• আজ- শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

সিকান্দার আবু জাফরের এক সময়ে ব্যাপক প্রচলিত প্রভাত ফেরী’র গান

মনিরুজ্জামান মুন্না / ২২৩ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

add 1

শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে প্রভাত ফেরী ও অন্যন্য আয়োজনের জন্য সৃষ্ট ও ব্যাপক প্রচলিত প্রথম গানটি সাতক্ষীরা’র জন্য আরও একটি গর্বের জায়গা। কারণ এই গান রচয়িতা সিকান্দার আবু জাফর সাতক্ষীরার (তেতুলিয়া, তালা) সন্তান। ভাষা জাতিসত্ত্বার অন্যতম নিয়ামক। তাই জাতিসত্ত্বার পরিচয় ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিসীম। একুশের কারণে আমরা পেয়েছি শহীদ মিনার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাংলা একাডেমি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। একুশের কারণে জাতিসত্ত্বার স্বতন্ত্র মূল্যায়ন ও মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে একটি বৃহৎ রাষ্ট্রের শসকগোষ্ঠী আর শক্তিমান সাজোয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন ও লড়াই-সংগ্রাম এর মাধ্যমে আমরা অর্জন করতে পেরেছি স্বাধীনতা। কার্যত এই একুশের মধ্যেই নিহিত ছিলো জাতিগত স্বতন্ত্র চেতনার উন্মেষ, স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ আর প্রেরণাদায়ি শক্তি-সাহস। সুতরাং শুধু এই দিনের জন্যই নয়, বছরময় আমরা যেন গর্ব-অহংকার আর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এ কাজের সকল অংশিদারকে। রক্ষা করে চলি বাংলা ভাষার মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহারকে।
সময়ের চাহিদা ও প্রয়োজনে শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে ১৯৫৪ সালের ৩ মার্চ সিকান্দার আবু জাফর ২৩ লাইনের একটি গান রচনা করেন। গানটি হচ্ছে –
‘আমাদের বাংলা ভাষা
আমাদের লক্ষ প্রাণের নিত্য দিনের
দুঃখ সুখের কান্না-হাসা।
হাটের মানুষ, মাঠের মানুষ
ঘরের মানুষ পথের মানুষ বাংলা দেশের সব মানুষের
বুকের ভাষা, আমাদের বাংলা ভাষা।
যে-ভাষায় হৃদয় মেলে
মূর্খ-জ্ঞানী, গরীব ধনী বণিক চাষা।
মায়ের কাছে প্রথম-শেখা বুলি,
সে যে ভাই হীরার কণাগুলি
আমাদের বুকের ঘরের রত্নাধারে
কানায় কানায় ঠাসা।
যে-ভাষায় শান্তি বাণী সান্ত¦না দেয়
দুখের আঁধার রাতে,
যে-ভাষার কলধ্বনি পুলক আনে
অরুণ রাঙা প্রাতে।
যে-ভাষায় অনির্দেশের টানে
আশার পাখী উড়াই আকাশ পানে
যে-ভাষায় গল্প করি, স্বপ্ন দেখি
জানাই প্রীতি, ভাসোবাসা
(সিকান্দার আবু জাফর এর গানের সংকলন ‘মালব কৌশিক’, গান নং- ১৯৪)।
গানটি সুরকার সুধীন দাশ এর সুরে ও কণ্ঠে গাওয়া হয়। এটি শহীদ দিবসে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত প্রথম কোন জনপ্রিয় গান। গুরুত্ব ও প্রয়োগীক মূল্যায়নে গানটি টানা ০২ দশক প্রভাত ফেরীতে এবং শহীদ দিবসের অন্যান্য আয়োজনে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক আর অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাই তখন প্রায় একক আধিপত্য, দাপট ও প্রভাব বিস্তার করেছিলো এই গানটি। স্বাধীনতাউত্তোর কালে নতুন আর একটি গান একুশের আয়োজন ও প্রভাত ফেরীর জন্য সময়ের রুচি ও চাহিদায় গুরুত্ববহ ও অনিবার্য হয়। গানটি হলো প্রখ্যাত কবি ও গীতিকার আব্দুল গফ্ফার চৌধুরী’র রচিত এবং সুরকার আলতাফ মাহমুদ এর সুর ও কণ্ঠে গাওয়া ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভূলিতে পারি’। এটি মূলত একটি বড় কবিতায় আত্মপ্রকাশ করে। যেটি ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে সম্পূর্ণটাই প্রকাশিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী কালে কবিতাটির একটা আংশকে ঐভাবে গানে রূপান্তরিত করা হয়। গানটি বেশ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ব্যাপক হারে প্রচারিত হতে থাকে। পাশাপাশি লুপ্ত হয়ে যায় এবং আমরা ভূলে যেতে থাকি বায়ান্ন পরবর্তী ও একাত্তর নিকটবর্তী একটা দীর্ঘ সময় সমগুরুত্বের সাথে এ কাজে ব্যাপক প্রচলিত সিকান্দার আবু জাফরের উক্ত গানটি। এভাবে একটা সংকটময় কাল থেকে দীর্ঘ সমেয়র প্রতিনিধিত্ত্বের উত্তরাধিকারী গানটি হারিয়ে যাওয়াটাও অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে অনুরোধ জনাবো যে, সিকান্দার আবু জাফর ও সুধীন দাশ এর প্রতি শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞা জ্ঞাপনে বিলুপ্ত গানটির রেকর্ড পুনঃরুদ্ধান করে অন্য গানের পাশাপাশি একটু বাজানো সুযোগ করে দিতে। নতুন প্রজন্ম যেন আমাদের সেই হারানো অতীত শিল্প সত্ত্বার সাথে পরিচিত হতে পারে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার (রাত ১০:২৩)
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৮ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ৬ পৌষ, ১৪৩১ (শীতকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT