নাজমুল আলম মাহদী
কিশোর ছেলে ইমাদ। তার রূপ-গুণ উভয়টাই প্রশংসনীয়। রূপে নুর চমকায় নিত্যকার প্রতি মুহূর্ত। সাথে মুচকি হাসি লেপ্টে থাকে ঠোঁট জুড়ে। নীরবে–নিভৃতে হেঁটে বেড়ায় সে; অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে একদম বিরত থাকে। তার না বলা সব কথা স্বার্থপর দুনিয়ার কোন মানুষকে না বলে যেনো, রবের কাছেই খুব করে বলে। যা আঁচ করতে পারা যায় তার সালাতপরবর্তী দো‘আগুলো দেখে। অনেকটা লাজুক স্বভাবেরও ইমাদ। সর্বোপরি সে পর্দার বিধানের প্রতি খুব যত্নশীল। যে বিধানকে আজ কোন বিধানই মনে হয় না আমাদের। অথচ স্বপ্নীল সুনালী প্রভাতের নাগাল পেতে হলে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান পালন করা আমাদের জন্য আবশ্যকীয়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— পর্দার বিধান। ইমাদ পর্দার বিধান পালনে অপার্থিব স্বাদ খুঁজে পায়। যা শুধু অনুভব করতে পারা যায়; প্রকাশ করা যায় না পৃথিবীর কোন ভাষায়ই। যে স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায় না বৃষ্টি ভেজা প্রভাত অথবা সোনালী বিকেলে প্রেমিকার হাত ধরে হাঁটার মধ্যে। বেগানা নারীর অবৈধ প্রেমে ডুবে দিবা-নিশি তার রূপে মুগ্ধতা খুঁজার মধ্যে।
ইমাদ পর্দার বিধান মানতে গিয়ে যেমন অপার্থিব স্বাদ অনুভব করে হর-রোজ, ঠিক তেমনই তাকে তার স্বজনদের থেকে শুনতে হয় সুচের মতো বুকে বিঁধে যাওয়া নানান শব্দ— অহংকারী, অসামাজিক, অমিশুক।
এ-সব শব্দ ইমাদকে খুব কষ্ট দেয়। তবুও সে তার মতোই চলে। রবের হুকুম মেনে আত্মতৃপ্তিতে হৃদয় টইটম্বুর করে।
এভাবেই গত হয় তার জীবনের কয়েকটি স্মরণ-যোগ্য বসন্ত।
কিন্তু ইমাদতো ছোট্র এক কিশোর। সে কতো সইবে তাকে দেওয়া সমাজের এ-সব ট্যাগ। সে আর তার মতো হয়ে থাকতে পারেনি। যথাযথভাবে মানতে পারেনি রবের দেওয়া পর্দার বিধান। এখন সে তার আত্মীয়ের ছোট-বড় সব মহিলাদের সাথে মিশে। প্রাথমিক অবস্থায় মিশতে গিয়ে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলেও, পরবর্তীতে তার জন্য সব নারীদের সাথেই কথা বলা সহজ এবং সুখকর হয়ে যায়। সে নারী হোক আত্মী কিংবা অনাত্মীয়। আপন কিংবা পর।
এমন সময়টাতে আস্তে-ধীরে হারিয়ে যায় ইমাদের সুন্দর দিনগুলো। এই একটি বিধানে অনড়-অটল থাকতে না পারায়, এখন তার প্রতিটা আমালেই যেনো খাদ থেকে যায়। আগের মতো সে আ‘মালিয়্যাতে স্বাদ খুঁজে পায় না। খুঁজে পায় না স্নিগ্ধ-পেলব প্রশান্তি। খুব করে চায় সে তখনকার সেই পাক-সাফ সুন্দর হৃদয়টি।
আহা সমাজ! আহা মানুষ! ইমাদের মতো কতো কিশোর-কিশোরীর সুন্দর জীবন কেড়ে নেওয়ার যুদ্ধে তো তোমাদের ঘৃণিত কাজগুলোই ক্যাপ্টেন হিসেবে কাজ করে। আচ্ছা, — এ-সব অর্থহীন কাজ কেনো করে বেড়িয়েছিলে — এর জবাব কী তোমাদেরকে একদিন দিতে হবে না?