প্রতিবছর বর্ষাকালে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশকে ছোট-বড় বন্যার মুখোমুখি হতে হয়। সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের ১২টি জেলায় ফসল, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। হাসপাতালগুলো ধারণক্ষমতার চেয়ে বহু গুণ বেশি রোগী নিয়ে সংকটে আছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে দূষিত পানি, ভাঙা স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং মশাবাহিত রোগের প্রকোপ মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে। এ অবস্থায় সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
প্রথমত, বন্যা-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ সতর্কতা নেওয়া দরকার। প্রতিটি বাড়ির টিউবওয়েল, টয়লেট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কার করতে হবে এবং জনসাধারণকে স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা পৌঁছানোর জন্য টেলিভিশন, রেডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা বাড়াতে হবে। এছাড়া, বেসরকারি উদ্যোগে বন্যা-পরবর্তী সতর্কতামূলক পদক্ষেপের ব্যাপক প্রচারণা সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হবে।
দ্বিতীয়ত, কৃষি পুনর্বাসনেও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। কৃষকদের কৃষি প্রণোদনা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। উপযুক্ত জাতের ধান ও সবজির বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে দ্রুত উৎপাদনশীল জাত রোপণ করা এবং আপৎকালীন বীজতলা তৈরির ব্যবস্থা করা জরুরি।
তৃতীয়ত, বন্যার পর বাঁধ নির্মাণ, রাস্তা পুনর্নির্মাণ, এবং পুকুর-জলাশয়ে মাছচাষের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর গৃহ পুনর্নির্মাণে সহায়তা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্যার পরবর্তী সময়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনের প্রক্রিয়াটি আরও কার্যকর করতে হলে সুদূরপ্রসারী ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা অপরিহার্য। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সচেতনতা এবং আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল আমরা এই সংকট মোকাবেলায় সফল হতে পারব।