আমাদের দেশে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে-চিকিৎসক এলে ওষুধ ছাড়াই রোগীর অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যায়। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক সত্য রয়েছে। কারণ, রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় শরীর ও মনের যোগসূত্র অভিন্ন। উন্নত বিশ্বে প্রকৃত চিকিৎসা শুরুর আগেই চিকিৎসকরা প্রায়ই রোগীকে মনস্তাত্ত্বিক-ভাবে চাঙা করার উদ্যোগ নেন। রোগীকে তার রোগ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য প্রদান এবং চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত করতে চিকিৎসকরা সদা সচেষ্ট থাকেন। এতে রোগীর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসক ঠিকমতো রোগ নির্ণয় করে যুক্তিসংগত-ভাবে ওষুধ প্রদান না করলে রোগী ওষুধের অপব্যবহারজনিত সমস্যার শিকার হবে। চিকিৎসক তার দায়িত্ব সঠিক ও নির্ভুলভাবে পালন করলেও ওষুধের ডিসপেন্সিং যুক্তিসংগত বা সঠিক না হলে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে প্রেসক্রিপশনে প্রদত্ত ওষুধ সম্পর্কে রোগীকে পর্যাপ্ত ও প্রকৃত তথ্য, পরামর্শ বা উপদেশ প্রদান করা না হলে, যুক্তিহীন ব্যবহারের কারণে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রোগীর জন্য প্রেসক্রিপশনে ওষুধ প্রদানে চিকিৎসক যত সতর্কতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করবেন, রোগী তত বেশি উপকৃত হবে। রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধে চিকিৎসকদের ভূমিকাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। প্রেসক্রিপশনে দুর্বোধ্য লেখার কারণে অনেকে ভুল ওষুধ সেবন করছেন। অনেককেই খুঁজে পাওয়া গেছে যারা চিকিৎসকের হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ কিনতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। অথচ উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে- প্রেসক্রিপশন হাতে লেখা হলেও তা পড়ার উপযোগী করে স্পষ্ট অক্ষরে এবং বড় বা ছাপার হরফে লিখতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশনার প্রতিপালন হচ্ছে কতটুকু-তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগীরা। প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে অভিযোগ জমা পড়েছে ১ হাজার ১০২টি। আবার ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের (আইওএম) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন চিকিৎসকদের লেখা প্রেসক্রিপশনে থাকা ওষুধের নাম বুঝতে না পেরে। রোগী সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ন্যায়সংগত তথ্য জানার জন্য চিকিৎসককে প্রশ্ন করার অধিকার রাখেন। ফলশ্রুতিতে রোগ নির্ণয় ও ওষুধ প্রয়োগে ভুল কম হয় বলে ওষুধের অপব্যবহারও কমে আসে। কিন্তু আমাদের দেশে চিকিৎসককে একটির বেশি দুটি প্রশ্ন করলেই চিকিৎসক বিরক্ত হন ও খেপে যান। কারণ, বেশি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তাদের নেই। এ আচরণ প্রশংসনীয় নয়। রোগীর প্রতি একটু সদয় ও সহানুভূতিশীল হলে রোগীর আস্থা অনেক বেড়ে যায়, রোগী খুশিও হয়। তাই আমাদের চিকিৎসকদের উচিত রোগীকে প্রয়োজনীয় সময় দেয়া। ভালো করে তার কথা শোনা এবং চিকিৎসা প্রদান করা। এবং সুস্পষ্টভাবে প্রেসক্রিপশন লেখা। রোগীদের প্রেসক্রিপশন চিকিৎসকের কাছ থেকে ভালো করে বুঝে নেওয়ার বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com