভাবে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং পরীক্ষার আগেই কলেজ ছেড়ে ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন।
সরকারি চাকরিও করেছেন কিছুদিন। শেষ পর্যন্ত তিনি থিতু হন সাংবাদিকতায়। ১৯২০ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় তিনি অনেক দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোহাম্মদী, নবযুগ, সেবক, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, The Musalman, খাদেম, সওগাত, সহচর, বুলবুল ও সাম্যবাদী।
প্রাঞ্জল ও সাবলীল ভাষায় প্রবন্ধ রচনা করে ওয়াজেদ আলী লেখক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। তাঁর লেখা প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় ২০০। বইয়ের মধ্যে আছে- ‘মরুভাস্কর’, ‘স্মার্ণানন্দিনী’ (অনুবাদ), ‘ছোটদের হজরত মোহাম্মদ’, ‘কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’, ‘মোহাম্মদ আলী’, ‘ডন কুইজসোটের গল্প’, ‘মহামানুষ মুহসীন’ ও ‘সৈয়দ আহমদ’।
কিছুদিন আগে বাংলা একাডেমি থেকে তাঁর রচনাবলির অংশবিশেষ দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখায় মুসলিম সমাজের নানা দোষ-ত্রুটি ধরা পড়ে। তিনি যুক্তিবাদী মন ও পরিচ্ছন্ন চিন্তার অধিকারী ছিলেন। ১৯৫৪ সালের ৮ নভেম্বর নিজ গ্রামেই তিনি মারা যান।