আমাকে কী শাস্তি দেবে দাও।
হে মানুষের সভ্যতা,
হে সভ্যতার সভ্যগণ,
তোমরা
আমাকে কী শাস্তি দেবে,
দাও।
না।
সশ্রম বা বিনাশ্রম – কোনো কারাদণ্ডই আমার জন্য আর প্রযোজ্য নয়।
আমি জীবন-কারাগারে
আজীবন কয়েদি এক অসহায় বন্দী,
আর কোনো কারাগারে রুদ্ধ করার আছে কি প্রয়োজন আমায়।
তোমরা
আমাকে ফাঁসি দিতে পারো।
না। কোনো গোপনীয়তার দরকার নেই।
প্রকাশ্য দিবালোকেই।
হতে পারে কোনো কালিদাসি আষাঢ়ের রিমঝিম বিকেলে,
রবীন্দ্রীয় ফাল্গুনের বুনো বাতাসের মাতাল চাঁদরাতেও
করা যেতে পারে এমন আয়োজন;
বৃষ্টি বা জোছনা মাখতে মাখতে হবে চলে যাওয়া।
হেমলক পান খুব সেকেলে ব্যাপার মনে হয় আমার কাছে,
তবুও, আমি অনেক অনেক অনেক চেষ্টা করেছি,
পারিনি।
নিজেই নিজের মৃত্যুর আয়েজন – সে এক কঠিন অনুষ্ঠান।
পারবো না।
আর, তোমরাও গোপনে ওরকম ব্যবস্থা কোরো না
হ্যা, আমাকে তোমরা সর্বসমক্ষেই ফাঁসিতে ঝুলাও।
অথবা,
দিগন্তবিস্তারি মরুতে নিয়ে শিরশ্ছেদ করতে পারো।
যেখানে অজস্র মানুষের জমায়েত হবে।
আমার রক্ত দর্শনে পাপ থেকে বিমুক্ত নিষ্পাপ শিশু হয়ে ফিরবে অনুষ্ঠান-অনুগামীরা,
যেমন করে তীর্থ করে ফেরে পুণ্যার্থী।
আর একটি কাজ করা যায়!
ধরো, আমি একা চলেছি মাথা উঁচু করে।
তোমরা আমার মাথায় ফেললে পাথরের জগদ্দল,
দলিত গলিত হলো আমার উদ্ধত উচ্চ গোঁয়ার তুচ্ছ এ শির,
মগজের সব মালমশলা জলতরল রস আকারে
শুষে নিলো মাটি।
যেমন করে সে শত পাপাচার গভীরে টেনে নেয়।
অথবা,
গিলোটিনে আটকে যেভাবে মুন্ডুপাত করা হতো পাপী অপরাধীর;
সেরকম কোনো অনুষ্ঠানও আয়োজন করা যায়
হয়তো অধিক দৃষ্টিনন্দন হতে পারে সে দৃশ্য।
আরও আছে, গ্যাস চেম্বার, ফায়ারিং স্কোয়াড…
অথবা
আরও ভীষণ ভয়ঙ্কর মৃত্যুর পরিকল্পনা যদি তোমরা করতে পারো
তোমাদের শরিয়া ও আইন মোতাবেক
তোমাদের রুচি ও পছন্দ অনুসারে
তোমাদের আকাঙ্খা ও সক্ষমতা অনুযায়ী।
এসো সভ্যতা,
এসো, আমায় হত্যা করো
তলোয়ার পরিণত হোক তুলিতে
মৃত্যু হয়ে উঠুক জীবন্ত সুন্দর।
এসো সভ্যতার সভ্যগণ
তোমাদের সভ্যতায় আমি বরাবরই অসভ্য।
এই পাপী অপরাধীর জন্য
তোমরা কোন্ মৃত্যু দেবে দাও
কারাদণ্ড নয় – আমার জন্য মৃত্যুদণ্ডই শ্রেয়।
কোন্ মৃত্যু আমাকে দেবে দাও
আমাকে কী শাস্তি দেবে দাও।
আমাকে কী শাস্তি দেবে দাও
হে মানুষের সভ্যতা,
হে সভ্যতার সভ্যগণ,
তোমরা
আমাকে কী শাস্তি দেবে,
দাও।