• আজ- রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সময় এখনই

লেখক : / ৯২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

add 1

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা গত ১৫ বছরে বিপর্যস্ত হয়েছে। নিম্নস্তরে চাপিয়ে দেওয়া পাবলিক পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ঠেলে দেওয়ায় শিক্ষার গুণগত মান তলানিতে ঠেকেছে। দুর্নীতি, দলীয়করণ, নিয়োগ বাণিজ্য এবং নতুন শিক্ষাক্রমের অযাচিত চাপের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

সরকারের পরপর তিনজন শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষাক্ষেত্রের চতুর্মুখী সর্বনাশ ঘটেছে। যথাযথ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়া মন্ত্রীপদে আসীন হওয়া এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনার অভাবে শিক্ষার প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পেয়েছে। ২০০৯ সালে প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা চালু করা হয়। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, এসব পাবলিক পরীক্ষার প্রয়োজন ছিল না, বরং এগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট টিউটরের ওপর নির্ভরশীল করেছে। ‘জিপিএ ৫’ নামক ভ্রান্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি দেশের শিক্ষার মেকি উন্নয়ন দেখানোর একটি উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের আঘাত এসেছে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর প্রচেষ্টায়। করোনা মহামারির কঠিন সময় পেরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর পরপরই তাড়াহুড়ো করে বাস্তবমুখী শিক্ষাক্রম চাপিয়ে দেওয়া হয়, যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবার জন্যই চরম দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। সঠিক প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং পর্যাপ্ত শিক্ষাসামগ্রীর অভাবের ফলে শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়া ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। শহরের বিদ্যালয়গুলোতে কিছু কাজ হলেও মফস্বলে শিক্ষার মান অত্যন্ত করুণ ছিল।

শিক্ষায় অবক্ষয়ের পেছনে একটি বড় কারণ হলো শিক্ষা খাতে দুর্নীতির বিস্তার। বিভিন্ন দাফতরিক কাজে ঘুষ ছাড়া ফাইল ছাড়ানো ছিল কঠিন, এবং নিয়োগ বাণিজ্যের করুণ চিত্র ছিল ভয়াবহ। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের জন্যও ঘুষ দিতে হয়েছে লাখ লাখ টাকা। ফলে যোগ্য মেধাবীরা পিছিয়ে পড়েছে, আর দুর্নীতিবাজরা সুযোগ পেয়েছে।

শিক্ষার এই চরম বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। চলমান পাঠ্যসূচির মাধ্যমে মূল্যায়ন সম্পন্ন করে পুরনো কারিকুলামকে পুনরায় প্রণয়ন করতে হবে। আগামী বছরের শিক্ষাবর্ষ সংক্ষিপ্ত করে এপ্রিলে শুরু করা যেতে পারে, এবং এই সময়ের মধ্যে নতুন পাঠ্যসূচি প্রণয়ন ও ছাপানোর কাজ শেষ করা জরুরি। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে দেশের সুধীসমাজ ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একটি নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন প্রয়োজন, যা দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে মানানসই একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নে কাজ করবে।

আজকের দিনে আমাদের নতুন করে শিক্ষার বিপ্লব শুরু করতে হবে। এই বিপ্লবের সফলতার জন্য শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে, দুর্নীতি মুক্ত, বৈষম্যবিরোধী এবং ন্যায়ভিত্তিক একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সোনার বাংলা গড়ে তোলার এখনই সময়।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • রবিবার (দুপুর ১২:৩৩)
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৯ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ৭ পৌষ, ১৪৩১ (শীতকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT