১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। সেই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ৪৮ বছর পূর্তি হলো। বাঙালির হৃদয় বিদায়ক সেই শোক আজ শক্তিতে উদ্দীবিত হয়েছে। বছর ঘুরে আবার এসেছে আগস্ট মাস। বাঙালির ইতিহাসে এ মাসের আলাদা কোনো মাধুর্য নেই বরং মাসটি ঘিরে জেগে ওঠে ভয়াল স্মৃতি। মানবিক মানুষ এ সময় বেদনায় ডুবে থাকে। কারণ আর কিছু নয়, আগস্ট বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ঝরানো মাস। আজ শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের এ মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বিপথগামী একদল সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শোকের মাস এই বেদনাদায়ক ঘটনাকে ঘিরেই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ শ্রী চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি; তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন। সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছুসংখ্যক সদস্য সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে শোকের ছায়া। ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’
টাইমস অফ লন্ডন-এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়, ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
গীতিকবি গৌরী প্রসন্ন মজুমদার বলেছিলেন: একটি মুজিবরের থেকে/ লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি/ আকাশে বাতাসে ওঠে রণি…। এক মুজিব আজ ছড়িয়ে পড়েছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলে। বাংলার জল হাওয়ার সঙ্গে মিশে আছেন তিনি। আগস্ট তাঁকে খুঁজে নিতে সহায়তা করে। প্রতি আগস্টে নতুন করে পাওয়া হয় শেখ মুজিবকে। এবারও পাওয়া হবে। তাঁকে ঘিরে থাকা হবে। বেদনা এভাবে মিশে যাবে প্রাপ্তিতে।
বর্ষ পরিক্রমায় আবার আমাদের জীবনে ফিরে এসেছে শোকাবহ আগস্ট। আজকের এই শোকাবহ দিনে সকল স্বাধীনতাকামী বাঙালির দৃঢ় প্রত্যয় হোক, যার যে কর্মদক্ষতা আছে তাতে সর্বশক্তি দিয়ে সোনার বাংলায় সোনার মানুষ গড়বো। যাতে দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে আজন্ম লালিত স্বপ্ন জাতির জনকের ছিল, তার বাস্তব রুপ দেয়া সম্ভব হয়।