দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি জেলা—খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা—জলাবদ্ধতা সমস্যায় জর্জরিত। কৃষকের আবাদযোগ্য জমি, জনজীবন এবং অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। যদিও এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি ছিল টিআরএম (জোয়ার-আঁধার), তবুও ’৬০-এর দশকে পোল্ডার প্রকল্প চালু করার পর থেকে সমস্যা গুরুতর রূপ নিতে থাকে। নদীতে পলি জমে এবং প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
এই সমস্যা সমাধানে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে, উল্লেখযোগ্য ছিল বিল ডাকাতিয়ার কেজিডিআরপি প্রকল্প। কিন্তু তা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি। প্রকৃতির নিয়ম উপেক্ষা করে খনন এবং বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে তা লুটপাটের প্রতিফলন হিসেবেই ধরা দিয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ, এসব প্রকল্পে দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা বিদ্যমান। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কর্তৃত্বে এবং তদারকির অভাবে খননকাজের নামে প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসই সমাধানের জন্য প্রয়োজন প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া প্রকল্প। টিআরএম পদ্ধতি এক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে, কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে পলি অপসারণের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। কিন্তু সরকার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকৃতির নিয়মকে উপেক্ষা করে, ব্যয়বহুল কিন্তু অকার্যকর প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, স্বচ্ছ তদারকি এবং সমন্বিত পদক্ষেপ। প্রকৃতি-সঙ্গত, আধুনিক প্রযুক্তি ও স্থানীয় জ্ঞানের সমন্বয়ে টেকসই সমাধান গ্রহণ করলে খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরার জনগণ এই দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে পারে। এখন সময় এসেছে সমস্যার গভীরে গিয়ে কার্যকর সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার।