ঘটনাটা সাম্প্রতিক সময়ের। সকালে খুব ভোরে ওঠার অভ্যাস বৈভব বাবুর। প্রতিদিনের মত আজও চিংড়ীর ঘেরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। যেতে যেতে মাঝপথেই চল্লিশটা টাকা পেলেন বৈভব বাবু।
ব্যাপারটা বাড়িতে এসে মাকে বলতেই মা বললেন টাকাটা যেনো নিজে না খরচ করে।কোন মন্দিরে বা কাউকে দান করে দিলে ভালো হয়।
বৈভব বাবু বললেন , “ঠিক আছে মা।”
সেইমতো টাকাটা তিনি গুছিয়ে রেখেছেন। কয়েক দিন কেটেগেছে।অফিসে কাজের চাপে শার্টের রেখে দেয়ার বিষয়টা ভুলে গিয়েছিলেন বৈভব বাবু। আজ যখন বংশিপুর থেকে শ্যামনগর যাওয়ার পথে ইজিবাইকের সামনে বসেছেন তখনই এলো সুযোগটা। মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা পাশের সীটে বসা।তিনি চালক কে বলছেন আমি বেলেডাঙ্গা যাবো।তো চালক বললেন
-“ঠিক আছে, আপনাকে শ্যামনগর গিয়ে আর একটা গাড়িতে উঠিয়ে দেব। “আপনি আগে শ্যামনগর পর্যন্ত চলুন “। ভদ্রমহিলা বললেন, না না আমি শ্যামনগর যাব কেন আমি তো বেলেডাঙ্গা যাব? চালক বললেন, বেলডাঙা যেতে হলে তাঁকে শ্যামনগর আগে যেতেহবে। ”
ভদ্রমহিলা তো শ্যামনগর যাবেননা বেলেডাঙ্গা যাবেন,
আর চালক তাকে শ্যামনগর নিয়ে বেলডাঙ্গার গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার জন্যে বলছেন।
এই নিয়ে দুজন বেশ কথা কাটাকাটি শুরু করেছেন। বৈভব বাবু পাশাবসে এসব শুনছিলেন। তিনি বললেন “আপনারা দুজন চুপ করুন।
চাচী আপনি কই যাবেন?
ভদ্রমহিলা বললেন আমিতো বেলডাঙ্গা যাব। কোথায় যাবেন?
বেলেডাঙ্গা বাবা।
তো ঠিক আছে আপনি বসুন আপনাকে শ্যামনগরে উনিই নামিয়ে দিবেন। তারপর আমি আপনাকে বেলডাঙ্গার গাড়িতে উঠিয়ে দেবো। ”
ভদ্রমহিলা বললেন না না বাবা আমি বেলডাঙ্গা যাব শ্যামনগর যাবোনা!
বাইকটি ততক্ষণে শ্যামনগরের কাছাকাছি এসে গেছে!
বৈভব বাবু খুব কষ্ট করে ভদ্রমহিলা কে বোঝায়ে, জানতে চাইলেন, আপনার মাথা ঠিক আছে তো!?
কেঁদে ফেললেন ভদ্রমহিলা। বললেন,”আমার একমাত্র কর্মক্ষম ছেলেটা কালিগঞ্জ হাসপাতালে। খুবই অসুস্থ। আমি যাব আমার ছেলের কাছে। তো আমার যাওয়ার টাকা নেই। আমার মাথা সত্যি খারাপ হয়ে গেছে বাবা!
বৈভব বাবু ভদ্রমহিলাকে বললেন কত টাকা দিলে আপনি যেতে পারবেন? তিনি বললেন 50 টাকা।
বৈভব মমতাকে পঞ্চাশটা টাকা দিয়ে শ্যামনগর থেকে একটা গাড়িতে বেলেডাঙ্গার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলেন। তারপর অফিসে গিয়ে ভাবছিলেন মনে মনে তিনি
একটা ভালো কাজ করতে পেরেছেন। বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করলেন তিনি।
বাড়ি থেকে হঠাৎ করে মায়ের ফোন এলো, তোর সাট্টা সাবান দিতে গিয়ে দেখলাম তোর পকেটে সেই চল্লিশ টাকা। কোন মন্দিরে বা কাউকে দিতে বলেছিলাম না?
বৈভব বাবু বললেন, হ্যাঁ দিয়েছে আজকেই দিয়েছি!
আমি বুঝলাম না তোর কোন কথা!
বৈভব বাবু সব কিছু খুলে বললেন মাকে। তিনি সব শুনে খুব খুশি হলেন। এদিকে বৈভব বাবু নিজেও মনে মনে খুব তৃপ্তি পেলেন। ছেলেটার জন্য, অর্থাৎ ভদ্রমহিলার ছেলেটার জন্য , প্রার্থনা করলেন। ছেলেটা যেনো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে তাঁর মায়ের কোলে ফিরে যায়। আবার যদি দেখা হয়, যেন ওই মায়ের মুখে হাসি টা খুজে পাই! কারণ পৃথিবীতে মায়ের হাসির মতো পবিত্র আর কিছুই নাই!