১৯৭১ সালের ১লা-মার্চ …
রহমত মাস্টার: ভীষণ উদ্বিগ্ন উৎকন্ঠা অবস্থায় চিন্তিত মুখে হাত দুটি পিছনে বেঁধে। তার বাড়ির আঙ্গিনার এপাশ থেকে ওপাশে একা একা পায়চারি করেই চলেছে। হঠাৎ, সেখানে এলো সে গাঁয়ের ছেলে সংগ্রাম। রহমত মাস্টারকে চিন্তা গ্রস্ত দেখে…
সংগ্রাম বললো: কি ব্যাপার মাস্টার মশাই, কি হয়েছে.? আপনাকে এত উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে কেনেন? মনে হচ্ছে খুব দু:শ্চিন্তায় আছেন?
রহমত মাস্টার: হ্যাঁ, তুমি ঠিকই ধরেছো সংগ্রাম। মনটা একদম ভালো নেই। আমাদের সারা পূর্ব বাংলা জুড়ে এক অশান্ত ভাব বিরাজ করছে। তোমার সাথে আমি যে বিষয়টা নিয়ে আগেরদিন বলেছিলাম।
পূর্ব বাংলা আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভূমিসংস্কার, রাষ্ট্র ভাষা, অর্থনীতি আর প্রশাসনিক বৈষম্যের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে যে বিরোধ চলে আসছে। আজ ১লা-মার্চ তা মিমাংসা হওয়ার কথা ছিল।
সংগ্রাম বললো: হ্যাঁ, এ বিষয় আগে একদিন বলেছিলেন আপনি। তা- কি হয়েছে মাস্টার মশাই..? সে-সব কোন্দল এখনো মিমাংসা হয়নি?
রহমত মাস্টার: দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে…নাহ সংগ্রাম! আজ বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠক চলাকালীন বাইরে জনগণের মিছিল আর হৈ-হুল্লোড়ের শব্দে ভিতরে কিছুই শুনতে পারছিলো না। আর তাই ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে সে বৈঠক স্থগিত ঘোষণা করেছে।
সংগ্রাম বললো: তারপর! তারপর এখন কি অবস্থা মাস্টার মশাই?
রহমত মাস্টার: নি:শ্বাস ছেড়ে বললো, তারপর আর কি! এখন ক্ষোভে ফেটে পড়েছে ক্ষিপ্ত ছাত্র জনতা সকলেই। বাঁশের লাঠি হাতে ঢাকা শহরসহ, পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর জুড়ে চলছে খন্ড খন্ড মিছিল।
সংগ্রাম বললো: এরপর! এরপর কি হবে মাস্টার মশাই? কিছু কি অনুমান করতে পারছেন?
রহমত মাস্টার: সেটাই তো চিন্তার বিষয় সংগ্রাম। পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে দিনের পর দিন দ্বন্দ্ব যেভাবে তীব্র আকার ধারণ করছে। শেষমেশ কি- যে হবে, এখন ঠিক বলা যাচ্ছে না।
সংগ্রাম: চিন্তিত মুখে, তাহলে তো বেশ চিন্তার বিষয় দেখছি মাস্টার মশাই। আচ্ছা মাস্টার মশাই, এ বিষয় যখন যা হয় আপনি কিন্তু আমাকে জানাবেন।
রহমত মাস্টার: আচ্ছা ঠিক আছে, বলছো যখন নিশ্চয়ই তোমাকে জানাবো সংগ্রাম।
সংগ্রাম: আচ্ছা, আমি তাহলে এখন আসছি মাস্টার মশাই। আমার আবার একটু মাঠে যেতে হবে। ক্ষেতের ফসল গুলো দেখতে।
রহমত মাস্টার: হ্যাঁ, এসো সংগ্রাম, আমারও বেরুতে হবে স্কুলে যাওয়ার সময় হলো।
মমতা বেগম:- বউ মা…ও বউ মা…
বউ মা… কনে যে গেল সব..? কাজের সময় যদি একটারও কাছে পাওয়া যায়? বউ মা… ও বউ মা… কোথায় গেলে.?
সখী: দূর থেকে একটু উচ্চ স্বরে বললো, জ্বি মা… এই তো, আসছি … তারপর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে… আমায় কিছু বলছেন মা?
মমতা: আমি কখন ধরে ডাকছি কি করছিলে?
সখী:- মা, আপনার পুঁতা স্বপ্ন, কানছিলো তাই… ওর একটু বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলাম ঘরে।
মমতা: ও আচ্ছা … তা-আমার দাদু ভাই কি এখন দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে?
সখী: হ্যাঁ..মা, এই মাত্র ঘুমালো…
মমতা: তাইতো বলি, আমার দাদু ভাইর কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছিনে কেনো..? তা হ্যাঁ.. বউ মা.. যে জন্য তোমায় ডাকছিলাম.. এই সাত সকালে
মুক্তি কোথায় গেল বলো তো?
সখী: একটু উত্তর পাড়ায় গেছে মা। ওর এক বান্ধবী না কার কাছ থেকে কলেজের পড়ার নোট না কি যেন নেবে তাই.।.. বললো তো, নোটটা নিতে যা একটু দেরি হবে ভাবি। আমি নোট নিয়েই দ্রুত চলে আসবো।
মমতা: সেতো বুঝলাম, এক মাস পর মেয়েটির বিয়ে। ছেলে পক্ষের সাথে কথা বার্তাও পাকাপাকি হয়ে গেছে। বোঝই তো বউমা, কলেজ পড়ুয়া একটা সেয়ানা মেয়ে। এভাবে হুটহাট করে যেখানে সেখানে যাওয়াটা কি ওর ঠিক.? কি যে করে মেয়েটা ঠিক বুঝিনে …