একটা অসুখ আমাকে ধরেছিলো
কী কারণে তা কেউ বলতে পারেনি।
যদিও দিনে দিনে জটিলতর হতে থাকলো রোগটা।
কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লো স্বাভাবিক চলা-ফেরার অভিনয়, যে ভাবে
বুঝাবো সবাইকে ভাল আছি, আনন্দময় যাপিত জীবন…
পরবর্তী মুহূর্তগুলো এমন হলো যে, আমি শুধু
তাদের সংশ্রব চাইতাম যারা অবিকল আমারই মত;
খুব খেটে খুটে তাদের খুঁজে বের করতাম,
সহজসাধ্য ছিল না কাজটা।
তারা সবাই ছিলো আড়ালে, অচেনার আঁচল টেনে।
অবশেষে কিছু সহচর পেয়েছিলাম খুঁজে
যাদের সঙ্গে সময়ে-সময়ে আমি হাঁটতাম।
নদীর তীর ঘেসে একেক জনের সাথে, অকপটে আবার
কথোপকথন শুরু হলো, যা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম…
প্রায়ই আমরা থাকতাম নির্বাক। যা কিছু বলি না কেন
সব কথা ফেলে নদীটার কথা বলতে বেশী ভাল লাগতো…
নদীটির দুই কূলে লম্বা জলছোঁয়া তৃণলতা কেঁপে ওঠে
প্রশান্তিময় তরঙ্গের মতো শরতের সমিরনে।
আর মনে হত এই পরিবেশটা আমার আশৈশব চেনা।
যদিও আমার ছেলেবেলার স্মৃতিতে কোন নদী ছিল না,
শুধুমাত্র গৃহ আর আঙ্গিনা।
হয়তো তাই প্রত্যাবর্তণ করছিলাম আমি সেই সময়ে
যে সময় আমার শৈশবের পূর্ববর্তী,
হতে পারে বিস্মৃতির অতলে ঢাকা
এই সেই নদী যার কথা আমার স্মরণে আসে।
পাখিটি আসে খুব প্রভাতে।
ডাকে এমন করুণ স্বরে, যেন তার
আপন জনের মৃত্যু হয়েছে।
অথচ কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই
তার সঙ্গী পাখিটি ফিরে আসে হন্তদন্তের মতো।
আমার হৃদয় একটি তৃষ্ণার্ত পাখি, যে প্রতিনিয়ত
ডাকছে প্রিয়ার নাম।
অথচ আমার প্রিয়া কোনোদিন
রাখে না তার পা আমার আঙিনায়।
লুইস এলিজাবেথ গ্লিক: কবি লুইস এলিজাবেথ গ্লিক ১৯৪২ সালের ২২ এপ্রিল নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্ম গ্রহন করেন। বাবা ড্যানিয়েল গ্লিক, আর মা বিয়েট্রিস গ্লিক। তাঁর কবিতা অন্ত-কথন ধর্মী। মনেহয় যেন তিনি সরাসরি পাঠকের মুখোমুখি বসে পাঠকের সাথে কথা বলছেন। তাঁর কবিতায় আছে আত্ম-জিজ্ঞাসা, মানসিক সংঘাত, মৃত্যু, আকাক্সক্ষা ও প্রকৃতি প্রেম। তিনি দুঃখ ও একাকীত্বকে প্রকাশ করেছেন খোলামেলা-ভাবে। গ্রীক ও রোমান মিথোলজী আছে তাঁর কবিতায়। লুইস গ্লিক সমসাময়িক কবিদের মধ্যে অন্যতম শুদ্ধ ও সফল গীতিকবি। তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘ফার্টসবর্ন’ বের হয় ১৯৬৮তে। ১৯৯৩ তে তিনি পুলিৎজার পুরস্কার পান। ২০০৩ সালে তিনি ১২তম সম্মানিত মার্কিন পোয়েট লরেট মনোনীত হন। কবিতার জন্য নোবেল পান ২০২০ সালে। তার কবিতাকে সরল ও সৌন্দর্যময় সুস্পষ্ট কাব্যিক কণ্ঠস্বর বলে আখ্যা দিয়েছে নোবেল কমিটি।