বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পথশিশুদের জরিপ ২০২২ প্রতিবেদন বলেছে, দেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ পথশিশু তাদের কর্মক্ষেত্রে কোনো না কোনো ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের মধ্যে প্রায় ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ পথ শিশু সরাসরি নির্যাতনের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় বা মার খায়। প্রায় ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ মৌখিক হুমকি পায়। এ ছাড়া কাজ থেকে ছাটাই, মজুরি কমিয়ে দেওয়ার ঘটনাও অহরহ। গত ১০ এপ্রিল প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশির ভাগ পথ শিশু ১ হাজার টাকা বা ১০ ডলারের কম অর্থের জন্য সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছে। ঢাকা দু’ সিটি করপোরেশন ও দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ পথ শিশুর ওপর এ জরিপ চালানো হয়। গত বছরের এপ্রিলে মূল জরিপ চালানো হলেও সারা দেশে কতজন পথশিশু আছে, তা জরিপে উঠে আসে নি। তবে পথ শিশুদের কাজের ক্ষেত্র, বাড়ি ছেড়ে আসার কারণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কোন এলাকা থেকে বেশি পথ শিশু আসে, এসব চিত্র জরিপে উঠে এসেছে। ইউনিসেফের সহায়তার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ( বিবিএস) প্রতিবেদন বলেছে, দেশের পথ শিশুদের গড় বয়স ১২ দশমিক ৩ বছর। একটি মেয়ে পথশিশুর বিপরীতে চারটি ছেলে পথশিশু আছে। পথ শিশুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ এসেছে ময়মনসিংহ জেলা থেকে। আর দেশের মোট পথশিশুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ৪৮ শতাংশের অবস্থান ঢাকা বিভাগে। বাড়ি ছাড়ার কারণ হিসাবে ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু বলেছে, দারিদ্র ও ক্ষুধার কারণে তারা বাড়ি ছেড়েছে। ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু জানিয়েছে, মা বাবা শহরে এসেছে তাই তাদের সাথে তারাও এসেছে। ১২ দশমিক ১ শতাংশ কাজের সন্ধানে এসেছে। অন্যদিকে বাড়ি থেকে পালিয়ে অনেকে এসেছে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ২০ দশমিক ৯ শতাংশ পথ শিশু বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে। ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু ভিক্ষা বৃত্তি ও ভিক্ষার সহায়তাকারী হিসেবে যুক্ত। পরিবহন খাতে রয়েছে ১৬ শতাংশ পথশিশু। এ ছাড়া হোটেল, রেস্তেরা, চায়ের দোকান, হকার, ধোয়া মোছার কাজও করে অনেক পথশিশু। কেউ কেউ ছোটখাটো অপরাধ ও যৌনকর্মের মতো কাজও করে থাকে। জীবনে কঠিন পরিশ্রম করে বাঁচতে হলেও এসব পথ শিশুদের ৬৪ শতাংশ পরিবারে ফিরে যেতে চায় না। প্রতিবেদনের তথ্যগুলো নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক। আরো বেদনাদায়ক হচ্ছে প্রতি ১০ জনের ৮ জনই পথশিশুই পথচারীদের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার। রাস্তায় বসবাসকারী এসব শিশুদের জন্য সহায়তা প্রয়োজন হলেও কেউ একটু সহানুভূতি দেখায় না। অথচ তাদেরও রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার। তাদেরও সুস্থ দেহে, প্রকৃত শিক্ষা লাভ ও আবাসনের ব্যবস্থা করা আমাদের সবার কর্তব্য। সরকারি কিছু উদ্যোগ থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের ভূমিহীন মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করছেন। এখন নগরীর ভাসমান মানুষের ঠিকানা দেয়া সময়ের দাবি। সেই সাথে পথ শিশুদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে এনে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। কোনো শিশু যেন সমাজের দায় না হয়, আগামী দিনের সম্পদে পরিণত হোক তারা এ আমাদের প্রত্যাশা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com