সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম কিছুতেই যেন টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই দেশব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত রোববার মাদারীপুরের শিবপুর উপজেলায় ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ১৯ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। একই দিনে দেশের অন্যান্য স্থানে দুর্ঘটনায় আরও অনেকে মারা গেছেন। সব মিলিয়ে একদিনে নিহতের সংখ্যাটি ৩০ এর বেশি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তৈরি একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৪৮৭ জন ও আহত হয়েছেন ৭১২ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৫৪ ও শিশু ৬৮ জন। আর ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে ফেব্রুয়ারি মাসে ১১৩টি দুর্ঘটনায় ১২১ জন নিহত হন। সবচেয়ে কম ২২টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। একক জেলা হিসাবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ৩৩টি দুর্ঘটনায় ৩৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। রাজধানী ঢাকায় ২৩টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন। প্রশ্ন হলো-প্রতিদিন যদি আমাদের এমন দুঃসংবাদের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে এত আন্দোলন, এত সুপারিশ-পরামর্শ ও নতুন প্রবর্তিত আইন কী কাজে লাগছে? বস্তুত জনবহুল এই দেশে যান চলাচলে শৃঙ্খলার অভাব এবং সড়ক ও পরিবহণব্যবস্থা যথেষ্ট উপযুক্ত না হওয়ার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। মূলত অশিক্ষিত চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশে ৮৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালক কর্তৃক বেপরোয়া গতিতে যান চালানো। সড়কে দুর্ঘটনা হ্রাসে ইতঃপূর্বে পেশাদার চালকদের লাইসেন্স পেতে ও নবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা ছাড়াও তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১১১টি সুপারিশ করা হলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। সর্বশেষ মাদারীপুরে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, জানা গেছে, সেই বাসের চালক ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ৩০ ঘন্টা ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ক্লান্তিজনিত কারণে ঘুমচোখে গাড়ি চালানোয় এতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণহানির দায় কার? বাসমালিক বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি কেন? এগুলো মনিটরিংয়ের দায়িত্ব যাদের তারা কি আদৌ এসবের খোঁজ রাখেন? আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে দেখবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যেভাবেই হোক, সড়ক-মহসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সচেতন হতে হবে পথচারীদেরও। একই সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং সড়কে চলাচল উপযোগী ভালো মানের যানবাহন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।