• আজ- শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

শিশুর মানসিক বিকাশে বই

সাকী মাহবুব / ৫৬০ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩
শিশুর মানসিক বিকাশে বই
শিশুর মানসিক বিকাশে বই

add 1
  • সাকী মাহবুব

প্রতিটি শিশুই বই ভালোবাসে।বিশেষ করে আনন্দমূলক কোনো বই। এ ধরণের কোনো বই হাতের কাছে পেলেই তারা বারবার পড়তে চেষ্টা করে। ভালোভাবে পড়তে না পারলে বানান করে পড়ে। তাও যদি না পারে তবে ছবি দেখে বুঝতে চায়। প্রায় অধিকাংশ শিশুদের মধ্যে চমৎকার এ আগ্রহটা আছে। তাই সকল অভিভাবকদের উচিৎ শিশুদের পরম এ আগ্রটাকে কাজে লাগানো। কারণ আজকের যে শিশু বইয়ের প্রতি যত আসক্ত সে শিশু তত বেশি এগিয়ে। তারা এক সময় বিদগ্ধ পাঠক হবে, হবে খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিক, লেখক কিংবা হবে আলোকিত মানুষ। হাল ধরবে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের।একজন শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে বই। বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক মাক্সিম গোর্কি বলেছেন, আমার মধ্যে উত্তম যদি কিছু থেকে থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছেই ঋণী। মানব জীবনে বইয়ের গুরুত্বের কথা স্মরণ করে টলস্টয় বলেছেন জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন -বই বই এবং বই। মিল্টনের ভাষায়- A good book is the precious life book of a master sprit

একটি ভালো বই পাঠকদের বিবেককে জাগ্রত করে আলোকিত পথ দেখাতে পারে।জ্ঞান -বুদ্ধিকে বাড়িয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিতে পারে। এডিসন তাই বলেছেন, ব্যায়ামের দ্বারা যেমন শরীরের উন্নতি হয় পড়াশোনার দ্বারা মনেরও তেমনি উন্নতি হয়ে থাকে। বিশ্ব কাপাঁনো বীর যোদ্ধা নেপোলিয়ন বোনাপাট যুদ্ধে গেলেও বই নিয়ে যেতেন। তাঁর শয়নকক্ষের পাশেই থাকতো লাইব্রেরী। মজার বিষয় হলো এ মহান মনীষী বলেছেন, অন্তত ষাট হাজার বই সাথে না থাকলে জীবনটাই অচল।মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো বই। কারণ বই হচ্ছে দুটি মলাটে আবদ্ধ জ্ঞানের আলো। মানব জীবনকে বিকশিত করার জন্য বইয়ের কোনো বিকল্প নাই। সুষম খাদ্যে যেমন মানুষের স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটায় তেমনি চিত্তের বিকাশ ঘটায় বই। প্রবাদে আছে যে জাতির জ্ঞানের ভাণ্ডার শূণ্য সে জাতির ধনের ভাণ্ডারও শূণ্য। বিশ্বসাহিত্যের খ্যাতিমান কবি ওমর খৈয়ামের নেশা ছিল বই পড়া। কোনো বই হাতে পেলেই তা পড়ে শেষ করে ফেলতেন।তিনি বলেছেন, সূর্যের আলোতে যেরুপ পৃথিবীর সকল কিছুই ভাস্বর হয়ে ওঠে, তেমনি জ্ঞানের আলোতে জীবনের সকল অন্ধকার দিক আলোকদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। একটি বই একজন শিশুকে ভাসায় কল্পনার সাগরে। তাই বই পড়লে শিশুর কল্পনাশক্তি বেড়ে যায়।যেটা সিনেমা, নাটক, টেলিফিল্ম দেখলে বা অন্য কিছু করলে এতোটা বিকশিত হয় না। পৃথিবীতে একজন মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হলো বই।বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু আর কিছুই হতে পারে না।বই শুধু আনন্দের মাধ্যম নয়, একটা বই থেকে নানা কিছু শিখতে পারে একজন পাঠক। যেটা কোন বন্ধু শিখাতে পারে না।বন্ধুর সাথে ঝগড়া হতে পারে কিন্তু বইয়ের সাথে কোন ঝগড়া হয় না।বরং বই মানুষের মন মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।তাই বাংলাদেশের একজন কবি লিখেছেন
“পড়িলে বই আলোকিত হই
না পড়িলে বই অন্ধকারে রই।”
শিক্ষা অর্জনের একমাত্র ধারক ও বাহক হলো বই।বই মানুষের মনের খোরাক জোগায়, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। মানুষের ফুলের মতো প্রস্ফুটিত করে। মানুষের জীবনকে অন্ধকার থেকে হিরন্ময় আলোর দিকে নিয়ে যায়। বই মানুষকে বিকশিত করে, রুচিশীল করে, সত্যিকার অর্থে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বর্তমান আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিশুই ভিডিও গেমস, লাইকি, পাপজি, মোবাইল ফোনে আসক্ত। দেখা যায় শিশুরা খেতে না চাইলে, দুষ্টুমি করলে বা কোন বিষয় েিন্য় কান্নাকাটি করলে অভিভাবকরা তাদের হাতে টিভি রিমোট, ভিডিও গেমস নয়তো মোবাইল ফোন তুলে দেন। যা শিশুর ভবিষ্যতের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে এক সময় শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও অমনোযোগী হয়ে পড়ে। অভিভাবকদের উচিৎ এ বিষয়ে সচেতন হওয়া। স্কুল গামী শিশুদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই, ছড়ার বই, সাইন্স ফিকশন, বিজ্ঞান ভিত্তিক বই, কিশোর ম্যাগাজিন পড়তে দিতে হবে। এতে শিশুর জ্ঞানের ভাণ্ডার আরও বিকশিত হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও ভূমিকা পালন করতে হবে।আর শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে শিশুর জন্মদিনে খেলনার পাশাপাশি ভালো ভালো রুচিশীল, মার্জিত বইও উপহার দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বই শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় এবং কল্পনা শক্তি বাড়ায়। এতে তার ভাষাগত দক্ষতা বাড়ে, আবেগের বিকাশ ঘটে। বই পড়লে শিশু নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হয় এতে তাদের শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি পায়। কল্পনা শক্তি বাড়ে। আজকের শিশরা আগামী দিনের কর্ণধার, দেশের যোগ্য নাগরিক, তাই একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের কোমলমতি শিশুদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে অবশ্যই শিশুদের হাতে বই তুলে দিতে হবে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT