লোনা খাঁচা বন্দী পাখি নিয়ে আসল ফাতিমার কাছে। ফাতিমা সম্পর্কে তার বড় বোন। বড় আপুকে ভীষণ পছন্দ লোনার। বড় আপু নতুন নতুন গল্প শোনান। আদর-স্নেহে আগলে রাখেন। লোনার আগমন উদ্দেশ্য নতুন গল্প শুনবে। ফাতিমা ইচ্ছেকৃতভাবে এবার শোনায় একটু ব্যতিক্রমধর্মী গল্প। গল্প নয়, ইতিহাস বলা যেতে পারে। সাধারণ কোন বিষয়ে নয়। স্বাধীনতা বিষয়ক গল্প।
ফাতিমা: আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে কবে জানিস?
লোনা: জানি তো আপু, ডিসেম্বর মাসের ষোলো তারিখে। এজন্যই তো এইদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকে। আয়োজন করা হয় হরেক রকম অনুষ্ঠানের। পুরো দেশের আকাশে উড়ে লাল-সবুজের পতাকা।
ফাতিমা: স্বাধীনতা অনেক মূল্যবান জিনিস। স্বাধীনতা এমনিতেই অর্জন করা যায় না। বহু ত্যাগ, তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জন করতে হয়। আমরা স্বাধীন হয়েছি এক সাগর রক্ত বিসর্জন দিয়ে।
লোনা: যুদ্ধের সময় পরিস্থিতি কেমন ছিলো আপু?
ফাতিমা: যুদ্ধ চলাকালীন দেশের অবস্হা ছিলো ভয়াবহ। শহীদদের লাল রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো দেশের মাটি। না খেতে পেয়ে মারা যায় অনেক মানুষ। দেশজুড়ে ছিলো অভাব-অনটন। চারিদিকে সন্তানহারা মা-বাবার আর্তনাদ। ইয়াতীম হওয়া ছেলেমেয়েদের আর্তচিৎকার। লাশের স্তুপ চারপাশে। স্বদেশপ্রেমী বাঙালিদের ছিলো দেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে অদম্য ইচ্ছা। ছিলো সুদৃঢ় মনোবল। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীন হয়েছি। পেয়েছি স্বাধীন দেশ, লাল-সবুজের স্বাধীন পতাকা।
লোনা: আমরাও তাহলে একসময় পরাধীন ছিলাম, তাইনা আপু?
ফাতিমা: হুম। ঠিক তোর খাঁচা বন্দী পাখির মতো পরাধীন। স্বাধীনতা সবারই প্রিয়। খাঁচা বন্দী পাখিও চায় স্বাধীনভাবে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াতে।
পাখিটিকে মুক্ত করে দিতেই কিচিরমিচির আওয়াজে উড়াল দিলো আকাশের পথে। উড়ে যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফাতিমা। স্মৃতিচারণ করছে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস