রোগীদের দিন দিন বিদেশ নির্ভরতা বাড়ছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে অন্তত ৮ লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করছেন। সরকার ও রাষ্ট্রের 'গুরুত্বপূর্ণ' ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই নিয়মিত চিকিৎসা নিতে বা শারীরিক পরীক্ষার জন্য বিদেশ যান। চিকিৎসার জন্য তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের মতো দেশ। জানা যায়, এক দশক আগেও কেবল সমাজের বিত্তশালীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতেন। তবে এখন মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তদের অনেকেই একই পথের যাত্রী হয়েছেন। মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দেওয়া রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্ব। মূল চিকিৎসা ব্যবস্থা হলো সরকারি, প্রাইভেট চিকিৎসা নয়। সরকার এখন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সিএমএইচে নিচ্ছেন। খুব অল্প মানুষ সেখানে চিকিৎসার সুযোগ পান।' বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশিরা ২০১৯ অর্থবছরে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন, ২০২০ অর্থবছরে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন, ২০২১ অর্থবছরে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন এবং ২০২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে বিদেশে চিকিৎসার জন্য শূন্য দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। দেখা যায়, এ ক্ষেত্রে রোগীরা ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যাচ্ছেন। তবে রোগীদের সিংহভাগের গন্তব্যই হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। ব্যাপক হারে রোগীদের বিদেশমুখী হওয়ার অন্যতম কারণ দেশীয় স্বাস্থ্যসেবার প্রতি অনাস্থা। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য মোট যে ব্যয় হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশই আসে নাগরিকদের নিজের পকেট থেকে। এটা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক দশকের ব্যবধানে স্বাস্থ্য ব্যয়ে ব্যক্তি খরচ দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে অনেকে বিদেশে গিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিচ্ছে। দেশের চিকিৎসকদের বেশিরভাগই ওষুধ কোম্পানির হুকুম তালিমের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। ফলে অনেকেই দেশের চিকিৎসার উপর আস্থা হারাচ্ছে। আমাদের দেশের রোগীদের বিদেশ নির্ভরতা কমাতে সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। রোগীদের বিদেশ যাওয়া রোধ করতে হলে সর্বাগ্রে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এ ছাড়া চিকিৎসকদের আচরণেও পরিবর্তন আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, তেমনই নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com