হাওরবাসী মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে খবর থাকে। আগাম বন্যা হলে হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান হারিয়ে তাদের কষ্টের যেন কোনো সীমা থাকে না। আর সেই হাওরই হয়ে উঠেছে কিছু মানুষের কাছে ‘আখের গোছানোর’ বড় সুযোগ। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বা মেরামত নিয়ে কাহিনীর কোনো অন্ত নেই। এক কোদাল মাটি না কেটেও বাঁধের পুরো টাকা আত্মসাৎ করার মতো অভিযোগও আছে। হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষার নামেও প্রকল্প গ্রহণ এবং সেই টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরে বৃক্ষরোপণের একটি প্রকল্পের পুরো টাকাই আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা চলছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো অপেক্ষাকৃত বড় গাছ এক জায়গা থেকে তুলে নিয়ে আরেক জায়গায় লাগানো হচ্ছে। কিন্তু কয়েক দিন পরই মারা যাচ্ছে গাছগুলো। আবার যে বন থেকে তুলে আনা হচ্ছে সেই বনও ধ্বংস হচ্ছে। অথচ এসব দেখার যেন কেউ নেই। জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ফানারবাগে রয়েছে হিজল-কড়চের এক বিশাল প্রাকৃতিক বাগান। ২০১১-১২ সালে এখানে প্রথম বনায়নের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। অভিযোগ আছে, কোনো গাছ না লাগিয়েই পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল। সর্বশেষ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০২১-২২ অর্থবছরে। প্রকল্পের নাম ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগে পুনর্বনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প। এর অধীনে হিজল, কড়চ, বরুণ, আকাশমণি, অর্জুন, কদম, পিটালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোর জন্য প্রায় ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদক প্রকল্পের নির্ধারিত এলাকা ঘুরে নির্ধারিত সময়ে কোনো গাছ লাগানোর চিহ্ন দেখতে পাননি। অভিযোগ আছে, পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আবারও বরাদ্দ দেওয়া হয় হেক্টরপ্রতি আরো ১২ হাজার টাকা করে। এখন এই রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ দিয়ে বড় গাছ লাগিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এসব গাছ লাগানোর কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছে। ফানারবাগের প্রাকৃতিক বাগান থেকে এভাবে গাছ তুলে আনায় সেই বাগানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা মনে করি, উল্লিখিত প্রকল্পটিসহ হাওরাঞ্চলে গৃহীত এ ধরনের প্রতিটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সেখানকার প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনা জরুরি।