এক.
আপনি একজন পাঠক। পাঠ করেন অহর্নিশ। জ্যোৎস্না প্লাবিত রাত কিংবা স্নিগ্ধ প্রভাত, ঘুটঘুটে আঁধার রজনী কিংবা বৃষ্টিমুখর সকাল অথবা তেজহীন রোদেলা দুপুর-বিকেল— এক কথায় প্রতিটি মুহূর্তই আপনার যাপন হয় বই পাঠে ডুব দিয়ে। হাতের নাগালে একটি বই পেলেই, বইটি আদ্যোপান্ত না পড়ে যেনো আপনার স্বস্তির নিশ্বাস নিতেই কষ্ট হয়, যেনো আপনার গুরুত্বপূর্ণ কোন একটি জিনিস অসমাপ্ত-অসমাপ্ত থেকে যায়— আপনার অভ্যাসটা ভালো; খুব ভালো। কিন্তু এখনও আপনি প্রকৃত পাঠক কি-না সেটা বুঝা হয় নি। তাই এবার আসা যাক মূল কথায়। আপনি কতোটুকু সজাগ-সচেতন পাঠক সেটা বুঝে নেওয়া যাক।
বিষয়টি বুঝতে হলে প্রথমে দেখতে হবে আপনার কেমন টাইপের লেখকদের বই পড়তে ভাল্লাগে। আপনার প্রকৃত ভালোলাগা ঐ টাইপের লেখকদের ঘিরে, যারা সত্য-সুন্দর রাহ পানে পথভোলাদের ডাকার জন্য শুভ্র পাতায় কলম চালান, না তাদেরকে ঘিরে যারা শুধু সাহিত্য বিষয়টিকে চিনেছেন; কিন্তু পূর্ণতার সাথে অথবা একেবারেই চিনেননি তাদের প্রকৃত নীড়; চিনেননি তাদের সৃষ্টিকর্তাকে। এখন যদি আপনার ভালোবাসা হোন— উপরোক্ত প্রথম টাইপের লেখকবৃন্দ, তবেই আপনি সজাগ-সচেতন প্রকৃত পাঠক।
দুই.
আমরা অধুনার পাঠকরা সাহিত্য জানার জন্য অনেক ফাসিক-ফুজ্জার লেখকদের বই পড়ে থাকি। পড়াটা খারাপ কিছু নয়; তবে এ-ক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত, যেনো তাদের অশুদ্ধ চিন্তা-গবেষণা আমাদেরকে গ্রাস করে না ফেলে। আমার যতোটুকু মনে হয় পাঠ করা যায় শুধু এ- নিয়তেই যে, আপনি তাদের বই পড়বেন শুধু সাহিত্য জানার জন্য। তাদের অনুকরণের জন্য নয়। আর সাহিত্য জানাটাকে শুধু জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, সাহিত্যের পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মতো সুন্দর ধারাকে মাধ্যম বানিয়ে মানুষকে রবের পথে ডাকার জন্য অথবা সুন্দর ধারায় অপর কাউকে সাহিত্য শেখানোর জন্য। এ-ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। যদি আপনার সাহিত্য চর্চাটা শুধু চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে অথবা যদি দেখেন যে, সাহিত্য জানতে গিয়ে আপনি পথভ্রান্ত লেখকদের প্রতি ক্রমশ দুর্বলতা অনুভব করছেন— তবে প্রথম কারণে এমন লেখকদের বই পড়া আপনার জন্য অনুচিত; দ্বিতীয় কারণে এ-দেরকে না পড়া আবশ্যক। রব যেনো আমাদেরকে প্রকৃত লেখকদের প্রেমিক বানান! সঠিক নিয়ত স্মৃতির জমিনে গেঁথে রেখে সাহিত্য চর্চার তাওফিক দেন!
আল্লাহ যেন আমার ভাতিজাকে ইমাম গাজালির মত লেখক হওয়ার তাওফিক দান করে।