সময়টা ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার তোমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার তিন বছর পরে তোমার সাথে হঠাৎ দেখা হওয়ার পরক্ষণে পুরনো দিনের কথা ভীষণ ভাবে মনে পড়ে গেলো। তোমাকে হারানোর কষ্টগুলো ক্ষত হৃদয়ে আবার তুমুল বেগে জেগে উঠেছে। কখনো চাইনি তোমার সাথে আবার কোনোদিন দেখা হোক। এতোদিন পরে পুনরায় তোমাকে দেখার পর সবকিছু যেন মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে গেলো। নিজের অজান্তেই চোখের কোণ থেকে এক ফোঁটা নোনা জল বেরিয়ে এলো চিত্তের অগোচরে। ততোদিনে তুমি এক ছেলে সন্তানের মা-হয়েছো। অবাক দৃষ্টিতে তোমাকে দেখার পর গভীর বেদনার অতলে ডুবে গিয়েছিলাম। পরক্ষণেই অনুভবে তোমার গা ছুঁয়ে কোথায় যেন দূর অজানায় হারিয়ে যেতে যেতে ভায়োলিনের করুণ সুরে নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো। মানুষ যে মানুষকে এতোটা কষ্ট দিতে পারে কখনো আমার বোধগম্য ছিলো না। তোমাকে ভালোবেসে যাপিত জীবনের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়েও কোনোদিন তোমার প্রিয়জন হতে পারিনি। মিথ্যা প্রেমের জাল বুনে আমাকে তুমি বীভৎস যন্ত্রণার আগুনে তিলে তিলে দগ্ধ করেছো। কাছে আসার নাম করে বারংবার ধোঁকা দিয়েছো। জীবন সাথী হওয়ার বদলে তিলে তিলে আমাকে নিঃশেষ করেছো। জানিনা আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি কতোটা সুখ পেয়েছো। সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতি মুহূর্তে আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছো। ভালোবাসার বদৌলতে আঘাতে আঘাতে বুকটা আমার ঝাঁঝরা করে দিয়েছো। আমার সব সুখ কেড়ে নিয়ে নিঃশেষ করে আমাকে তুমি ছেড়ে দিয়েছো। কখনো একটি বারের জন্যও আমাকে তুমি কাছে টেনে নাওনি। হৃদয় বিদারক সব কষ্টে আমাকে তুমি ভাসিয়েছো বেদনার জলে। কথা দিয়েও কোনো কথা তুমি রাখোনি। জীবন সাথী হতে চেয়েও হারিয়ে গেছো বহুদূর। কখনো আমার প্রতি তোমার এতোটুকুও সহানুভূতি জাগেনি। প্রবৃত্তি জাগেনি বোধের জমিনে। অমানবিক অত্যাচারে বিদগ্ধ করেছো সমস্ত আমিটাকে। রূপের অহংকার আর অর্থ বিত্তের সমন্বয়ে প্রতি মুহূর্তে আমাকে তুমি অবহেলা করেছো। তবুও তোমাকে কাছে পাওয়ার আশায় সব কষ্ট সহ্য করে তোমাকে আমি ভালোবেসে গেছি। কখনো তোমাকে হারাতে চাইনি আমি। চেয়েছিলাম তোমার সাথে একটা জীবন নির্বাহ করতে। তোমার হাত ধরে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলাম তেপান্তের সবুজ ঘাসের মাটির বুকে। সারাজীবন তোমাকে আগলে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। ভীষণ ভালোবাসার চাদরে তোমাকে জড়িয়ে প্রজাপতির মতো উড়তে চেয়েছিলাম বিশাল আকাশে। তারা ভরা রাতে শুভ্র কাশফুলের বনে ঝিঁঝি পোকার গানে গানে দখিনা সমীরণে তোমার শাড়ির আঁচলে বাঁধতে চেয়েছিলাম একমুঠো পূর্ণিমা চাঁদের আলো। বনেরধারে অচেনা পাখির মিষ্টি গানের সুরে বসন্তের ছোঁয়া পেতে চৈতালী মনে হারাতে হারাতে শঙ্খচিলের দেশে ভেসে যেতে চেয়েছিলাম তোমাকে নিয়ে। তোমার রেশমি চুলের মৌ মৌ গন্ধে ব্যাকুল পরাণে কবিতার ছন্দে ছন্দে ডানা মেলে নাচতে চেয়েছিলাম হলুদ বিকেলের রোদ গায়ে মেখে। তোমার নরম ঠোঁটের এক চিলতে হাসির ফোয়ারায় নব রূপে সজ্জিত হওয়া আকাশটাকে গায়ে জড়িয়ে তোমাকে আরো গভীর ভাবে উপলব্ধি করে সুবোধ চিত্তে ভালোবেসে আমিও উজ্জীবিত হতে চেয়েছিলাম। সেই তুমি তবুও আমার সমস্ত স্বপ্নকে মিথ্যে প্রমাণ করে অবশেষে চলেই গিয়েছিলে সময়ের ব্যবধানে। আমাকে কষ্ট দিয়েও এতোটুকু বিচলিত হতে দেখিনি তোমাকে। বরং আমার প্রতি চরম ঘৃণা পোষণ করে অন্যের আকাশে উড়াল দিয়ে ছিলে। জগতের সব নিয়ম শৃঙ্খলাকে অগ্রাহ্য করে নিজের মতো করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলে। প্রকৃতির প্রতি তোমার বিরূপ মনোভাব ব্যক্ত করে প্রতি মুহূর্তে দিন যাপন করেছো। তুমি জানো না প্রকৃতির প্রতিশোধ কতোটা ভয়ানক হয়। প্রকৃতি চাইলে মুহূর্তেই তোমাকে নিঃশেষ করে দিতে পারে সেটা তুমি কখনোই বিশ্বাস করতে না। কিন্তু দিন শেষ তুমিও ভালো নেই। যাকে নিয়ে সুখী হতে চেয়েছিলে সেও তোমাকে করুণা করেছে। কখনোই তুমি তার প্রিয়জন হতে পারোনি। সারাক্ষণ তার মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচারে তুমি থমকে গেছো পথের বাঁকে। জীবন যতোটা সহজে তুমি উপভোগ করতে চেয়েছিলে দিন শেষে তা পারোনি । জীবন তোমাকেও প্রবঞ্চনা করে গেছে বারংবার। তুমি চাইলেও সেই জীবন থেকে আর কখনো বেরিয়ে আসতে পারবে না কোনোদিন। চোখের জলে বুক ভাসালেও সুখের আবহে আর কখনো ভাসতে পারবে না। কখনো আর সেই সুখ তুমি পাবে না। আমার মতো তোমারও সব সুখ হারিয়ে গেছে কালো মেঘের ভেলায়। সেদিন তোমাকে হঠাৎ দেখার পর প্রচণ্ড অনুশোচনায় বুকের ভিতর কালবৈশাখী ঝড়ের উপক্রম শুরু হয়েছিলো। কিছুতেই নিজেকে থামাতে পারছিলাম না আমি। কতোটা বদলে গেছো তুমি। চাঁদের মতো সুন্দর মুখখানি কালো মেঘে ঢেকে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে সুন্দর চেহারাটাকে অসুন্দর করে দিয়েছে। তোমাকে চিনতে সেদিন বড্ড কষ্ট হয়েছিলো। জানিনা আমাকে দেখার পর তোমার কেমন লেগেছিলো। তবে তোমাকে দেখে আমি সহ্য করতে পারিনি তোমার এই শারীরিক পরিবর্তন। আমার দিকে এক পলক তাকিয়েই মুখ ঢেকে ছিলে ঘোমটার অন্তরালে। বেনারসি শাড়ির আঁচলে বাঁধা সুখ দেখিনি সেদিন তোমার অবয়বে। কেমন যেন অপরাধ বোধে তুমি চুপসে গেছো আরণ্যক দৃষ্টির অন্তরালে। অস্বাভাবিক চাহনি জুড়ে নীমিলিত আচ্ছাদন। চিবুক তলে সেই কালো তিলের চিহ্নটা মিশে গেছে সময়ের পরিবর্তনে। কখনো চাইনি তুমি অসুখী হও। কোনো অপরাধে তোমাকে অপরাধী বানিয়ে অভিশাপ দেইনি কোনো কালে কোনোদিন। সব সময় চেয়েছি স্বর্গীয় সুখে তুমি সুখী হও। পৃথিবীর সব সুখের ধারায় তুমি সুখী হও। তবুও তুমি সুখী হতে না পারাটা প্রকৃতির প্রতিশোধে রূপান্তরিত হয়েছে। তোমাকে আমি সেই দিনই ক্ষমা করে দিয়েছিলাম যেদিন তুমি আমার জীবন থেকে হেসে খেলে বিদায় নিয়েছিলে। ধীরে ধীরে তোমাকে ভুলে যাওয়ার প্রত্যয়ে নতুন করে বাঁচার অঙ্গীকারে পথ চলেছি সম্মুখের দিকে। শুনেছি যার কাছে থেকে জীবনে সুখী হতে চেয়েছিলে তার কাছে তুমি চরম ভাবে উপেক্ষিত। কোনোদিন তার ভালোবাসা পাওনি তুমি। পাওনি তার স্ত্রীর পূর্ণ মর্যাদা। তবুও তার কাছে বৃথা সুখের আশায় সয়ে গেছো তার সমস্ত অত্যাচার। সে যখন অন্য মহিলার প্রতি পরকীয়া প্রেমে আসক্ত তখনও তুমি তার ঘর গোছাতে ব্যস্ত। সবকিছু জেনেও কখনো তার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাওনি তুমি। একটা নেশাগ্রস্থ মানুষের ঘর করতে যাওয়া কতোটা কষ্টকর তা তুমি হারে হারে টের পেয়েছো। অর্থ আর বিত্তের মোহে পড়ে আমাকে ছেড়ে তার কাছে চলে গিয়েছিলে। তুমি ভুলে গিয়ে ছিলে অর্থ আর বিত্ত সবসময় সুখ দিতে পারে না। কখনো কখনো কুঁড়ে ঘরেও সুখ পাওয়া যায় নির্ঘাত ভালোবাসা আর আত্মসম্মান পেলে। বড় লোকের স্ত্রী হয়েও তুমি তার কিছুই পাওনি। পেয়েছো শুধু দহনে পোড়া কষ্ট আর হৃদয় বিদারক যন্ত্রণার হাহাকার। প্রতিদিন স্বামীর মানসিক আর শারীরিক অত্যাচারে জীবন তোমার ওষ্ঠাগত। না পারছো এমন জীবন সহ্য করতে, আর না পারছো এমন জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে। শক্ত লোহার শিকলে বাঁধা তোমার পিছুটান। সন্তানের মায়ায় পড়ে সবকিছু মুখ বুঁজে সহ্য করে যাচ্ছ দিনকে দিন। ধৈর্যধারণ করে টিকিয়ে রেখেছো বড় লোক স্বামীর গৃহ সংসার। আমৃত্যু সেখানেই কাটিয়ে দেওয়ার ব্রত নিয়েছো ভাগ্যের লিখন মেনে নিয়ে। জীবন কখনো থেমে থাকে না। জীবন চলে তার আপন গতিতে। আমরা মানুষ কখনো কখনো তা নিজের মতো করে নিয়ম বানিয়ে ফেলি। কিন্তু সেই নিয়ম কখনো স্থায়ী হয় না। ভেঙে যায় প্রতিনিয়ত। যাদের সাথে নিয়ম করে কথা বলতে বলতে মায়ায় জড়িয়ে যাই, একটা সময় পর তারা হারিয়ে গেলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। মানতে কষ্ট হয়। তবুও মেনে নিতে হয়। তুমি আমাকে ছেড়ে গেলেও খুব বেশি অবাক হইনি আমি। মনে প্রাণে মেনে নিয়েছিলাম তোমার চলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো। অস্বাভাবিক ছিলে আমার কাছে তোমার থেকে যাওয়াটা। আমি তোমার যোগ্য ছিলাম কিনা সংখ্যাতীত প্রশ্ন থেকে যায়। তারপরও তোমাকে চেয়েছিলাম প্রচণ্ড ভালোবাসার বদৌলত। তোমাকে পাইনি তাও সব মেনে নিয়েছি সময়ের পরিবর্তনে। এখনো চাই যেখানে আছো অনেক বেশি ভালো থাকো। বড় লোক স্বামীর পুণ্য ভালোবাসায় বেঁচে থাকো আজীবন। আমি দূর থেকেই দেখে যাবো তোমার চির সুখের জীবন। বিধাতার সব সুখে তুমি সুখী হও জান মহাবিশ্বের যাপিত ভালোবাসায়। তোমার সাথে এই মুখোমুখি দেখা আর কোনোদিন না হোক আমার। তোমার পথের শেষে বিপরীত গন্তব্যের দিকে ঘুরে যাক আমার পৃথিবী। তুমি ভালো থাকো, সুখে থাকো। এই গল্পের তরে দীর্ঘজীবী হও পরম সুখের আচ্ছাদনে। ভালোবাসি প্রিয় নদী, পাখি, সবুজ বনানী, অমাবস্যা রাতের পূর্ণিমা চাঁদের আলো। তুমি ভালো থেকো, তুমি ভালো থেকো, তুমি অনেক বেশি ভালো থেকো...!!!
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com