বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিদেশী ঋণ গ্রহণ। ঋণ নিজেই কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না; বরং এটি হতে পারে একটি দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও ঋণের সঠিক ব্যবহার না হলে ঋণগ্রস্ততা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশকে শিক্ষা নিতে হবে। শ্রীলঙ্কা ব্যাপকভাবে বিদেশী ঋণ নিয়ে তা অব্যবস্থাপনার কারণে আন্তর্জাতিক ঋণ খেলাপি দেশে পরিণত হয়েছে। এর ফলে দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের কারণে শ্রীলঙ্কার জনগণই ভোগান্তির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বিগত সরকারের সময়ে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়নের নামে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং ব্যাপক দুর্নীতি। বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি রেশিও এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কিন্তু অস্বস্তিকর বিষয় হলো, দেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই পূর্ববর্তী ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য যে পরিমাণ ঋণ পাওয়া হয়েছে, তা কিস্তি পরিশোধের চেয়ে কম। অর্থাৎ নতুন ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে পুরাতন ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে অবশ্যই অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমিয়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। জনগণের অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ঋণ গ্রহণ দেশকে সাময়িক উন্নয়নের দিকে না ঠেলে বরং দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে। এখনই সময় সাবধান হওয়ার, নাহলে শ্রীলঙ্কার মতো সংকটময় অবস্থার মুখোমুখি হতে হতে পারে বাংলাদেশ।
লেখক: সম্পাদক, মাসিক সাহিত্যপাতা।