ধর্মপাতা: সপ্তাহ পার হলেই শুরু হবে বরকতময় মাস রমজান। মহিমান্বিত রমজান মুসলিম উম্মাহর জন্য বরকত নিয়ে হাজির হবে। রমজানের প্রাপ্তি সম্পর্কে অনেক সুসংবাদ দিয়েছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রমজানের এ সুসংবাদগুলো কী?
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবিদের সুসংবাদ দিয়ে বলেন-
قَدْ جَاءَكُمْ شَهر رَمَضَانُ، شَهْرٌ مُبَارَكٌ، كَتَب اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، فِيهِ تُفْتَحُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ، وَتُغَلُّ فِيهِ الشَّيَاطِينُ، فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ
‘তোমাদের কাছে রমজান মাস উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপর আল্লাহ তাআলা এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাস আগমনের কারণে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ি পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল।’ (নাসাঈ ২১০৬, মুসনাদে আহমদ ৭১৪৮)
তাইতো কোনো এক কবি বলছেন-
‘রোজার মাস বরকত নিয়ে এসেছে দুয়ারে। অতএব, তোমরা অতিথিকে সম্মান করো, সে আসছে।’
২. হজরত উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন-
أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرُ بَرَكَةٍ، فِيهِ خَيْرٌ يُغَشِّيكُمُ اللَّهُ فِيهِ، فَتَنْزِلُ الرَّحْمَةَ، وَتُحَطُّ الْخَطَايَا، وَيُسْتَجَابُ فِيهِ الدُّعَاءُ، فَيَنْظُرُ اللَّهُ إِلَى تَنَافُسِكُمْ، وَيُبَاهِي بِكُمْ مَلَائِكَتَهُ، فَأَرُوا اللَّهَ مِنْ أَنْفُسِكُمْ خَيْرًا، فَإِنَّ الشَّقِيَّ منْ حُرِمَ فِيهِ رَحْمَةَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
‘তোমাদের কাছে রমজান মাস এসেছে, বরকতের মাস। এ মাসে রয়েছে কল্যাণ, আল্লাহ তোমাদের সে কল্যাণে আবৃত করে দেন। ফলে তিনি রহমত নাজিল করেন, গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে দোয়া কবুল করা হয়। আল্লাহ তোমাদের (সৎ কাজের) প্রতিযোগিতার দিকে তাকান এবং তিনি তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। সুতরাং তোমরা তোমাদের নিজেদের কল্যাণ আল্লাহকে দেখাও। কেননা হতভাগা তো সে ব্যক্তি যে এ মাসে মহান আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।’ (মুসনাদুশ শামিয়্যীন, তাবরানী, ৩/২৭১, ২২৩৮)
৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ
‘রমজান মাস এলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ১৮৯৯)
৪. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِذَا كَانَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ
‘রমজান মাস উপস্থিত হলে রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম ১০৭৯)
৫. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু মারফু সূত্রে আরও বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ
‘যখন রমজান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম ১০৭৯)
৬. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الجَنَّةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَيُنَادِي مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلكَ كُلُّ لَيْلَةٍ
‘শয়তান ও দুষ্ট জিনদের রমজান মাসের প্রথম রাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এর একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং এর একটি দরজাও তখন আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত! বিরত হও। আর বহু লোককে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এ মাসে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ থেকে থাকে।’ (তিরমিজি ৬৮২, ইবনে মাজাহ ১৬৪২, নাসাঈ ২১০৭, মুসতাদরাক হাকেম ১৫৩২)
৭. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছার দোয়া করতেন। তিনি রজব মাস এলে বলতেন-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
‘হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের পৌঁছান (হায়াত দান করুন)।’ (তাবরানি ৪/১৮৯, ৩৯৩৯; বায়হাকি ৫/৩৪৮, ৩৫৩৪)
রমজান মাস পাওয়া ও এতে রোজা পালন করা অনেক বড় নেয়ামত। এ কথার দলিল হলো তিন ব্যক্তির হাদিস, যারা জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের দু’জন শহিদ হন এবং আরেকজন তাদের পরে বিছানায় স্বাভাবিকভাবে মারা যান। আগে মারা যাওয়া দিই জনকে স্বপ্নে দেখানো হলো। তাদের ব্যাপারে শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
أَلَيْسَ قَدْ مَكَثَ هَذَا بَعْدَهُ سَنَةً؟ ” قَالُوا: بَلَى. قال: ” وَأَدْرَكَ رَمَضَانَ فَصَامَهُ؟ ” قَالُوا: بَلَى قال: ” وَصَلَّى كَذَا وَكَذَا سَجْدَةً فِي السَّنَةِ؟ ” قَالُوا: بَلَى، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” فَلَمَا بَيْنَهُمَا أَبْعَدُ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ
‘সে কি তার পরে একবছর বেঁচে ছিল না? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, সে কি রমজান পায়নি এবং এর রোজা পালন করেনি? তারা বললেন, জি হ্যাঁ। তিনি বললেন, সে কি বিগত একবছর এত এত রাকাত নামাজ আদায় করেনি ও সেজদা করেনি? তারা বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে তাদের মধ্যে আসমান ও জমিন সম পার্থক্য হবে ‘ (মুসনাদে আহমাদ ১৪০৩, ইবনে হিব্বান ২৯৮২)
৮. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! রমজান মাস এসেছে, তবে কী দোয়া পড়বো? তিনি বলেন, তুমি বলবে-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (তিরমিজি৩৫৩১, ইবনে মাজাহ ৩৮৫০)
রমজান এসেছে। এতে রয়েছে নিরাপত্তা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে ঘর পাওয়ার মহাসফলতা। যে ব্যক্তি এ মাসে লাভবান হতে পারবে না তাহলে সে আর কখন লাভবান হবে? যে ব্যক্তি এ মাসে তার মাওলার (আল্লাহর) নৈকট্য পাবে না সে এরপরে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারবে না। যে ব্যক্তির ওপর আল্লাহ এ মাসে রহম করবেন সে তাঁর রহমতপ্রাপ্ত হবে আর যে ব্যক্তি তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে সে প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত।