বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ-এ তিন মাসে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার। এ সময়ে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজারে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ। তাদের কাজে লাগানো সম্ভব হলে তা দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। তাদের কাজে লাগানো সম্ভব না হলে তারা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। বেকার তরুণদের কারও কারও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন দেশ জনমিতির সুবিধা কাজে লাগিয়ে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। আমাদেরও উচিত এ সুবিধা কাজে লাগানোর পদক্ষেপ নেওয়া। দেশে শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্ব পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, তা জানার জন্য গবেষণার প্রয়োজন নেই। সরকারি কর্ম কমিশনে কয়েক হাজার শূন্যপদের বিপরীতে লাখ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট দেশে শিক্ষিত বেকারদের কর্ম পরিস্থিতি কী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেকার থাকা সত্ত্বেও বহু প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন খাতে উচ্চ বেতনে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। নিয়োগদাতাদের যুক্তি, দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। এত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও কেন দেশে দক্ষ জনশক্তির সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব নতুন বিভাগ ও অনুষদ খোলা হচ্ছে, সেগুলো আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। দেশের প্রত্যেক শিক্ষিত তরুণ যাতে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হতে পারে, তেমন পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনের যে কোনো পর্যায় থেকে ঝরে পড়লেও কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়। অনেকদিন ধরেই দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাড়ছে না। ফলে কাক্সিক্ষত মাত্রায় কর্মসংস্থানও বাড়ছে না। এ অবস্থায় দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষি খাতের শ্রম মৌসুমভিত্তিক। নানা কারণে কৃষিতে শ্রমিকের চাহিদা কমে যেতে পারে। এ সমস্যার সমাধানে কৃষি খাতের শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে; এবং তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে এবং সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগের পদক্ষেপ নিতে হবে। রপ্তানি খাত শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিতে হবে এবং রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্যও নিতে হবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না- এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তারা যেন কাজ করতে পারে সেজন্য নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে।