বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক নারী পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। নারী ও শিশু পাচার একটি মারাত্মক অপরাধ। দেশে এ-সংক্রান্ত আইন থাকলেও এর প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। এদিকটিতে সরকারের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। এর সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা জরুরি। নারী পাচার রোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে কিছুটা প্রশংসা পেলেও পাচারের নতুন নতুন খবর আবার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। পাচারকারীরা ব্যবহার করছে অভিনব সব কৌশল। সেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে বিয়ে, মডেলিং এবং বিদেশে চাকুরির প্রলোভনসহ নানা ধরনের ফাঁদ।বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র বলছে, গত দশ বছরে, ভারতে অথবা ভারত হয়ে অন্য দেশে ৫০ হাজার বাংলাদেশি নারী পাচার হয়েছেন। তবে এখন আর পাচার শুধুমাত্র দালালদের মাধ্যমেই হচ্ছে তা নয়, পাচারের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ‘বিশ্বাসযোগ্য’ উপায় ব্যবহার করচেন পাচারকারীরা।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা পাচারকারী সিন্ডিকেট চাকুরিসহ নানা লোভ দেখিয়ে ২০-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে নারীদের বিক্রি করে দিচ্ছে ভারতীয় সিন্ডিকেটের কাছে। সেখানে আবার নানা হাত ঘুরে অনেকেরই ঠিকানা হচ্ছে যৌন পল্লী। তারা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের সারা দেশের মানব পাচার মামলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৪ সালের ১৫ জুন থেকে গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পাচারের শিকার হয়েছেন ১৩ হাজার ৪২৪ জন। উদ্ধার হয়েছেন ১০ হাজার ৫৭৯ জন। ২ হাজার ৮৪৫ জনের কোনো খোঁজ মেলেনি। আমাদের দেশে নারী পাচারের ঘটনার সামান্য একটি অংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আনা হয়। লোকলজ্জা এবং হয়রানির ভয়ে অনেকে স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে পুষে রাখেন কিন্তু এটি বাইরে প্রচার হোক তা চান না। পাচার হওয়া নারীর সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে পাচারের শিকার নারী ১০ হাজারের বেশি হবেন।
মানব পাচার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি একটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাচার হওয়া অন্তত ৬৪৩ জনকে তারা ভারত থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। দেশের প্রতিটি এলাকায় রয়েছে নারী পাচারকারীদের এজেন্ট। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে নারী পাচারকারী দলের এজেন্টরা বেশ সক্রিয়। তবে নারী পাচার বন্ধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারী পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করাও জরুরি। পাচারকারীরা নিরাপদে থাকা মানে আরও অনেক নারীর সর্বনাশ ডেকে আনা। এদের রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।