• আজ- শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩০ পূর্বাহ্ন

সুন্দরবন ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় শীতকাল

লেখক : / ৩৭৮ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০২৩
সুন্দরবন
সুন্দরবন

add 1

সুন্দরবন একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়ের নাম। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যা যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতে মধ্যে রয়েছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াাখালি ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবনকে জীব ও উদ্ভিদ জাদুঘর বললেও কম বলা হবে। সুন্দরবনের ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিচিত্র নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন পরিচিত। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণী। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়। সুন্দরবন বেড়ানোর উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রয়ারী মাস সুন্দরবন ঘুরে দেখার জন্যে উপযুক্ত সময়। এই সময় নদী ও সমুদ্র শান্ত থাকে, তাই সুন্দরবনের সকল দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়। শ্যামনগর থেকে অতি নিকটে রয়েছে কলাগাছিয়া, দোবেকী ইকোট্যুরিজম সেখানে ঘুরে দেখার জন্য সুন্দরবনের অনেক কিছু রয়েছে।

সেখান থেকে হাড়বাড়িয়া, করমজল, মান্দার বাড়িয়ার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবে মূল সুন্দরবনের স্বাদ পেতে হলে গহীনের স্থান গুলোতেই যেতে হবে। সুন্দরবন বিশাল একটি অঞ্চল। বন বিভাগ থেকে সুন্দরবনের নির্দিষ্ট কয়টি জায়গা ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়। সুন্দরবন ঘুরে দেখা যায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনা দিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভ্রমণ করে থাকে শ্যামনগর দিয়ে। খুলনা ও মোংলা থেকে ভ্রমণের জন্যে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে করমজল, হারবাড়িয়া মান্দারবাড়িয়া বঙ্গবন্ধুর চর,কছিখালি, কটকা, জামতলা, হিরন পয়েন্ট ও দুবলার চর। শ্যামনগর থেকে সবচেয়ে কাছে করমজল। এটি মুলত বন বিভাগের হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এখানে আছে বনের ভিতর দিয়ে যাওয়া কাঠের পুলের ট্রেইল, হরিণ, কুমির, বানরসহ নানা প্রজাতির গাছ গাছালি। সুন্দরবনের গহীনে যদি পশু–পাখি দেখার সুযোগ না হয়ে থাকে, তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটবে করমজলে। হারবাড়িয়া সুন্দরবনের অন্যতম একটি পর্যটন স্থান। শ্যামনগর থেকে দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এখানের মূল আকর্ষণ বনের ভিতর দিয়ে যাওয়ার কাঠের ট্রেইলার। পুরো ট্রেইলটা ঘুরে আসতে ৩০ মিনিটের মত সময় লাগে। এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো হাড়বাড়িয়া দেখা যায়। বনের ভিতরের কাঠেরপুল দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যে কারোরই অ্যাডভেঞ্চার ও শিহরণ জেগে উঠবে।

কটকা ফরেষ্ট ষ্টেশনের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। আর সাগর কোল ঘেষেই কটকা অভয়ারন্যটি। কটকায় সবচেয়ে চমৎকার যে বিষয়টি তা হলো এখানে দেখা মিলবে বন্য হরিণ দলের সাথে। এখানেও আছে বনের ভিতর একটি কাঠের ট্রেইল। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে ট্রেইল ধরে মিনিট ১৫ হাটলেই দেখা যাবে হরিণের দল। কটকা পয়েন্ট এর টেইল ধরে আরও কিছুদূর হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে কটকা সমুদ সৈকতে। বঙ্গোপসাগরের দেখা মিলবে এইখানে। কটকা সীবিচ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। এখানে বেলাভূমি জুড়ে আঁকা থাকে লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম। কটকার কাছেই জামতলা। এখানে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে, এই টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য্যের কিছুটা অংশে একসাথে চোখ বুলানো যায়। আর ভাগ্য ভাল থাকলে এখান থেকে হরিণ কিংবা বাঘের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। জামতলা ঘাট থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পায়ে হাঁটা পথে গেলে দেখা যাবে জামতলা সী বীচের। মান্দার বাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের কিছুটা অংশ এখনো অনাবিষ্কৃত বলে মনে করা হয়।

এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। মান্দারবাড়ি যেতে হলে সাতক্ষীরা দিয়ে সুন্দরবন যেতে হবে। হীরন পয়েন্টের কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হরিণ, বানর, গুইসাপ ও কুমির দেখা পাওয়া যায়। এখানেও মাঝে মাঝে বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলে। সুন্দরবন এলাকার মধ্যে বড় একটি চর হচ্ছে দুবলার চর। দুবলার চরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। হিন্দুধর্মের পূণ্যস্নান, রাসমেলা এবং শুটকির জন্য বিখ্যাত এইচর। অক্টোবর থেকে ফেব্রয়ারি এই পাঁচ মাস প্রায় ১০ হাজারের মত জেলে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। এসব দর্শনীয় স্থান যাওয়ার সময় ইঞ্জিন চালিত নৌকা, লঞ্চ একমাত্র বাহন। যা চলার পথে দেখা মিলতে পারে নদীর চরে দাড়ানো রয়েল বেঙ্গল টাইগারও মায়াবী হরিণ। যা দেখে শিউরে উঠবে আপনার চঞ্চলা মন। তাই এবারের শীত মৌসুমটা কাটুক সুন্দরবনের মনরম সৌন্দর্য।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT