বছরের পর বছর পাকিস্তানে চলা আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশটির অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। বৈশি^ক জালানি সংকটের পাশাপাশি গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরো খারাপ করে দিয়েছে। আর পবিএ রমজান পালনের চলমান সময়ে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতির চাপে জনজীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। ভিড় বাড়ছে খাদ্য বিতরনকেন্দ্র গুলোতে,রোজার মাস শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত খাদ্যকেন্দ্র গুলোতে শুধু পৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছে ২০ জন। এ মধ্যে গত ৩১ মার্চ করাচীর সিন্ধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জাকাতের অর্থ বিতরণের সময় পদদলিত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন। আর্থিক সংকটে থাকা পাকিস্তানের গত মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাড়ায় ৩৫ দশমিক ৩৭ শতাংশের, যা গত পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাকিস্তান সরকার এ পরিস্থিতিতে আইএমএফের শর্ত পুরন করে ঋণ নিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত ০১ এপ্রিল প্রকাশ করা দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে মার্চে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। দেশটিতে গত বছরের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ২৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভ কমে গেছে এবং রুপির দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দরিদ্র মানুষের জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের বর্তমান জনসংখ্যা ২২ কোটি। চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় পাকিস্তান আইএমএফের সহায়তা চেয়েছে। আইএমএফ শর্ত দিচ্ছে, ভর্তুকি কমাবার। এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে আয়কর। ফলে শুধু দরিদ্র মানুষেরা নয়, শিক্ষিত চাকুরীজীবীরাও বিপদে পড়েছেন। তাই তাদের নিজেদের চাহিদা থেকে অনেক কিছুই বাদ দিতে হচ্ছে। পবিএ রমজানে চাহিদানুসারে নিত্য পণ্য যোগাড় করা এখন খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদরা দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মন্দা আজ মানুষের বাঁচা মরার কারণ হয়ে উঠেছে। অর্ধহার আর অনাহারে কষ্ট করতে হচ্ছে। এ মুহুর্তে পাকিস্তানের জন্য অর্থনৈতিক সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু সাহায্য দেওয়া সব দেশ ও সংস্থা নিজেরাই মূল্যস্ফীতির চাপে অস্থির। তারপরও আইএমএফ সংকট মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন দেশকে ঋণ দিয়ে সহায়তা করছে। তবে তাদের শর্ত পূরণের প্রতি জোর দিচ্ছে। এখন পাকিস্তানের অবস্থা এতটাই নাজুক যে কোনো শর্তে তাদের ঋণ চাই। কিন্তু সেই ঋণ শোধ করার রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের নাই। কবে অস্থিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তাও অজানা। সব কিছুর বিবেচনার পর মানুষের জীবন সবচেয়ে মূল্যবান। তা কি পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার কি বিবেচনা করবে ?