শ্রবণশক্তির সমস্যা এখন একটি উদ্বেগজনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের চারপাশে অনেক শিশুই কানে কম শুনছেন বা পুরোপুরি বধির হয়ে যাচ্ছেন। শিশু চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল এই সমস্যার পেছনের নানা কারণ তুলে ধরছেন। তিনি জানান, কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা জন্মগত, আবার অনেক সময় অতিরিক্ত শব্দদূষণের ফলেও হতে পারে। তবে বর্তমানে একটি মারাত্মক অভ্যাসও বেড়ে গেছে—সারাদিন ইয়ারফোন বা হেডফোন ব্যবহার করা।
আজকের প্রযুক্তি নির্ভর শিশুরা, যারা গ্যাজেটের প্রতি আসক্ত, তাদের মধ্যে ইয়ারফোন ব্যবহারের প্রবণতা খুবই উদ্বেগজনক। অনেক অভিভাবক তাদের শিশুর শান্তি পেতে মোবাইল হাতে ধরিয়ে দেন, বা ইয়ারফোনে গান শোনাতে দেন, যা শিশুর শ্রবণশক্তিতে গভীর ক্ষতি সাধন করছে।
চিকিৎসক প্রিয়ঙ্করের মতে, আজকাল অনেক অভিভাবক তাদের শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আসেন। “আমার সন্তান কানে কম শুনছে,” এমন অভিযোগ জানাতে আসেন তারা। কর্ণগহ্বরে সংক্রমণের কথা বললেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অন্তর্কর্ণের ক্ষতির লক্ষণ। কান পরিষ্কার করার সময় একাধিক অভ্যাস—যেমন জোরে খোঁচাখুঁচি করা, ধাতব কিছু দিয়ে কানে ঢোকানো, বা উচ্চস্বরে ইয়ারফোন ব্যবহার—এই সমস্যাগুলোর কারণ হতে পারে। ৮০ ডেসিবেল বা তার বেশি শব্দ শুনলে কানের পর্দার ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। গবেষণা দেখায়, একটানা ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে ৮০ ডেসিবেল শব্দ শুনলে কানের পর্দা ফাটতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
শ্রবণশক্তি রক্ষা করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায়:
১) কানের ময়লা: কানের ময়লা সাধারণত নিজে থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়। তাই অযথা খোঁচাখুঁচি থেকে বিরত থাকাই উচিত। কাঠি, পালক বা পেনসিলের মতো কিছু ব্যবহার না করাই শ্রেয়। প্রয়োজনে কানের ড্রপ ব্যবহার করুন।
২) ইয়ারফোনের ব্যবহার: শিশুর হাতে ইয়ারফোন বা হেডফোন দেবেন না। পড়াশোনার প্রয়োজনে কিছু শুনতে হলে তা বিরতি নিয়ে শুনতে হবে।
৩) অডিটরি প্রসেসিং ডিজঅর্ডার: উচ্চস্বরে শব্দের ফলে শিশুর শব্দ বোঝার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। শিশু শব্দ শুনলেও তার মানে বুঝতে সমস্যা অনুভব করতে পারে। এতে গুছিয়ে কথা বলা বা নির্দেশ মানার ক্ষমতা কমে যায়।
৪) শব্দের পরিবেশ: যেকোনো উচ্চস্বরে শব্দ পরিবেশে শিশুর কানে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে হবে। বাড়িতে উচ্চস্বরে গান বা খুব জোরে কথা বলা উচিত নয়।
৫) ভারসাম্য রক্ষা: কান শুধু শ্রবণই নয়, দেহের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চস্বরে শব্দ এই ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
৬) কানের চিকিৎসা: কানের ভিতরে পুঁজ বা আঠালো তরল তৈরি হলে অথবা কানে ব্যথা হলে ইচ্ছেমতো কানের ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো কিছু ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে।
এখনই সময় সচেতন হওয়ার এবং আমাদের শিশুদের শ্রবণশক্তির দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার। সচেতনতা এবং সঠিক যত্ন নিলে আমরা আমাদের শিশুদের শ্রবণশক্তিকে সুস্থ রাখতে পারব।