বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধ ও ক্ষমতার পালাবদলের সাথে ব্যাপক মামলা দায়েরের প্রবণতা শুরু হয়েছে, যা বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা সংকটে ফেলছে। এক সময় যে অন্যায় ও হয়রানির বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার হয়েছিল, নতুন সরকার আসার পর একই কাজ আবার ঘটছে। প্রতিহিংসার নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের আইনের সুশাসনের জন্য বড় অন্তরায়। সাম্প্রতিক সময়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের নামে মামলা হচ্ছে, যা বিচারহীনতার সংস্কৃতির উপস্থিতি প্রমাণ করে। ক্ষমতায় আসার পর বিরোধীদের নামে মামলা করা হচ্ছে, যা প্রতিহিংসা বাড়িয়ে তুলছে এবং অপরাধীদের আড়াল করছে। উদাহরণস্বরূপ, মেহেরপুরে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রীসহ ১৬৮ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিয়েছেন বাদি। কারণ বাদি যাদের নামে মামলা করেছিলেন তার বাইরেও কিছু নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশের যেসব জায়গায় এরকম ঘটনা ঘটেছে প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। মেহেরপুরে একটি মামলায় বাদীর অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে নিরপরাধদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা নির্দেশ করে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুন্ন হবে। সরকারকে বুঝতে হবে, ক্ষমতার অপব্যবহার করলে ফল ভালো হয় না। যারা অপরাধ করেছেন, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; তবে এটি যথাযথ তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে। ভিত্তিহীন মামলা বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করে। রাজনৈতিক বোদ্ধা ও সুশীল সমাজ বারবার বলছেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি মামলা দায়েরের আগে যাচাই-বাছাই প্রয়োজন, যেন নিরপরাধরা হয়রানির শিকার না হন। অপরাধ কখনো তামাদি হয় না; তবে বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া জরুরি।
আমাদের উচিত প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানো। আইন তার গতিতে চলবে, অপরাধী শাস্তি পাবে এবং নিরপরাধরা রক্ষা পাবে—এটাই কাম্য। সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, যেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরে আসে।
সুত্র: দৈনিক সংগ্রাম