বিজন মণ্ডল
যমুনা নদীর তীরে আছে গ্রাম পুরাতন।
সদাই সুখী আছে কটা ঘর
আছে এক মোড়ল মন্দ নয়
নাম তার সনাতন মিত্তির।
পথের ধারে বড়ো আম গাছের নীচে
মাচায় বসে টানে হুঁকো সর্বক্ষণ।
“ওহে রমেন যাচ্ছো কই একা?”
“আজ্ঞে কত্তা, নতুন গেরামে যাই।”
“উদ্দেশ্য যদি বলো তবে শুনতে পারি।”
“নতুন গেরামে বাদন মাঝির ডাগর একখান ছেলি আচে।
লম্বা চওড়ায় আজ্ঞে বড়ো বাবু প্রায়,
রঙে কামে ঐ গেরামে আর দুখানা নাই।
বিদেশ থেকে আসি নাকি বে কত্তি চায়!
তাই বড়ো মেয়ির তরে সম্বন্ধ কত্তি যাই।”
হুঁকো নামিয়ে মিত্তির বাবু কয়,
” হুঁ, তোমার মেয়ে ডাগর হয়েছে বটে!
শুনি অনেক কথা, যা কিছু রটে।
তবে শোনো একখান কথা,
ভালো করে দেখে শুনে ভাবিয়া করিও কাজ
যদি কিছু অর্থ লাগে,
বলিও, করিওনা কোনো লাজ।”
মাথা নাড়িয়া রমেন মাঝি
রওনা দিল আগে।
মিত্তির বাবু হুঁকো তুলিয়া
আবার টানিতে লাগে।
তিনটি ছেলে আর একটা মেয়ে
ছিল সনাতনের ঘরে।
ছোটটা মরেছে ডাকাতের হাতে
আর, মেয়ে সাপের কামড়ে।
মেজ ছেলে দেখে জমি জমা
আর, বড়োটা থাকে শহর কোলকাতা।
গেল বছর উঠেছে দু’গোলা ধান
এখনো লোকের কাছে এক গোলা পান।
বয়স হয়েছে আশি
রোগের মধ্যে হয়েছে একটু কাশি।
হুঁকোর টানে কাশতে কাশতে
যখন, মাথায় ওঠে রক্ত।
মেজ বৌ এসে বেজায় বকে
আর, বুকে তেল টেনে করে শান্ত।
বছর পাঁচেক আগে
হয়েছে পত্নী বিয়োগ।
কলাবতী সুন্দরী ছিল সে
আর ছিল কর্কট রোগ।
এখন কেবলই থাকে একা বসে
মাঝে মাঝে আসে জনা কটা লোক।
হুঁকোর লোভে কেউ কেউ আসে
কেউবা শুধু গল্প গুজব।
এমনি করে দিন কেটে যায়।
একদিন সন্ধ্যা বেলা
হুঁকো টেনে মশাই কাশিতে কাহিল
ফিরলো না শ্বাস আর।
বাড়িতে কান্নার রোল
আর, গ্রামে শোকের ছায়া।
মাঝ রাতে বড়ো ছেলে আসলো
শেষ রাতে শ্মশান যাত্রা।
আগুনের মাঝে ভষ্মিভূত হলো
সঙ্গে, পুড়লো সাধের হুঁকো।