বাতাসের শোঁ-শোঁ আওয়াজ। আম, জাম, কাঠাল আর নানান প্রকার বৃক্ষদের নাচানাচি। অদূরে অবস্থিত পুকুর-জলে তীব্র বাতাসের ছোঁয়ায় তরঙ্গ। যেনো উত্তাল মিনি সমুদ্র। মাঝে-মধ্যে দিল কাঁপানো বজ্রপাত। খানিকটা পর পুরোটা দিনের অসহ্য গরম হটিয়ে, রহমের বৃষ্টিদের প্রশান্তিদায়ক মুলাকাত। মুতাবাসসিম মাদ্রাসা থেকে এসেছে একটু আগে। খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে। চোখে ঘুম থাকলেও কী ভেবে যেনো ঘুমালো না। আজকে তাদের মাদ্রাসায় ছিলো সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ সভা। এবার থেকে সভার কাজ গতানুগতিক নিয়মে চলছে না; বরং ভিন্ন আঙ্গিকে।নতুনত্বের ছোঁয়ায়। যে আঙ্গিকে হওয়াটা সময়ের চাওয়া, সে আঙ্গিকেই। সে মনস্থ করেছে সভা নিয়ে কিছু একটা লিখবে। যার মধ্যে থাকবে— সৃজনশীল একজন দাঈর খানিকটা পরিচয় এবং তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা। সাথে তাঁর প্রতি মুতাবাসসিমের শ্রদ্ধা–ভালোবাসার প্রকাশ।
অত:পর লিখতে শুরু করলো মুতাবাসসিম —আমাদের চিন্তা-গবেষণাগুলোর বিস্তৃতি আজ খুবই অল্প জায়গা জুড়ে। অনেকের মধ্যে আবার বিষয়টি একেবারে নেই বললেও চলে। পৃথিবী এখন কী চায় আমাদের থেকে,কোন ধারায় কাজ করলে আজকের অভিশপ্ত কালো পৃথিবী একটুখানি আলোর নাগাল পাবে, এই চিন্তাগুলো নেই আমাদের মাঝে। থাকলেও খুব অল্প অথবা এই গবেষণামূলক কাজের লোক সংখ্যা স্বল্প।
এই অল্প সংখ্যক লোকদের ভাবনাগুলো যখন শুনার সুযোগ হয়,তখন উনাদের প্রতি ভালো লাগা জন্মে। ভালোবাসা জন্মে। উনাদের সূক্ষ্ম ভাবনাগুলো ভাবায়। বুঝে আসে তখন এ-কথাটি যে, আসলেই দ্বীনের পথে ডাকার কাজগুলো তো তেমন না হয়ে এমনই হওয়া উচিৎ । সময়োপযোগী আহ্বান তো ওটা নয়, বরং এটাই।
এ-বছরের প্রথম দিকে নাযিম সাহেবের কাছ থেকে যখন শুনলাম—‘মুহাম্মাদুল্লাহ’ হাফিযাহুল্লাহ আমাদের জামেয়ায় নিয়মিত দরস প্রদান করবেন, তখন আনন্দ–পুলকের বাঁধ ভাঙ্গা ঢেউ তরঙ্গায়িত হয়েছিলো মনে। কারণ হচ্ছে— হুযূর সম্পর্কে উনি জামেয়ায় আসার আগেই বেশ জানাশোনা ছিলো। উনি কোন স্থরের ব্যক্তিত্ব, উনার মন–মাইন্ড কেমন, আজকের সমাজকে তিনি কোন ধারার–কেমন ধরণের দাওয়াহ’র মাধ্যমে দ্বীনের পথ পানে টানতে চান— এই সব আমার ধারণায় মোটামুটি ছিলো, উনার মতো কিছু মানুষকে ভালোবাসার ফলস্বরূপ।
আলহামদুলিল্লাহ! হুযূর আমাদেরকে দরস প্রাদানের পাশাপাশি সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ সভায়, উনার গভীর উপলব্ধি থেকে গুরুত্ব ভরা কিছু কথামালাও উপহাড় দিচ্ছেন ; সামনে আরো দিবেন, ইন শা আল্লাহ। উনার কথাগুলো নিশ্চয়ই নোট করে রাখার মতোই। কারণ, ঐ যে প্রথমাংশে বলছিলামনা, সমাজ–পৃথিবীর চাওয়া নিয়ে কিছু কথা— ঐ চাওয়াগুলোকে পূর্ণতার রূপ দিতে উনার আলোচনাগুলো আত্মস্থ করা প্রয়োজন মনে করি খুব। আজও ছিলো প্রশিক্ষণ সভার দিন। আজকের সভায় তিনি যে আলোচনাগুলো করেছেন তা হলো এই—
★পাব্লিক স্পিকিং (জনসাধারণের সামনে মুখ ফোটিয়ে কথা বলা )-এর জন্য পাঁচটি বিষয় আবশ্যক।
পাঁচটির মধ্য থেকে প্রথমটি হলো— প্রিপারেশন(প্রস্তুতি)।
এটার আবার সাতটি দিক রয়েছে—
১.আলোচনার বিষয় নির্ধারণ করা।
২.আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা।
৩.নির্ধারিত বিষয়ের উপড় প্রচুর জ্ঞান অর্জন করা।
৪.আলোচনার ধরণ নির্ধারণ করা।
৫.স্ক্রিপ্ট তৈরী করা।
৬.স্ক্রিপ্ট নিয়ে স্টাডী করা।
৭.আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় সূত্রসমূহ অর্থাৎ— আয়াত-হাদীস আয়ত্তে রাখা।
এমন সব নতুনত্ব মাখা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা সবাইই শুনে উনার কাছ থেকে। আমরাও ইন শা আল্লাহ শুনবো পুরো বছর জুড়ে।
তবে হ্যাঁ এটা জানি— যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও হুযূরের প্রকৃত শান–মান অনুযায়ী হুযূরকে কখনো কদর করা হবে না । শ্রদ্ধা– সম্মানের আসনে বসানো হবেনা। হবে না যথাযথ গুরুত্ব দেওয়াও।