আম্মা কেমন আছ?
হ বালা,
তুমি কবে আইবা?
বাজান রে আমি কি অহন আইতে পারুম। দেখি সামনের বচ্ছর আল্লাহ বাচাইলে ইদের সময়।
এত্ত দেরি
কী করুম রে। মালিক এত তাড়াতাড়ি ছুটি দিব।
আম্মা গো আমার তোমার লেইগা কান্দন আহে
কান্দিস না রে বাজান। ইশকুলে ঠিক মত যাবি।আর দাদা দাদি রে জ্বালাইস না রে বাজান। আমি যহন আমু তোর লেইগা অনেকগুলা খেলনা আনুম। তুই খালি মন দিয়া লেহা পড়া করবি। বুঝলি। ছুডু ডিরে দেইখ্যা রাহিস।
আম্মা অহন ত বহুত ঠান্ডা। জার লাগে। তুমি ট্য্যাহা পাডাইয় আমি এক খান জ্যাকেট কিনুম।
আইচ্ছা পাঠামু নে। অহন রাহি রে বাজান
ছল ছল চোখে ফোন কেটে দিল সালেহা।
অভাবের সংসার। জামাই তেমন রোজগার করতে পারেনা। ঢাকায় এসেছিল গার্মেন্টসে কাজ করতে। অনেক খাটুনি। সেই অনুপাতে বেতন। খুব ই কম। তার উপরে একদিন সেই গার্মেন্টসে লাগল আগুন। কোন মতে বেচেছে কিন্তু চোখের সামনে দেখেছে তার সাথের সহকর্মী জরিনা ফাতেমা লিজা মনিদের জীবন্ত ভস্ম হতে। একজন পুড়তে পুড়তে ই বলছিল তাকে বইন রে আমি শ্যাষ কিন্তু আমার পুলাডার কি হইব
ফায়ার সার্ভিস জীবন্ত যাদের উদ্ধার করতে পেরেছিল সালেহা সেই সৌভাগ্যবতী দের একজন। কিন্তু ধোয়ার কারনে তার ফুস্ফুসে ক্ষতি হয়ে যায়।তাদের কেউ কোন। ক্ষতি পুরন দেয়নি।সালেহা গ্রামে চলে এসেছিল। কিন্তু সেই স্মৃতি রয়ে যায় ভয়ংকর দুস্বপ্ন হয়ে।
আর গার্মেন্টসে না।
সেদিনের পর থেকে গার্মেন্টসের কাজের প্রতি একটা ভীতি চরম বিতৃষ্ণা জেগে উঠেছিল।এখন ঘরে বসেই বা কি করবে। সংসার যে চলে না। শ্বশুর শাসুড়ি স্বামি চার ছেলে মেয়ে
স্বামি অন্যের জমিতে কামলা খাটে। তার আয় অনিয়মিত।
এর মধ্যে একদিন বাড়িতে এল জমিরুদ্দিন। সে আবার তার স্বামীর চাচাত ভাই। কাজ করে ঢাকার মতিঝিলের এক অফিসে যারা বিদেশে লোক পাঠায়। সে ই সালেহাকে বুদ্ধি দিয়েছিল সউদি আরবে কাজ করতে যেতে। খরচ তেমন লাগবে না। আপাতত খরচ টা জমিরুদ্দিন ই দিবে।সে সেখানে গিয়ে আস্তে আস্তে কাজ করে বেতন পেয়ে পেয়ে টাকা শোধ করে দিবে।
তিন বছর হয়ে গেল সালেহা আজ সউদি আরব। রিয়াদ শহরে এক ধনি শাইখের বাড়ি তে কাজ করছে। প্রথম দিকে আরবি বুঝত না বলে অসুবিধা হত। মালিক রাগা রাগি করত। তার বউ তাকে মারত। এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। সে আরবি বুঝতে পারে। তারা যেভাবে ফরমাইশ দেয় সেভাবে কাজ টাজ করতে পারে। মালিকের ছোট ছোট বাচ্চাদের নিজের বাচ্চার মতই আদর করে।প্রথম বছরে তেমন কিছু। পাঠাতে পারেনি। জমিরুদ্দিনের দু লাখ টাকা শোধ করতেই চলে গেছে। এর পর থেকে যা পেত নিজের জন্যে কিছুই না রেখে সব পাঠাত দেশে। কারন এখানে ত আর তার থাকা খাওয়ার খরচ নেই। সালেহার কপাল ভাল ছিল যে মালিক বদ রাগি হলেও খাওয়ার কস্ট দেয়নি। আরেক টা দোষ যেটা অনেক সউদি মালিকদের মধ্যে দেখা যায় সেটা এনার মধ্যে ছিল না। সালেহা কে কখনোই সে বিছানায় ডাকেনি।
মাঝে মাঝে স্বামির সাথেও কথা হয়। তার পাঠানো টাকায় জমি রেখেছে এক খন্ড। ছনের কাচা ঘর আজ।পাকা করে টিন দিয়েছে। একটা অটো কিনেছে।নিজেই চালায়। তাতে রোজগার খারাপ হয়না
সালেহার মন টা ভরে ওঠে খুশীতে। তার শ্রম সার্থক। আল্লাহ এত দিনে মুখ তুলে চেয়েছেন। আগামির সুখের স্বপ্নে বিভোর থাকে। তার সাথে কাজ করে শ্রীলংকান এক গৃহকর্মি। তাকে বলেছে তিন বছর গেলেই সে দেশে ফিরে যাবে আর আসবে না
একটা ব্যাপারে সালেহার একটু অভিমান ও হয়। স্বামী কোন দিন বলেনি বউ রে তুই চইলা আয়। ভাল্লাগেনা।
একটু যেন চিন চিন ব্যাথা অনুভব করে
ফোন করেই খালি বলে ট্যাহা ফাডা।
ইদ চলে এলো প্রায়। সালেহা এখন ঢাকা এয়ারপোর্টে। বের হয়ে কাউকেই দেখতে পেলো না। কেউ আসেনি তাকে নিতে। সে তো। বলেছে তার আসার তারিখ। কেন আসল না স্বামী। এখন যাবে কিভাবে। হঠাত শুনতে পেল পেছন থেকে
আরে সালেহা না
গফুর চাচা! সালামালেকুম। কেমন আছেন
আছি বালাই তুই এহেনে ক্যা
চাচা জানতেন না আমি সউদি গেছিলাম কাম করতে। আইজ ই আইলাম। দেহেন। ত কেউ আইল না নিতে। বাইত যাই কেমনে
গফুর চাচা বললেন, আমরা আইছিলাম মানু রে তুইল্লা দিতে। হ্যায় আইজ দুবাই গেল গা
অহন তুই চাইলে আমগো লগে লইতে পারস। মাইক্র আছে লগে
সালেহা এলো গ্রামে। একে ত সামনে ইদ প্রচন্ড জ্যাম রাস্তায়। যখন বাড়িতে যেয়ে পউছাল তখন সন্ধ্যা হয় হয়। ছেলে মেয়েরা সব বেরিয়ে এল হই হই করে। বেরুল তার স্বামী। কিন্তু তার স্বামীর সাথে অইটা কে? জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে স্বামীর দিকে তাকাতেই দেতো হাসি দিয়ে বলল
কইরে জোহরা তুমার বড় বইন রে সালাম কর
মাত্র কয়দিন আগেই তারে ঘরে তুল্লাম। নানান ঝামেলায় তুমারে জানানো হয় নাই।
সালেহার স্তব্ধ নিশ্চুপ। বাক রুদ্ধ, তার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসছে…