• আজ- বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ অপরাহ্ন

বুদ্ধিজীবী: জাতির উন্নয়নের চালিকাশক্তি

লেখক : / ১৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

add 1

একটি জাতির উন্নতির মূল চালিকাশক্তি তাহার বুদ্ধিজীবীরা। তাহারাই জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করিয়া অন্ধকার হইতে আলোকের পথে আনিতে সহায়তা করেন। বুদ্ধিজীবীরা জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রকৌশল, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী নিধনকার্য সম্পন্ন করিয়াছিল। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য ছিল সদ্য স্বাধীন জাতিকে নেতৃত্ব ও জ্ঞানবুদ্ধিতে অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখা।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র ছিল সুগভীর। তাহারা জানিত, একটি জাতির বুদ্ধিজীবীরাই তাহাদের উন্নতির মূল শক্তি। তাই, এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জাতির মেধার নিউক্লিয়াসকে ধ্বংস করিয়া জাতিকে বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতার মধ্যে ফেলিবার চেষ্টা চালাইয়াছিল। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরাইলেও আমরা এখনো সেই শূন্যতা পূরণ করিতে সক্ষম হই নাই।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। আজ তাহা বৃদ্ধি পাইয়া ১৮ কোটির অধিক হইয়াছে। কিন্তু এই বর্ধিত জনসংখ্যার সহিত তাল মিলাইয়া বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় নাই। চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রকৌশল, প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের অভাব আমাদের উন্নয়নযাত্রাকে মন্থর করিয়াছে। উন্নয়নের ট্রেন চলিবার জন্য সময়োপযোগী রেললাইন ও আধুনিক ইঞ্জিনের অভাব আমরা বারবার উপলব্ধি করিতেছি।

একটি জাতির বুদ্ধিজীবীরা তাহার মস্তিষ্ক। এই মস্তিষ্ক ব্যতীত কোনো জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছাইতে পারে না। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে বুদ্ধিজীবীদের অবদান অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশের উন্নতির মূলে তাহাদের জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ও গবেষণার বিপ্লব। দার্শনিক সক্রেটিস বলিয়াছিলেন, “একটি জ্ঞাননির্ভর সমাজই উন্নত সমাজ।” অথচ, বাংলাদেশে আমরা এখনো বুদ্ধিজীবী তৈরির ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করিতে পারি নাই।

বুদ্ধিজীবী নিধনের কারণে আমাদের যে ক্ষতি হইয়াছে, তাহা কেবল অতীতের শূন্যতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। এই অভাব আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করিতেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে মানহীন শিক্ষা ও গবেষণার অভাব, স্বাস্থ্যসেবায় সংকট, এবং শিল্প-বাণিজ্যে উদ্ভাবনের অভাব আমাদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করিতেছে।

এই ঘাটতি পূরণের জন্য এখনি একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে হইবে। শিক্ষা ও গবেষণার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করিয়া নতুন প্রজন্মকে জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে উৎসাহিত করিতে হইবে। শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল সংস্কার আনিয়া মানোন্নয়ন নিশ্চিত করিতে হইবে। তাহার পাশাপাশি, জাতির সকল স্তরে জ্ঞানের চর্চা এবং গবেষণার প্রসার ঘটানো আবশ্যক।

১৯৭১ সালের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাইতে আমাদের এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করিতে হইবে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার বিস্তার ঘটাইয়া জাতিকে আলোর পথে নিয়া যাওয়া এখন সময়ের দাবি। তাহার মাধ্যমেই আমরা স্বাধীনতা এবং বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের প্রকৃত মূল্যায়ন করিতে পারিব।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (দুপুর ২:৩৮)
  • ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৬ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ৪ পৌষ, ১৪৩১ (শীতকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT