গ্রামের শেষ প্রান্তে বটগাছে একটি ভূত বাস করত। ভূতটির নাম ছিল কেল্লা। কেল্লা পানিতে ডুবে মরার পরে ভূত হয়েছে। কেল্লা কোনো কাজ কর্ম করত না। খেয়ে দেয়ে শুধু ঘুরে বেড়াত। রাতের বেলায় বটগাছের উপরের ডালে শুয়ে নাক ফুলিয়ে ঘুম পারত। একদিন কেল্লাকে তাঁর ঠাকুর দা একটা কাজ দিল যেয়ে দেখে আয় তো কেল্লা। কেল্লা তো ছিল খুবই অলস আর তাঁকে দিয়ে তো কোন কাজ কর্ম হয় না। কাজের কথা শুনে কেল্লা বলল, কি করা যায়মনে মনে কেল্লা বলে এখন শুধু ঠাকুর দার কাছ থেকে পালাতে পারলে বাঁচি। ঠাকুর দা কেল্লা কে বললো কি রে কেল্লা কিছু বললে। কাজ কর্ম তো নেই খাস দাস আর ঘুরে বেড়াস। এবারের কাজটি করতে পারবে। কেল্লা মনে মনে বলে কি আর করার হ্যা হ্যা ঠাকুর দা এই কাজটি করতে পারবো। এই বলে কেল্লা সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে চলে যায়। একদম যেয়ে পৌঁছায় নিমতলির ঐ পাড়াগাঁয়ে সেখানে কাজ কর্ম সম্পুর্ন করে ফিরে আসার সময় শহরের উপর দিয়ে উড়ে আসে। উড়ে আসার সময় দেখে মানুষ একটি ছেলে একটি মেয়ে রেষ্টুরেন্টে বসে প্রেম করছে। মানে তাঁরা দুজন বয়ফ্রেন্ড আর গালফ্রেন্ড। কেল্লা উপরে বসে আফসোস করে আমারো যদি একটা গালফ্রেন্ড থাকতো। কতোই না ভালো হতো। এই বলে শুধু আফসোস করে কেল্লা ভুত। অবশেষে সকল কাজকর্ম শেষ করে চলে আসে ভুতের রাজসভায়। রাজসভায় ঠাকুর দা জিজ্ঞেস করলো কেল্লা ভুতকে কি হয়েছে রে তোর বল আমায়। তখন কেল্লা ভুত মন মনমরা অবস্থা বললো আসার সময় দেখলাম মানুষের কতো না গালফ্রেন্ড আছে আমার তো একটাও নাই। দু:খ আমার এটাই ঠাকুর দা। কি আর করবার পানিতে ডুবে মরার পর ভুত হয়ে তো ভুতের রাজ্য বসবাস। পারি না মানুষের মতো চলতে পারিনা মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াতে। তখন ঠাকুর দা বললো কেল্লা যাই হোক তুই আমাদের রাজ্যের একটা ভুত বা পেত্নী কে খুঁজে বের করে তাঁকে গালফ্রেন্ড বানিয়ে একসাথে ঘুরে ফিরে বেড়াতে পারিস। না হয় স্মার্ট ফোনে ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন জনকে ফেসবুক বন্ধু করো সেখান থেকে একজন ভালো সুন্দর রমনীকে পছন্দ করো। এত কথা বলার পরেও কেল্লা ভুতের মন ভালো হলো না। উড়ে উড়ে চলে গেল পেত্নীর রাজ্যে। সেখানে এক গাছের নিচে বসে মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে আর ভাবছে কেল্লা ভুত। হঠাৎ করে এক পেত্নীর আগমন সেখানে পেত্নী কেল্লা ভুতকে বসে থাকা দেখেনি। এক পেত্নী আর এক পেত্নীকে বললো আজকে তো বিকেলবেলায় রাজার রাজসভায় মিটিং আছে যাইতে হবে। কখন যাবি জানাবি একসাথে রাজার রাজসভায় যাবো। ঐ ভূত উত্তরে বললো যাই হোক এখন তো দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে আর কিছুক্ষণ সময় এখানে বসে না দুজনে গল্প করে কাটিয়ে দেই। দুই ভূতে নানান ধরনের গল্প শুরু করলো কে কিভাবে মানুষ ছিল কেমনে মরে ভুত হলো তাই বলতে শুরু করলো। কেল্লা ভুত গাছের আড়ালে বসে শুনে যাচ্ছে এমন সময় কেল্লা ভুতের ঘুম পেয়ে গেলো। চোখ বন্ধ হতেই ঘুমিয়ে পড়লো। আর কি হয়েছে কেল্লা ভুত বলতে পারে না। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে দেখে পেত্নী দুটি রেডি হচ্ছে মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য কতো যে সাজগোছ করছে। একজন ব্যস্ত বাহারী শাড়ী পরা নিয়ে একজন বসেছে মেকাপ নিয়ে রুপচর্চা করার জন্য। সাজগোছ ও রুপচর্চা শেষে রওনা দিল পেত্নীর রাজসভায়। কেল্লা ভুত পিছনে পিছনে উড়ে চললো যেতে যেতে মনে মনে বলে এই রাজসভায় যেয়ে যদি একটি সুন্দর রমনী পাই। তাঁকে আমি গালফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়ে আসবো। উড়ে উড়ে চলছে তো চলছে পথ যেন আর শেষ হচ্ছে না। তখনই কেল্লা ভুতের একটা গান মনে হলো এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হবে তুমি বলো তো। আসার সময় শুনেছে গানটি কেল্লা ভুত। যেতে যেতে বেশ সময় পর পৌঁছে গেল পেত্নীর রাজসভায়। কেল্লা ভুত সেখানে গিয়ে একটু আড়ালে বসলো যেন কেউ তাঁকে দেখতে না পারে। পেত্নীর রাজসভায় মিটিং শুরু হয়ে গেল। সবাই আসতে শুরু করলো। আসতে আসতে এক সুন্দর রমনী সেখানে উপস্থিত হলো। পেত্নী রাজা সেই সুন্দর পেত্নী রমনীকে বললো তোমার এত দেরি কেন হলো? তোমার নামে বেশ নালিশ পেয়েছি যা ধারনার বাইরে। তোমাকে আমাদের এই পেত্নী রাজসভা থেকে বরখাস্ত করা হলো। সুন্দর রমনী পেত্নী জানতো না যে কি করেছে। শুধু জানতো সে একটু দেরি করে আসে৷ সুন্দর পেত্নীর বিরোধী পেত্নী তাঁকে তাড়ানোর জন্য এসব নাটক তৈরী করেছে। সুন্দর রমনী পেত্নী ছিলো সৎ ও সঠিক পথের অধিকারী। কথায় আছে ভালো মানুষ কোথাও স্থান নাই।
মিটিংয়ে শেষে মুখ খানি কালো করে বেরিয়ে পড়ে সুন্দর রমনী পেত্নী তখনই সুযোগ নিল কেল্লা ভুত। পেত্নী রাজসভা থেকে বেরিয়ে বেশ কিছুদূর গিয়ে গাছে বসলো।
সেথায় গিয়ে কেল্লা ভুত বললো হাই কেমন আছো তুমি।
কেল্লা ভুত তো সবকিছু শুনেছে তারপরও জিজ্ঞেস করলো সুন্দর রমনীকে। সব কিছু বিস্তারিত বললো কেল্লা ভুত শুনলো। তখনই বলে উঠলো সুন্দর রমনী পেত্নী আমাট খুবই খিদে পেয়েছে কিছু খেতে হবে না হলে তো মরে যাবো। সাথে সাথে কেল্লা ভুত খাবার নিয়ে সামনে হাজির। খাবার খেয়ে দু’জনে হাটতে শুরু করলো। হাটতে হাঁটতে নানান কথার মাঝে উঠলো গালফ্রে্ড ও বয়ফ্রে্ডের কথা। সুন্দর রমনী পেত্নী বললো আমার বয়ফ্রেন্ড কতো কিছু না খাওয়াতো। কেল্লা ভুত বললো তুমি আমাকে ভালোবাসবে । এ কথা বলে সামনে যেতে দেখতে পেল এক পুকুরে শাপলা ফুল ফুটে আছে। দৌড়ে গিয়ে সেথায় থেকে শাপলা ফুল তুলে এনে সুন্দর রমনী পেত্নীকে দিয়ে বললো আমি তোমাককে খুবই ভালোবাসি। তুমি আমার সঙ্গী হবে। পেত্নী সোজা মনে বললো ঠিক আছে। কেল্লা ভুত বললো আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। সুন্দর রমনী পেত্নী মুচকি হাসি দিল। এই কথা শুনে তো বেশ খুশি কেল্লা ভুত। ঠাকুর দা র কাছে এসে কেল্লা ভুত বললো আমি বিয়ে করবো। ঠাকুর দা বললো তোর যা ইচ্ছা। এদিকে আবার সুন্দর রমনী পেত্নীর রাজসভায় পেত্নী র বরখাস্ত এর ব্যাপারে কথা বার্তা চলেছিল। সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে সুন্দর রমনী পেত্নী নির্দোশ তাই রাজা হুকুম দিলো সেনাপতিকে যাও সুন্দর রমনী পেত্নীকে যেখান থেকে পাও খুঁজে নিয়ে আসো।
এদিকে তো কেল্লা ভুতের বিয়ে প্রায় সম্পূর্ণ হতে চলেছে মালা বদল করলে বিয়ে শেষ।। এই সময় এসে হাজির পেত্নী রাজসভায় সেনাপতি বন্ধ করো এসব কিসের বিয়ে হচ্ছে। সুন্দর রমনী পেত্নী নির্দোশ প্রমাণ হয়েছে তাই তাঁকে নিতে এসেছি। কেল্লা ভুত তো নিয়ে যেতে দিতে না। জোর করে সেনাপতি নিয়ে গেল। কেল্লা ভুতের চোখের জলের শেষ হলো না। তাই কেল্লা ভুত কেদে কেঁদে বললো জীবনে গালফ্রেন্ড পেলাম না। একজন পেলাম সেও চলে গেল। জীবনে কাউকে ভালোবাসা বৃথা।