সময়টা ২০২০ সালের মাঝামাঝি। তখন থেকেই তোমাকে আমার ভালো লাগা শুরু। দিন দিন সেই ভালো লাগা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এরপর সেই ভালো লাগা ভালোবাসায় রূপ নেয়। অতঃপর তোমার কাছাকাছি যেতে চিঠির মাধ্যমে ভালোবাসার হাত বাড়াই। আমার সেই চিঠি পড়ে তোমার কেমন লেগেছিলো তা কখনোই জানা হয়নি। তার কয়েক দিন পর তুমি আমার সেই চিঠির প্রতি উত্তর দিলে। তোমার সেই চিঠি এখানে পূর্ণাঙ্গ ভাবে তুলে ধরা হলো।
প্রিয়তম জীবন সঙ্গী,
আমার সালাম নিন। আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ? আশা করি সবাইকে নিয়ে ভালো আছেন। গত তিন দিন হলো আপনার চিঠি পেয়েছি। চিঠিটা পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। জানিনা আমার দেওয়া চিঠি আপনার ভালো লাগবে কিনা। তবে হ্যাঁ - আমি যদি সত্যিই আপনার প্রিয় মানুষ হই, তাহলে অবশ্যই ভালো লাগার কথা। প্রিয় মানুষের সবকিছুই ভালো লাগে। আপনাকে যে আমি আমার হৃদয়ের গহীন ভেতর থেকে ভালোবেসে ফেলেছি। মন-প্রাণ উজাড় করে যে আমি আপনাকেই ভালোবাসি। যদি আপনাকে আমার ভালো না লাগতো, তাহলে তো প্রথম যেদিন বলছেন, সেই দিনই তো না করতাম। ভালো লাগে বিধায়ই তো ফোন দিয়েছি। আপনাকে যে কতোটা ভালোবাসি, সেটা লিখে বা বলে আপনাকে বোঝানের ভাষা আমার জানা নেই। যখন আমি আপনাকে নিয়ে ভাবতে যাই তখন শেষ করতে পারিনা। আর যদি কখনো সরাতে যাই পারিনা। হয়তো বা কোনো এক মুহূর্তের জন্য সরাতে পারবো না কোনোদিন। আপনি আমার অপেক্ষায় থাকেন। আমি আপনারই প্রত্যাশায়। ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন। আজ আর নয়। I Love You So Much...
ইতি-
তোমারই মেঘনীলা।
যেদিন তোমার এই চিঠি হাতে পেয়েছিলাম সেদিন খুব আশ্বস্ত হয়েছিলাম আমি। তখন তোমাকে ভালোবাসার মাত্রা হাজার গুণে বেড়ে গিয়েছিলো। এরপর তোমার আমার ভালোবাসা অনেক গভীর হতে থাকে। কেউ কাউকে প্রচণ্ড মিস করতে থাকি। নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ, ফোনে কথা বলা এবং ম্যাসেজের মধ্য দিয়ে অহিবাহিত হতে থাকে তোমার আমার দিন যাপন। সবসময় কেউ কাউকে দেখার প্রচণ্ড ইচ্ছে বেড়ে যেতে থাকে। একদিন কথা এবং দেখা না হলেই কষ্টের মাত্রা অনেক বেড়ে যেত। তোমাকে ছুঁয়ে দেখার তীব্র অনুভূতি বুকের ভিতর ঝড় তুলে দিতো। তখন কামনায় ডুবে গিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরার প্রবল ইচ্ছে হতো। মন চাইতো তোমার সাথে যৌনতায় লিপ্ত হতে। এভাবে দীর্ঘ দিন তোমার সাথে রিলেশন ভালোই চলে৷ আমরা এগোতে থাকি বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করার দিকে। কিন্তু হঠাৎ আমাদের জীবনে কালবৈশাখী ঝড় নেমে আসে। মুহূর্তেই বদলে যায় সব। আমার অজান্তে তোমাকে দেখতে আসে বরপক্ষ। তোমাকে প্রথম দেখেই পছন্দ হয়ে যায় বরপক্ষের। সত্যি বলতে তোমার সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। তারপর অন্যত্র তোমার বিয়ের কথা চলতে থাকে। তখন আমার করার কিছু থাকে না। তোমার প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস ছিলো। সেজন্য ভেবেছিলাম আমাকে ছাড়া তুমি কাউকে বিয়ে করবে না। কিন্তু আমার সেই বিশ্বাস তুমি রাখতে পারোনি। আমাকে ছুড়ে ফেলে তুমি বিয়ে করে নিলে অন্য ছেলেকে। আমার কথা একবার ভেবেও দেখলে না তুমি। তোমাকে হারিয়ে জীবনের সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছি আমি। সেই কষ্টের কোনো মাত্রা নেই। অন্য ছেলেকে বিয়ে করে অনেক সুখেই আছো তুমি। অথচ আমি ভালো নেই তোমাকে হারানোর বিরহে। বুকের ভিতর প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি। এখনো তোমার কথা মনে হলে ধমনী ফেটে যায়। কতো না স্বপ্ন ছিলো তোমাকে কাছে পাওয়ার মধ্য দিয়ে। তুমি হারিয়ে গেলে মুহূর্তে আমাকে ভুলে গিয়ে। তোমাকে হারানোর কষ্ট অনেক তীব্র। তুমি বলেছিলে আমাকে ছাড়া তুমি জীবনে সুখী হতে পারবে না। আমার বুকেই তোমার চিরস্থায়ী বসতি গড়বে। সারাজীবন ছায়ার মতো আমার পাশে থাকবে। কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। অনন্ত ভালোবেসে আমাকে তুমি বুকে তুলে রাখবে। অথচ সেই তুমি আজ যোজন যোজন দূরে। একেবারে আমার নাগালের বাইরে চলে গেছো তুমি। যেখান থেকে তোমাকে ফিরিয়ে আনার কেনো সাধ্য নেই আমার। শুনেছি তোমার বর তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। তোমাকে অনেক কেয়ার করে। তোমার সব শখ-আহ্লাদ সে পূরণ করে। ছুটির দিনে তোমাকে বাহিরে ঘুরতে নিয়ে যায়। শপিং এ নিয়ে তোমাকে নিত্য নতুন পোশাক কিনে দেয়। নামীদামি প্যালেসে তোমাকে খাওয়াতে নিয়ে যায়। তোমার গর্ভে সন্তান জন্ম দিয়ে যে তোমার নারী জীবন পূর্ণতা দিয়েছে, তাকে তুমি আমার থেকে হাজার গুণে বেশি ভালোবেসে ফেলেছো। আমার প্রতি তোমার ছলনার ভালোবাসা ছিলো। বরের প্রতি রেখেছো নির্ভেজাল ভালোবাসা। এতো সবের মাঝে আমাকে ভুলতে তোমার সময় লাগেনি। তুমি ভুলেই গেছো প্রেমিকের সাথে তোমার যৌন মিলনের কথা। শুনে ছিলাম প্রথম ভালোবাসার মানুষকে কেউ কখনো ভুলতে পারে না। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে সেটার কোনো ভিত্তি নেই। সময়ের ব্যবধানে তুমি সবকিছুই মানিয়ে নিতে পারো। তাই যখন তুমি যার কাছে থাকো তার সাথেই হাসি খুশি থাকতে পারো তুমি। এটাই নাকি তোমার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। যদি তাই না হবে তাহলে কখনোই আমাকে ছেড়ে যেতে পারতে না। হাত জোর করে তোমাকে বলেছিলাম আমার কাছে চলে আসতে। তুমি আসোনি। তোমার মায়ের কাছেও হাত জোর করে বলেছিলাম আমার সাথে তোমাকে বিয়ে দিতে। কিন্তু সেও আমার কথার কোনো কর্ণপাত করেনি। তোমাকে সুখী করার মতো পূর্ণ যোগ্যতা আমার ছিলো। তবুও তুমি আমাকে বিরহের জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে দিলে। এতোটা বেইমানি তুমি না করলেও পারতে। মানুষ হিসেবে এতোটা বেইমানি করা তোমার উচিত হয়নি। ভেবেছিলাম তুমি অনেক মানবিক মানুষ। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বুঝেছি তোমার মতো হিংস্র মানুষ হয় না। তোমার ছোবল বিষধর সাপের চেয়েও বিষাক্ত। তোমার সেই বিষাক্ত ছোবলে জর্জরিত আমি। শুনেছি বিয়ের দিন অনেক হাসি-খুশি ছিলে তুমি। অনেক উৎফুল্ল মনে তুমি বেনারসি শাড়ি এবং ব্লাউজ পরে বিয়ের দিন নব বধূ রূপে সেজে ছিলে। নিজে নিজেই মেহেদি লাগিয়ে ছিলে হাতে-পায়ে। এদিকে আমার সেদিন জীবন্মৃত অবস্থা ছিলো। বিয়ের দিন তোমার বাড়িতে কানায় কানায় লোকের সমাগম। বক্স সেটে ডিজে গানের তালে তালে অনেকে নেচে-গেয়ে আনন্দ করেছিলো। তারপর কবুল বলার মাধ্যমে অন্য ছেলেকে তুমি স্বামী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে। তখনো তুমি খুব হাসি-খুশি ছিলে। মেয়েরা সাধারণত বিয়ের সময় কবুল বলতে অনেক সময় নেয়। পাশে থাকা লোকের অনেক রিকোস্টের ভিত্তিতে মেয়েরা কবুল বলে। কিন্তু তুমি নাকি এক সেকেন্ডও সময় নাওনি কবুল বলতে। এরপর নতুন মানুষের হাত ধরে কান্না বিহীন হাসি মুখে পাশাপাশি গাড়িতে বসে তুমি চলে গেলে বরের বাড়ি। তখন আমার কতোটা কষ্ট হয়েছিলো তোমাকে বলার মতো ভাষা নেই। তোমার ফুলশয্যা রাতে এক সেকেন্ডের জন্যেও দু'চোখ আমি এক করতে পারিনি। সারা রাত কেঁদে কেঁদে চোখের জলে বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছিলাম। বিপরীতে তুমি বরের সাথে রোমাঞ্চ করে সারা রাত পার করেছো। কয়েক বার যৌন মিলনে স্বর্গীয় সুখ উপভোগ করেছো। তুমি যে অনেক আবেদনময়ী সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম। রিলেশনে থাকা অবস্থায় যতোবার তোমার সাথে যৌন সঙ্গম করেছি, তখন বুঝেছি তুমি অনেক সেক্সুয়াল। সেই ভিত্তিতে নতুন মানুষের সাথে বৈধ যৌন মিলন করে কাটিয়ে দিয়েছো ফুলশয্যা রাত। তারপর থেকে আমার সাথে তুমি সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছো। নতুন মানুষকে পেয়ে আমার শূন্যতা তার মাধ্যমে পূরণ করেছো। তোমার সব শখ-আহ্লাদ এখন তাকে ঘিরে। কানায় কানায় পরিপূর্ণ তোমার জীবন। দাম্পত্য জীবনে অনেক সুখী হয়েছো তুমি। এতোটা সুখী হবে জীবনে নাকি কখনো কল্পনাও করতে পারোনি। তোমার কোনো আবদার নাকি তোমার বর কখনোই অপূর্ণ রাখেনি। বরের কাছে কোনোকিছু চাওয়ার সাথে সাথে পেয়ে যাও। শহর অভিমুখে বরের বাসা হওয়ায় সেই আনন্দ তোমার ধরে না। যখন বরের সাথে হাত ধরে হাঁটো সেটা কখনো আমার চোখে পড়লে অকস্মাৎ ঝড় ওঠে বুকের ভিতর। ওই অবস্থায় প্রিয় মানুষকে দেখলে যে কারো ভীষণ কষ্টের উদ্রেক হয়। যেটা তুমি কখনোই বুঝবে না। তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসতে তাহলে অজুহাত দেখিয়ে কখনো ছেড়ে যেতে না। তুমি তোমার চিঠিতে দেওয়া কথা রাখোনি। আমাকে তুমি অপেক্ষায় থাকতে বলেছিলে। বলেছিলে তুমি আমার প্রত্যাশায় থাকবে। কিন্তু সেই তুমি কোনো কথাই রাখোনি। কথা দিয়ে যদি রাখতে না পারবে তাহলে মিথ্যে আশ্বাসে কেন ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে ছিলে ? তোমাকে তো আমি জোর করে কখনো ভালোবাসতে বলিনি। আমাকে তুমি ভালোবাসতে পারবে না সেটা বললেই হতো। শুধু শুধু আমার সাথে মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করলে। আমিতো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি। কখনো তোমার অমঙ্গল কামনা করিনি। তাহলে কেন এতো বড় কষ্ট তুমি আমাকে দিলে ? তোমার দেওয়া কষ্টে ধীরে ধীরে আমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। ভীষণ কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছি। তোমার ছলনার ভালোবাসার ফাঁদে পড়ে পুরোদস্তুর আটকে পড়েছি আমি। কোনো ভাবেই নিজেকে ছাড়িয়ে আনতে পারছি না সেখান থেকে। এমনি ভাবে চলতে চলতে হয়তো একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবো। থেমে যাবে আমার নিঃশ্বাসের প্রতিধ্বনি।থমকে দাঁড়াবে পায়ের তালু। শিকড় গজাবে পায়ের নখের আঙ্গুলে। তোমার বিরহ প্রতিনিয়ত আমাকে কাঁদায়। ভীষণ ভাবে কাঁদায়। সময়-অসময় কাঁদায়। কভুও তুমি জানলে না। কভুও তুমি বুঝলে না। কতো কষ্টে বেঁচে আছি তুমি সেটা অনুভবও করলে না। কিন্তু সীমাহীন কষ্ট আমাকে দিতে কভুও তুমি ভুল করলে না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com