ঈদ মানে একটা সময় আনন্দের হৈ-হুল্লোড়ের দিন ছিলো। সারা বছর অপেক্ষা করতাম। সবাই মিলে দিন গুনতাম, পাড়ার খেলার সাথীরা স্কুলের সাথীরা একসঙ্গে খেলার সময় মাটিতে দাগ কাটতাম আর বলতাম এই তো আর ক'দিন। ঈদের আমেজ থাকতো ঈদের আগের ও পরের দিনগুলো মিলিয়ে। ঈদের কাঙ্ক্ষিত দিনটিই নয় অপেক্ষা করতাম চাঁদরাত মেহেদী জুড়োনো রাঙা হাত কার আগে কে ঈদ মুবারক বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারি এগুলো নিয়ে ও অপেক্ষার প্রহর গুনতাম। ঈদের পোশাক নিয়ে সে কি খুনসুটি তখন কেউ কাউকে ঈদের আগে ঈদের জামা দেখালে পুরোনো হয়ে যাবে বলে ভাবতাম। ঈদের আগ পর্যন্ত জামা না দেখানোর কি লুকোচুরি খেলা। এগুলোতে ছিলো প্রচুর আনন্দ। আমার শৈশবের ঈদ গুলি ছিলো ভীষণ আনন্দের।
তখন বাড়ির সামনে একটা মস্ত বড় পুরোনো আমলের শিমুলগাছ ছিলো ওই শিমুল গাছতলায় বসার জায়গা করা ছিলো ওখানে বসে বড়রা আলোচনা করতো আমরা ছোটরা ও তখন সেখানে জড় হতাম কুরবানির বিষয়ে যখন আলোচনা হতো আমরা ছোট্টরা শুনতাম। সে সময় অনেকেই যৌথভাবে মিলে একটি গরু কুরবানি হতো তখন আমরা ছোটরা ও বায়না ধরতাম বড়দের সঙ্গে কুরবানির গরু দেখতে যাওয়ার। গরু নিয়ে আসা হলে দেখতাম গরুর ডাগর ডাগর চোখে কেমন পানি লেগে থাকে, গরু সেরকম খায় না। তখন দাদা ভাই কে এ নিয়ে খুব জিজ্ঞেস করতাম "গরু খায় না কেনো দাদা, গরু কাদেঁ কেনো?" দাদা ভাই বলতো" এমনিতেই বুড়ি ওরা ওদের বাড়ি থেকে চলে এসেছে তো তাই মন খারাপ বিদায়ের জন্য " তখন বুঝতাম না বিদায়ের মানে কি।
তখন গরুর পাশে গিয়ে হাত বুলিয়ে দিতাম। সবচেয়ে মজা হতো ঈদের আগের দিন তখন আব্বু থাকতেন সৌদি আরব প্রবাসে আগের দিন সেখানে ঈদ আব্বুকে ফোনে 'ঈদ মুবারক' বলতাম, আমাদের গরুর ভাগ নেয়ার গল্প শোনাতাম। পাড়ার সব ছেলে মেয়েরা বিকেল না গড়াতেই সবাই কে ডেকে নিয়ে জড়ো হতো, আমি আমার খেলার সাথী রিচির হাত ধরে যেতাম চাঁদ দেখতে। পাড়ার এক প্রান্তে যেখানে অনেক মেসওয়াকের গাছ পাওয়া যেতো ওখানে বিশাল একটা বটগাছ ছিলো ওই গাছের পাশ দিয়ে চাঁদ দেখা যেতো চাঁদ দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষার শেষ থাকতো না।চাঁদ দেখা গেলেই উল্লাসের সঙ্গে চিৎকার করে সবাই 'চাঁদ উঠেছে চাঁদ উঠেছে বলতাম। সন্ধ্যে নামতেই শুরু হয়ে যেতো বড় বোনদের থেকে মেহেদী নেয়ার পর্ব শুরু বাড়ির বড় ঘরের মেঝেতে জায়গা দেয়া যেতো না মেহেদী হাতে পড়তে কচিঁকাচাদের মিলনমেলা বসে যেতো। সারারাত গল্প করা, মেহেদী নেয়ার পর খুব ভোরে সবাই সবাই কে রাঙা হাত দেখানোর পালা তারপর জামা কাপড় পড়ে সবাই সবার জামা দেখতাম, সেমাই খেতাম, ঈদের নামাজ শেষে বাড়ির ছেলেরা আসতো। তারপর শুরু হতো কোরবানির পালা, পশু কোরবানির সময় আম্মু আমায় ভুলিয়ে ভালিয়ে বেড়াতে পাঠিয়ে দিতো দেখে কান্না করবো জন্য। বেড়ানো শেষে এসে দেখতাম কোরবানি দেয়া হয়ে গেছে, এবারে ভাগের গোশত নেয়ার পর্ব । তারপর গোশত বিলি করার পর্ব শুরু বাড়ির বড়দের সঙ্গে আমি গোশত বিলি করতে যেতাম বেশ ভালো লাগতো। আমাদের বাড়িতে সবাই আসতো সালামী নিতে আম্মুর থেকে সকলের সঙ্গে আমিও সালামী নিতাম। রিচি আমায় ঝুমকো জবা বলতো সাজগোজ করিয়ে দিলে আমি বলতাম, 'তুমি ও তো লাল পরী' আব্বু কল দিতে সারাদিন কোথায় কি করলাম এই গল্পগুলো বলতাম এই আনন্দগুলো কোথায় জেনো কালক্রমে হারিয়ে গেলো সেই ঈদ আমেজ আর এখন নেই তবে স্মৃতির পাতায় দিনগুলো অম্লান হয়ে আছে। পাকশীতে কাটানো শৈশবের ঈদ আনন্দের কথা খুব মনে পড়ে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com