প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো দৃষ্টিনন্দন বোরহানউদ্দিন চৌধুরীবাড়ি জামে মসজিদ। বেলজিয়াম থেকে কলকাতা হয়ে আনা হয়েছিল মসজিদটির নির্মাণসামগ্রী। ভারতের কলকাতা থেকে আসা শ্রমিকরা ৩ থেকে ৪ বছরে মসজিদটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। ১৮৬০ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন তৎকালীন জমিদার বোরহানউদ্দিন চৌধুরী। তার নামানুসারেই মসজিদটির নামকরণ হয়েছে। শুধু মসজিদ নয়, জমিদার বোরহানউদ্দিনের নামে নামকরণ করা হয়েছে বোরহানউদ্দিন উপজেলারও। প্রাচীন ও দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি ভোলার বোরহানউদ্দিন সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে বোরহানউদ্দিন-দরুন বাজার মূল সড়কের পাশে রামকেশব গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১ একর ৪০ শতাংশ জমির উপর নির্মিত মসজিদটির পশ্চিম পাশে রয়েছে ঘাট বাঁধানো পুকুর।
কারুকার্য খচিত চারটি লোহার পিলারের বারান্দা পেরিয়ে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলবে বাদামি রঙের তিনটি কাঠের দরজা। মসজিদের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে আরও দুটি জানালা। যা নির্মাণের পর থেকে এখনো একই রকম বিবর্ণহীন। ওপরে লোহার বিম। তার উপরে চুন, সুরকি ও পাথরের ঢালাই। যেভাবে নির্মিত হলো মসজিদে নববী মসজিদের দক্ষিণ পাশে খোলা মাঠ। তৎকালীন সময়ে মসজিদের পূর্ব পাশে ছিল তিনটি কাচারি। যেখানে পথিকরা আশ্রয় নিতেন। কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলেও সম্প্রতি সেখানে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য বিশ্রামাগার এবং সাধারণ মুসল্লিরের জন্য ওজু ও গোসলখানা করা হয়েছে।
চৌধুরী বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তি ও মসজিদের নিয়মিত তত্ত্বাবধায়ক মাহাবুব আলম চৌধুরী জানান, কারুকার্য খচিত মসজিদটি নির্মাণের জন্য শ্বেতপাথর, লোহার বিম, চুন সুরকি, দরজা-জানালার কাঠসহ সব নির্মাণসামগ্রী বেলজিয়াম থেকে আনা হয়েছিল। বোরহানউদ্দিন চৌধুরীর ছিল তিন ছেলে। তার সব সম্পত্তি চার ভাগ করে তিন ভাগ সন্তানদের মধ্যে আর এক ভাগ ওয়াকফ্ স্টেট করে মসজিদের জন্য রেখে যান। মসজিদের জন্য তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অনেক জমি তেতুলিয়া নদীর ভাঙ্নে বিলীন হয়ে যায় এবং সরকারি খাসজমিতে পরিণত হয়। বর্তমানে ১২ একর জমি রয়েছে। সেই জমির আয় দিয়েই মসজিদের আনুষঙ্গিক কাজ ও খরচ করা হয়। মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুজ্জামান জানান, দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এই মসজিদটি দেখতে আসেন এবং মসজিদে নামাজ আদায় করেন। মসজিদ মাঠে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার জামায়াতও অনুষ্ঠিত হয়।
মসজিদের বর্তমান মোতাওয়াল্লি শামিম আহমেদ নোমান চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে মসজিদটির বেশ কয়েকবার সংস্কারকাজ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের শেষের দিকে ব্যক্তিগত অনুদান থেকে তিনি মসজিদটির রং ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেন। প্রাচীন এই মসজিদটি নির্মাতা জমিদার বোরহানউদ্দিন চৌধুরী ১৯১৩ সালের ৪ মে মারা যান। মসজিদের পাশেই তাকে কবরস্থ করা হয়েছে।