ভালোবাসা মানে হলো দুটি মনের বন্ধন। ভালোবাসা এমন একটি মায়া যেথায় একবার জড়ালে বোঝা যায়। তেমনি- ভালোবাসায় থাকে হাসি কান্না দুঃখ বেদনা। ভালোবাসলে হাসি কান্না দুঃখ বেদনা সব সইতে হয়। এই মনের স্পন্দনে একবার যদি মন ভেঙে যায় তাহলে বোঝা যায় এটা কতটা কষ্টকর । তেমনি আব্দুল্লা ও কথা দু"জনের মধ্যে একটা ভালোলাগা ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। এই ভালোবাসা যে বেদনাদায়ক হবে তা জানে না আব্দুল্লা ও কথা। শহরের এক বাণিজ্য মেলায় হঠাৎ দেখা হয় আব্দুল্লা ও কথার। সেই বাণিজ্য মেলায় বিকেলবেলায় আব্দুল্লা তার বন্ধু বান্ধবের সাথে অবসর সময়ে ঘুরতে যায়। বাণিজ্য মেলায় টিকিট কেটে প্রবেশ করে গেটের পাশেই বসে চা পান করছিল গল্পের আসরে বসে।একটু পরে ভিতরে ঘুরে দেখার জন্য, ভিতরে ঢুকতে চোখে পড়লো নানান ধরনের খুবই সুন্দর দ্রব্যসামগ্রীর দোকান। সেই দোকানের পাশে ছিল একটা বটগাছ। এক বিদ্যালয় মাঠে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। ঐ বটগাছের নিচে বসে আছে আব্দুল্লা। হঠাৎ করে একটি পরীর মতো মেয়ের আগমন ঘটে। আব্দুল্লা দেখে তো অবাক, আগমন হওয়ার পরেই পাশে এসে বসে পড়লো এবং বলে উঠলো কেমন আছেন আব্দুল্লা অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে চেয়ে রইলো কারণ মেয়েটিকে আব্দুল্লা কোনোদিন দেখেনি আর কথা বলা তো দুরে থাক। কিছু সময় পরে আব্দুল্লা বললো আছি ভালোই আপনি, মেয়েটি জবাবাে বললো আছি একরকম। যাই হোক আমরা তো কথা বলছি পরিচয় নাম জানা হলো না তো কারো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো আমি কথা আপনি আব্দুল্লা কি করবে ভাবছে শেষে হঠাৎ করে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো আমি আব্দুল্লা। কথা বললো এখন তো আমরা বন্ধু হলাম তাই না। এখন বসে কিছুক্ষণ গল্প করি।
একটু সামনে গিয়ে নির্জন বটতলায় দু'জন বসলো। বসার পর কথা বললো আমি আপনাকে খুবই পছন্দ করি। আপনাকে আজ বাণিজ্য মেলায় এসে ফলো করছি। শেষ পর্যন্ত দেখা হয়ে গেল ভালো লাগলো। আপনার ফেসবুক আইডি পাওয়া যাবে। একটু দিয়েন তো মাঝে মধ্যে কথাবার্তা বলবো। আব্দুল্লা বললো আচ্ছা নিতে পারেন। কিছুসময় পর দু'জনে চলে যায় দুজনের গন্তব্যে। সেদিন কথা আব্দুল্লার সাথে কথা বার্তা বলতে পেরে খুবই খুশি ছিল। আব্দুল্লার বাণিজ্য মেলা থেকে সন্ধ্যা বেলায় বাসায় যায়। মোটামুটি সবার সাথে কথা বলতে বলতে রাত নয়টা বেজে গেল। এবার এলো খাওয়া পালা মা ডাকছে কই তোমরা খেতে আসো। আব্দুল্লা বাবা বোন সহ খাবার টেবিলে খেতে গেল। কিছুসময়ের মধ্যে খাওয়া শেষ হলো। খাওয়ার শেষ হওয়ার দু তিন মিনিট পরে মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো। মোবাইল বের করে দেখলো আব্দুল্লা। অচেনা নম্বর কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে ঘুমাতে গেল। রুমে প্রবেশ না করতে আবারো একটি মেসেজ আসলো। তখন আব্দুল্লা এমনিতেই উত্তর দিলো কে আপনি? বলে উঠলো আমি কথা। আব্দুল্লা বললো ওহ তুমি হ্যা কথা নানান আলাপচারিতা করলো শেষে বললো আগামীকাল তুমি আমার সাথে দেখা করতে পারবে। বিকেলবেলার ঐ দর্শনীয় স্থানের নদীর পাড়ে একা। আব্দুল্লা বললো কেন? কথা খুবই অনুরোধ করলো দেখা করার জন্য, আব্দুল্লা মুখ ফসকে বলে উঠলো আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখা করবো। এই কথা বলে আব্দুল্লা ঘুমিয়ে পড়লো। সকালের সূর্যের আলো জানালা দিয়ে ঢুকে চোখের উপর পড়লো আব্দুল্লার। ঘুম ভেঙে গেল, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলো এবং কলেজের উদ্দেশ্য করে রওনা করলো৷ কলেজে কাউকে কথার কথা বললো না। ক্লাস শেষ হয়েছিল প্রায় আধ ঘন্টা আগে আব্দুল্লারা মাঠে কয়েকজন বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডা দিয়ে কিছু সময় পার করার পর বাসায় চলে আসে। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নেয়। মোবাইল হাতে নিয়ে একটু গান শুনতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে আব্দুল্লা নিজে জানে না। হঠাৎ করে বেজে উঠলো মেসেজের আওয়াজ। ঘুম ভেঙে গেল আব্দুল্লার।
চোখ খুলে মেসেজ পড়তে চমকে গেল। কথার এসএমএস লিখেছে কোথায় তুমি? তখন মনে হলো আব্দুল্লার আমার তো দেখা করার কথা ছিল। তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে পৌছে গেল সেই দর্শনীয় স্থানের নদীর পাড়ে। যেয়ে দেখে কথা একা বসে আছে। আব্দুল্লা তো মনে মনে ভাবছে আজ তো মনে হয় কথা খুবই রাগ করেছে। প্রথম আজ কি জন্য ডাকছে সেটাও তো জানি না। আব্দুল্লা বলে মনে যাই হউক যা আছে কপালে যাই দেখা করি। কথার সামনে না যেয়ে আগে আব্দুল্লা পিছনে গিয়ে দাড়িয়ে ছিল। আব্দুল্লা মনে করেছিল কথা আগে দেখতে পারবে না। আব্দুল্লা পিছনে দাঁড়ানো মাত্র কথার সামনে ছায়া পড়লো তাতে কথা এক লাফে উঠে বললো আসতে এত দেরি হলো কেন? এমনভাবে জেরা করছে যেন সে জজ। আব্দুল্লা নানা অজুহাতে বোঝালো। কথার রাগ কমামাত্র কথা ব্যাগ থেকে একটা টকটকে লাল গোলাপ বের করে হাতে দিয়ে বললো তোমার জীবনসাথী করবে সারাজীবন। আব্দুল্লা কথার হাতটি ধরে কথাকে উঠালো বললো তোমাকে সারাজীবন জীবন সাথী হিসেবে সঙ্গী করে নিলাম। যতই আসুক কোনো বাঁধা বিপত্তি তারপরও দু'জনকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। যখনই আব্দুল্লা বলছে তোমাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে করে নিলাম। তখনই কথা এত খুশি হলো যা ভাবনার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় না।
সেদিন দুজন দুজনের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বেশ কিছু দূর হেঁটে গেল নদীর পাড়ে। চারিদিকে সুন্দর সাদা কাশফুল ফুটে আছে। দেখতে ভারি সুন্দর যেতে যেতে কথা কাশফুল ছিড়ে হাতে নেয়। দেখতে দেখতে কেটে গেল কিছুসময়। কতোই না প্রথমে ভালো লাগলো। রাতের বেলা ফোনে কথা বলা। ভালোমন্দ জানা কথাবার্তা বলা ইত্যাদি ইত্যাদি। কলেজ ভার্সিটি যায় একসাথে বেশ সময় কাটে একজন আসতে দেরি হলে আরেকজন দেরি করত কখন সে আসবে। আসলে দু'জনে একসাথে ফিরে। বন্ধের দিনে দু'জন হাত ধরে ঘুরত নানা স্থানে এভাবে কেটে যায় দুটি বছর। হঠাৎ কথার বাবা কথার বিয়ের আলোচনা শুরু করলো। নানা ছবি দেখায় কথাকে কিন্তু কথার কোনো ছবি পছন্দ হয় না। হঠাৎ করে বললো কথা তার বাবাকে বললো বাবা আমি একজনকে অনেক ভালোবাসি। বাবা রাগান্বিত হয়ে বলে উঠলো কে সে? কথা উওরে বললো নাম তার আব্দুল্লা। কথার বাবা বললো ডাক দাও সেই ছেলেকে আমি কথা বলবো। কথা আর জানে না এটায়
আব্দুল্লার সাথে শেষ দেখা হবে। কথা খুব খুশিতে আব্দুল্লা কে ফোন দিয়ে বললো বাবা তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে আজকে তুমি আসো। হঠাৎ এই কথা শুনে আব্দুল্লা তো বেশ খুশি। সময় করে নতুন শার্ট প্যান্ট জুতা পরে রওনা হলো কথার বাসায়। আব্দুল্লা জানে না যে এটাই তার শেষ দেখা। বাসার নিচে গিয়ে কথাকে ফোন দিলো আব্দুল্লা। আমি চলে এসেছি কথা বললো উপরে আসো। উপরে উঠে বাসার কলিং বেল চাপ দিলো কথা দৌড়ে এসে দরজা খুললো। আব্দুল্লা বাসার ভিতরে প্রবেশ করে কথার বাবাকে সালাম দিলো। কথার বাবা সোফায় বসে ছিলো। কথার বাবা বললো বসো। নানান কথা বললো। বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো। শেষে বললো বাবা মন খারাপ করো না আমি তোমার সাথে কথার বিয়ে দিতে পারছি না। কারণ,আমি কথার বিয়ে ঠিক করছি। আমি তোমার সাথে মেনে নিতে পারছি না। যাই হোক কিছু মনে করো না। তুমি এখন আসতে পারো। ধন্যবাদ এই কথা শুনে আব্দুল্লা আকাশ থেকে পড়লো। মুখের হাসি হঠাৎ করে হারিয়ে গেল। কথা তো চোখের পানি মুছতে মুছতে দৌড়ে যায় নিজের রুমে। আর আব্দুল্লা উঠে চলে গেল নিজের উদ্দেশ্য করে। হঠাৎ ডাক দিয়ে বললো আগামী শুক্রবার বিয়ে তোমার দাওয়াত রইলো। চোখের পানি মুছতে মুছতে আব্দুল্লা চলে আসে। কথার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রইলো না। বিয়ের দিন রাস্তায় আব্দুল্লা দেখে আর চোখের জল ঝরায়। আর বলে ভালোবেসে যদি পাশে নাই থাকলি,তবে এত স্বপ্ন দেখাইলি কেন? যেথায় থাকিস ভালো থাকিস তোর জন্য সবসময় দোয়া ও শুভকামনা রইলো। বিয়ের বছর দুয়েক পর হঠাৎ একদিন
রেষ্টুরেন্টে দেখা আব্দুল্লা বসে কফি খাচ্ছে। হঠাৎ সেই রেস্টুরেন্টে কথার আগমন আব্দুল্লার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় থমকে দাড়িয়ে কথা বললো কেমন আছো।আব্দুল্লা বললো যেমন রেখে গেছো তেমন আছি। আমার কথা বাদ দাও তুমি কেমন আছো কথা বললো আছি সংসার জীবন নিয়ে ভালো। কথা চোখের মাঝে লোনা পানি নিয়ে বললো ভুলতে পেরেছে কি তুমি আমায়? আব্দুল্লা বললো হ্যা ভুলে না গিয়ে আর কি করার, এটা কথা বলতে খুবই কষ্ট হলো। কথা আবারো বললো বিয়ে করেছো। আব্দুল্লা বললো না। মনে হয় করবো না। কথা বলতে বলতে কথার হাসবেন্ড চলে আসলো কথার পরিচয় করে দিলো আমার বন্ধু আব্দুল্লা। কিছুসময় কথাবার্তা বলে চলে গেলো। যাওয়ার সময় কথা শুধু আব্দুল্লা পিছন ফিরে দেখতে দেখতে চলে গেল। আব্দুল্লা একায় বলে ভালোবাসা যদি নিঠুর নিবিড় যন্ত্রণা হয় তাহলে কেন ভালোবাসার মোহ মায়ার বাঁধনে সৃষ্টি হলো। কথা যেখানে থাকুক ভালো সুখে থাকুক সারাজীবন। তার কথা মনে থাকবে সারাজীবন ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com