তিন রাস্তার মোড়ে পুকুরের ধারে পরিত্যক্ত ছাদের বাড়িটার বারান্দায় এলোমেলো সাজানো রয়েছে গরু-ছাগলের ভূসি বা খাবার। অনেকটা ভাঙা ও পরিত্যাক্ত হাড়িপাতিলের মত। তরুণ খরিদদারদের ভিড়ই বেশি এখানে। ফ্রী পাওয়া বা মাঠে পড়ে থাকা অবশিষ্ট ধান কুড়ানোর মত কিছু কুড়াতে আসে তরুণ খরিদদারেরা। গোলাপী রঙের থলথলে শরীর নিয়ে কখনো দাঁড়িয়ে থাকে, কখনো এদিক-সেদিক একটু আধটু হাঁটাহাঁটি করে রঙ্গিলা। রঙ্গিলায় এ দোকানের মালিক। ফর্সা সুন্দরী এ মহিলার মুখে হাসি লেগেই থাকে। অনেকেই তাকে 'সুন্দরী বু' বলেও ডাকে। গ্রাম বা পাশপাশের গরুছাগলের মালিকরা খাবার কিনে বস্তায় ভর্তি করে নসিমন বা করিমনে করে নিয়ে যায়। আবার যারা একটু টাকা-পয়সাওয়ালা মানুষ, তারা বস্তা ধরেই কিনে নিয়ে যায়। রঙ্গিলার স্বামী রহিম খুনকার ঘরে কী হয় বা হচ্ছে সে খবর রাখে না। উদাসীন মানসিকতা নিয়ে উদ্ভ্রান্ত ঘোরে সে। এক সময় রহিম খোন্দকারের বেশ নাম-ডাক ছিল। ভালো ফুটবল খেলতো। যৌবনের উদ্দামতায় লড়াকুভাবে ঘুরতো।
ফুটবলের দিন প্রায় শেষ হয়ে আসে ক্রিকেট খেলার আগমণে। তাছাড়া রহিম খোন্দকারের একটা পা ভেঙে গেলে, ডাক্তারের পরামর্শে খেলা বন্ধ করে দেয়। সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে আর্থিক অবস্থাও দিন দিন খারাপ হয়ে যায়। সে কারণে রহিম খোন্দকারকে একটু ডিমোশোন দিয়ে, সবাই রহিম খুনকার বলেই ডাকে। এক ধরনের আর্থিক ও সামাজিক পরিবর্তনের নাম রহিম খুনকার। রঙ্গিলা যখন তরুণী ছিল তখন রহিম খুনকারের তারণ্যে ও খেলার সুনামেই তার প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু রঙ্গিলার পূর্ব ইতিহাস এবং আর্থিক দৈন্যতার কারণে তাদের দু'জনের ভালোবাসায় ভাটা পড়ে। প্রেমে পড়ে আবেগে বিয়ে করলেও কিছুদিনের মধ্যেই আগের আবেগ ও অনুভূতি কমতে থাকে। কমতে কমতে এখন প্রায় শূন্যের কোটায় চলে এসেছে। নর্দমার পানি শুকাতে শুকাতে এখন ধান চাষ হয় রঙ্গিলার শরীরে। সে সবুজ ধানের ঝাড় খুটায়ে খুটায়ে চোখ মেলে দেখতে থাকে খরিদদারেরা। খরিদদারেরা এই ফ্রী ভাবে, তাদের চোখের তৃপ্তি মেটাতে ঘনঘন আসে। সেটা রঙ্গিলা বোঝে না, এমন নয়। বরং বুঝেই সে সেজেগুজে থাকে, বেশি ভূসি বিক্রির অপেক্ষায় থাকে। থাকে আরো দুটো তরুণী মেয়ে।
রহিম খুনকার বাড়ি এসে দুমুঠো খেয়েই চলে যায় বাজারের চা'র স্টলে অথবা কোনো বকাটেদের আড্ডার আসরে। কখনো কখনো তাস খেলার আসরে বসে সময় কাটিয়ে দেয়। রঙ্গিলার ঘরে এখন বিয়ের উপযুক্ত দুটি মেয়ে। তারাও বেশ সুন্দরী। তবে কথায় আছে, 'ধনীলোকের মেয়ে কোনো ছেলের হাত ধরে চলে গেলে লোকে বলে প্রেম করে বিয়ে করেছে। অপরদিকে গরীবলোকের মেয়ে কোনো ছেলের হাত ধরে চলে গেলে লোকে বলে, বেরিয়ে গেছে।'
সে রকম ঘটনায় ঘটেছে রঙ্গিলার মেয়ে দু'টার ক্ষেত্রে। দু'দু বার এলাকার এক তরুণ ছেলের হাত ধরে বড় মেয়েটা চলে গেলেও বিয়েটা আর হয়নি পুলিশি দাপটে। বিয়ে না হওয়ার কারণ হিসেবে পাশের বাড়ির চেয়ারম্যানের ছেলেকেই সবাই দায়ী করে। ছোট মেয়েটা বেশ সংযত হয়েই চলাফেরা করে। তারপরও ইভটিজিং থেকে রক্ষা পায় না। তবুও সব মেনে নিয়ে মাথা নিচু করে, কোনো দিকে না তাকিয়ে,কানে তালা দিয়ে পথ চলার চেষ্টা করে সে। রঙ্গিলার মা ময়না খাতুন এখান থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে আবুরি গ্রামের জমিদার বাড়ি কাজ করতো। সেই বাড়িতেই জমিদারপুত্রের লালসার শিকার হতে হতে ময়না খাতুন গর্ভবতী হয়ে পড়ে। এরপর ময়না খাতুনকে পালিয়ে আসতে বাধ্য করে জমিদার পুত্র।
এক অন্ধকার রাতে পালিয়ে এসে বাবুপাড়ার এই পরিত্যাক্ত বাড়িতে থাকা শুরু করে ময়না খাতুন।
এ বাড়িটা আবুরির জমিদারদেরই ছিল। জমিদার পুত্রই তার থাকার ব্যবস্থা করেছিল। জমিদার প্রথা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়। বিলুপ্ত হয় সমাজের হাজারো নিয়মকানুন।
এখন খাস জমি হিসেবে পড়ে রয়েছে বাড়িটা। এখানেই ময়না খাতুন শেষ জীবন পর্যন্ত কাটিয়ে দেয়। তবে অনেক পুরুষই তার গোপন সঙ্গী ছিল। সে খবর তেমন কেউ জানতে পারেনি তখন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনাদের ক্যাম্প হয় পাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলনীতে। সেখানে ভাত রান্না করতে বাধ্য হয় মুসলিমলীগের কিছু নেতার কারণে। তারা ময়না খাতুনকে পাকসেনাদের কাছে থাকতে বাধ্য করে। সেই পাকসেনাদের ক্যাম্পেই মারা যায় ময়না খাতুন। পাক হানাদার বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার সময় ময়না খাতুনকে গুলি করে মেরে ফেলে, চলে যায়। সদ্য স্বাধীন দেশে ময়না খাতুনের মেয়ে হিসেবে, মানুষের সহানুভূতির কারণে রঙ্গিলা এ বাড়িতে থাকতে পারে। তাকে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তখন রঙ্গিলা নবম শ্রেণিতে ভর্তিও হয়। ঠিক এক বছরের মাথায় রহিম খুনকার নিজের বাড়িঘর ছেড়ে এসে, রঙ্গিলার সাথে গোপনে থাকা শুরু করে। তার কিছুদিন পর তারা বিয়ে করে।
অনেক চড়াই-উৎরায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পরিত্যাক্ত এ বাড়িতে রঙ্গিলা আর রহিম খুনকারের সংসার জীবন। এ জীবনের শুরুর প্রথম বছরেই বড় মেয়ে আলেয়ার জন্ম হয়। ঠিক দ্বিতীয় বছরই ছোট মেয়ে আমেনার জন্ম হয়। আমেনার জন্মের পর থেকে রহিম খুনকার তিক্ত-বিরক্ত হতে থাকে। এরও দু'বছর পর তৃতীয় মেয়ের জন্ম হয়। তৃতীয় মেয়ের জন্মের পর রহিম খুনকারের মন বিগড়িয়ে যায়। সে ঘর ছাড়া হতে শুরু করে। অযত্নে অবহেলায় এবং বিনাচিকিৎসায় মারা যায় শিশুকালেই তৃতীয় মেয়েটি। দুঃখকে বুকে চেপে রেখে, অনেক অনেক চেষ্টা করে ভালোবেসে, মিষ্টি করে, রঙ্গিলা ভালো কোনো কথা বললেও রহিম খুনকার মা-ময়না খাতুনের কথা তুলে ধরে।
তার মা ময়না খাতুনের চরিত্রের কথা বললেই রঙ্গিলা নীরব হয়ে যায়, গোপনে চোখের পানি মোছে। দু'জনের মন রেললাইনের মত এঁকেবেঁকে দুদিকে চলা শুরু করে। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। এক সময় এলাকায় গরু-ছাগলের ছোট ছোট পারিপারিবারিক খামার গড়ে ওঠে। সেটা দেখে, কম পুঁজি নিয়ে রঙ্গিলা গরু-ছাগলের ভূঁসি বিক্রি করা শুরু করে। বাড়ির বারান্দাটা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে দেওয়ালের সিমেন্ট খসে খসে পড়ে। সেই খসে পড়া সিমেন্টের মাঝেই বস্তা ভরে বাজার থেকে ভূঁসি এনে সাজিয়ে রাখে। ধীরে ধীরে প্রচার হতে থাকে, রঙ্গিলা তার ভাঙাবাড়ির বারান্দায় ভূঁসির দোকান দিয়েছে।
এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় না। বাড়তে থাকে খরিদদার। দূর গ্রাম থেকে ভটভটিতে চড়ে এসে, কৃষকরা ভূঁসি কিনে নিয়ে যায়। ভূঁসি বিক্রির সাথে সাথে প্রচার হতে থাকে রঙ্গিলার শরীর ও হাসিমাখা মুখের বর্ণনা।
গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে দোকানীর রুপের বর্ণনা। বুঝতে বাকি থাকে না রহিম খুনকারের। রহিম খুনকার হালকা গাজা খাওয়া শুরু করে এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য নেশাদ্রব্য খেতে থাকে। রঙ্গিলা তাকে কিছুই বলে না।
প্রথম প্রথম দু'একটি কথা বলার চেষ্টা করেছে, বলতে গিয়ে উল্টো রঙ্গিলার চরিত্র নিয়েও কথা বলতে বাকি রাখে না রহিম খুনকার, মাগীর ঢলঢলো শরীল দেকেই তো গাঁ থিকা নাগর আসে ভূঁসি কেনে।
রঙ্গিলা নীরব হয়ে যায়। ঘরে বিয়ের উপযুক্ত দু'দুডো মেয়ি। আঁচলে চোখে মুছতে মুছতে দূরে সরে যায়। হাতে যা টাকা থাকে, সে টাকা রহিম খুনকারের পায়ের কাছে ফেলে রেখে যায়।
রহিম খুনকার কাইত হয়ে ঘাড় নিচু করে টাকাগুলো কুড়িয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এভাবে দু'জনের জীবনের দু'রকম রুটিন শুরু হয়ে যায়।
একদিন ভরসন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে, ভটভটির শব্দে, আলেয়াকে রঙ্গিলা বলে, দেখতো মা কোন্ খরিদদার আইলু কি?
আলেয়া দেখছি মা বলে বারান্দায় আসে।
ভটভটি ওয়ালার কাছে মেপে দেয় ভূঁসি। ভূঁসি মাপতে মাপতে খিলখিলিয়ে হাসে উচ্চস্বরে।
বাড়ির ভিতর থেকে রঙ্গিলা চিৎকার করে, ভরসন্ধ্যায় অত জোরে হাসতে নেই মা।
দু:খ-কষ্ট রঙিলাকে দিনে দিনে সহনশীল করে তুলেছে। সে রকমই সাবধানবাণী রঙিলার মুখ থেকে বের হয়।
আলেয়াও মায়ের উচ্চকণ্ঠ শুনে হালকা অপ্রস্তত হয়ে যায়।
তারপর বাড়ির ভিতরে গিয়ে মায়ের হাতে টাকা দেয়। মা নিশ্চিন্তে তার মেয়ের কাছ থেকে টাকাগুলো নিয়ে রান্না করতে বসে, রান্না ঘরে। রাত হয়। এক সময় লক্ষ্য করে আলেয়া ঘরে নেই, সুনসান অন্ধকার রাত।তবে বিদ্যুতের আলো রয়েছে, যেন নীরবে আলো দিয়ে যাচ্ছে। মনে মনে খুঁজতে থাকে, এদিক-ওদিকে ঢো-মারে, কোথাও নেই। নেই তো, নেই-ই। মনে মনে গোপনে খুঁজে খুঁজে চুপ হয়ে যায়। মুখে কুলুপ মেরে বসে থাকে। রহিম খুনকার অনেক রাতে বাড়ি ফেরে। রঙ্গিলা স্বামীকেও কিছু বলে না। নীরবে বুকের কষ্ট বুকে পুষে রাখে। এ-রকম অনেক রাত অনেক কষ্টে কেটেছে। আবার স্বাভাবিকও হয়ে গেছে। গাছের ডালের কুয়াশার মত টপটপ কয়েক ফোটা পানি পড়ে চোখ থেকে। ছোট মেয়ের দিকে তাকায়। সেও চুপচাপ বসে থাকে।
হঠাৎ চেয়ারম্যানের বাড়ির কাজের মেয়েটা বিড়াল পায়ে পা ফেলে রঙ্গিলার সামনে আসে। এসে ফিসফিস করে বলে যায়, ও বু আলেয়া ওই ভটভটিতে চড়ে সন্ধ্যঘোরে কনে গেল?
বুকের ভিতর ধক করে ওঠে, মনে মনে বলে আবার মেয়েটা পালিয়ে গেল নাকি!
রঙ্গিলা মনে মনে বুঝেই নেয়, আলেয়া আবারো পালিয়েছে। এর আগেও দু'বার বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু চেয়ারম্যানের ছেলের লালসার কারণে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছিল। তবে আলেয়া এতই শক্ত মেয়ে যে,শত চেষ্টা করেও চেয়ারম্যানের ছেলে আলেয়াকে বিছানায় নিতে পারেনি। যে কারণে আলেয়ার প্রতি এক ধরনের বিশ্বাসও আছে তার মা'র। দিনে দিনে না পাওয়ার আগ্রহটা চেয়ারম্যানের ছেলেকে হিংস্র করে তুলেছে। আলেয়া এবার সুযোগ মত বাড়ি ছেড়েছে। সামনেই আবার নির্বাচন। চেয়ারম্যান সাহেবের বয়স হওয়ার কারণে তার ছেলে নির্বাচনে প্রার্থী হবে। জনগণের দ্বারে দ্বারে ভোটের জন্য যাচ্ছে,নিজেকে ভালো প্রমাণ করার জন্য দৌড়াচ্ছে। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ হয়ে যাওয়ায় তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সরকারী দলের বড় বড় নেতাদের কাছে ঘুরছে। যদি সরকারীদলের প্রতিকটা পেয়ে যায় তাহলে জিতবে নিশ্চিত। কারণ ভোটের আগের রাতেই ভোট ব্যালট-পেপার বাক্স বন্দি হয়ে যায়।
বর্তমান চেয়ারম্যান সাহেব এমপি সাহেবের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে পারেনি। তাই প্রতিক না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বুঝে-শুনে চেয়ারম্যানের ছেলে নেতাদের কাছে না গিয়ে জনগণের কাছে ঘেউ ঘেউ করছে। অপরদিকে বিরোধীদলের প্রতিক নিতেও টাকা লাগে। দু'দলের প্রতিক বেচাকেনার ব্যবসার কাছে জনগণ নগন্য হয়ে যাচ্ছে।তারপরও জনগণের কাছে শেষ আশ্রয় ভাবছে চেয়ারম্যানের ছেলে। আলেয়ার দিকে নজর দেওয়ার সময় তার এখন একটু কমই।
এদিকে আলেয়া ভটভটিতে চড়ে চলে গেছে বিশ কিলোমিটার দূরে আবুরি গ্রামে। সেই জমিদার বাড়ি। যেখান থেকে তার নানী পালিয়ে এসেছিল। এখন আর জমিদার বাড়ি নেই। আছে এক গৃহস্থের বাড়ি। সেই গৃহস্থের ছেলের সাথে পৌঁছিয়ে যায় ওই বাড়িতে।পৌঁছিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে, কে এই মেয়েটা? হুবহু আলেয়ার মা'র ফটোকপি। সেই চুল, সেই নাদুস-নুদুস শরীর। পার্থক্য শুধু পোষাকের। এই মেয়েটার পরণে ভালো শাড়ি এবং ভালো ব্লাউজ। অপর দিকে রঙ্গিলার পরণে থাকে সালোয়ার কামিজ। বেশ ধান্দায় পড়ে যায় আলেয়া। হাঁটা-চলা অথবা কথা বলার ঢঙ একেবারেই তার মায়ের মত। এরপর আলেয়া উঠানে দাঁড়িয়েই থাকে। নীরবে অথচ ভিখারির বেশে। বাতাসহীন তালগাছটা যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এমন সময় আলিমের মা জিজ্ঞাসা করে, কে বাবা মেয়েটি? যে ছেলেটি ভটভটিতে করে আলেয়াকে নিয়ে এসেছে তার নাম আলিম। আলিম তার মায়ের দিকে না তাকিয়ে বলে, ওর নাম আলেয়া। ওই যে গল্প করেছিলাম, ভূঁসি বিক্রেতা মহিলাটি তোমার মত দেখতে তারই মেয়ে।
- তুই নিয়ে আসলি ক্যান?
- অনেকদিন থেকেই ওকে দেখে দেখে আমার পছন্দ হয়ে গেছে মা।
- তে, না জানিয়ে নিয়ে আসলি?
- হ্যাঁ মা। তোমাকেও জানাইনি, আবার আলেয়াদের বাড়িতেও জানাতে পারিনি। হঠাৎ কাছে পেয়ে কী মনে হলো, নিয়ে চলে এলাম।
- কোনো ঝামিলা হবে নাতো?
- মা, তুমি ঘরে তুলে নিলে, আজই মোল্লা ডেকে বিয়ে করে ফেলবো।
- কী পাগল ছেলেরে!
- হ্যাঁ মা, ওকে দেখে মাঝে মাঝে পাগল হয়েই যেতাম। বলতে তো পারিনি, তাই সুযোগ বুঝে নিয়েই এলাম।
আলিম তার মার কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে বলে, মা তুমি কোনো ওজড়-আপত্তি করবা নাতো?
- না-রে পাগল, তুই আমার একমাত্র সন্তান। এই ভিটি রক্ষা করার মালিক তুই। তোর খুশিতেই আমি খুশি।
আলেয়া যেন আর এক মা কাছে পেয়ে যায়। বুকের ভিতর বাসর-ঝলক ঝলমলিয়ে ওঠে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com