বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এখন দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। জনবহুল এই শহরের বাতাস বর্তমানে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার স্কোর ছিল ১৫৪, যা স্পষ্টভাবে দূষণের মাত্রা বাড়ার ইঙ্গিত দেয়।
একের পর এক শহরের মধ্যে, ভিয়েতনামের হ্যানয় ১৬১ একিউআই স্কোর নিয়ে প্রথম এবং মিশরের কায়রো ১৪৯ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সাধারণত, একিউআই স্কোর ১০০-এর নিচে থাকলে তাকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হিসেবে ধরা হয়। তবে ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে স্কোর থাকলে তা ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ স্কোর হলে একে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরের বাতাসকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০০-এর উপরের স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় পাঁচটি প্রধান দূষক উপাদানের ওপর ভিত্তি করে। এগুলো হলো, বস্তুকণা (PM10 ও PM2.5), নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2), কার্বন মনোক্সাইড (CO), সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) এবং ওজোন (O3)। বিশেষ করে, শীতকালে ঢাকার বায়ুর গুণমান সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়ে যায়, যখন বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে চলে আসে। বর্ষাকালে বায়ুর মান কিছুটা উন্নত হলেও সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি এখনও আশঙ্কাজনক।
২০১৯ সালে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উৎস উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো ইটভাটার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া এবং নির্মাণ সাইট থেকে উৎপন্ন ধুলা। এই তিনটি উৎসই ঢাকার বায়ু দূষণকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, তবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া এ অবস্থা পরিবর্তন করা কঠিন। যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে ইটভাটার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের ধোঁয়া কমানো এবং নির্মাণ সাইটে ধুলা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঢাকার বায়ুর মান উন্নত করা সম্ভব। তা না হলে, রাজধানী ঢাকার অধিবাসীরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে জীবন কাটাতে বাধ্য হবে।