• আজ- শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন

বিলুপ্তির পথে তালগাছ ও বাবুই পাখি

লেখক : / ৬৮ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

add 1

বাংলার গ্রামগুলো একসময় প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ও জীববৈচিত্র্যের প্রতীক ছিল। তালগাছের সারি এবং সেই গাছে ঝুলে থাকা বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা গ্রামীণ জনপদের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের নিদর্শন ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহ্য এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তালগাছের পাতা মোড়ানো বাবুই পাখির বাসা, পাখির কিচিরমিচির শব্দ—এসব এখন শুধুই স্মৃতি। আধুনিকায়ন, পরিবেশ বিপর্যয়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং কৃষিকাজে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামগুলো থেকে তালগাছ ও বাবুই পাখির দেখা মেলা এখন বিরল।

বাবুই পাখির জন্য তালগাছ শুধু একটি গাছ নয়, এটি তাদের বসবাসের প্রধান আশ্রয়। তাল, নারিকেল, সুপারি, খেজুর গাছ বাবুই পাখির প্রিয় আশ্রয়স্থল। কিন্তু এসব গাছ কমে যাওয়ার ফলে বাবুই পাখির বাসা তৈরি ও জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে। তালগাছ ও বাবুই পাখি যেন একই মুদ্রার দুই পিঠ—একটির অনুপস্থিতি অন্যটির অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তোলে। এই প্রাকৃতিক শিল্পকর্মগুলি আজ বিলুপ্তির পথে, যা আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বড় হুমকি।

একসময় গ্রামীণ জনপদে প্রচুর তালগাছ ছিল, আর সেই গাছে বাবুই পাখি বাসা বুনে আনন্দময় কলতানে ভরিয়ে দিত গ্রামগুলো। কিন্তু আধুনিকতার চাপে এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই দৃশ্য এখন শুধুই অতীতের গল্প। পরিবেশের বৈরী অবস্থা ও মানুষের অসচেতন কর্মকাণ্ডের ফলে এই প্রাণীগুলি আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। লবণাক্ততার কারণে একদিকে তালগাছসহ অন্যান্য গাছপালা মারা যাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষ গাছ কেটে কৃষি জমি ও বসতি গড়ছে। এসব কারণে বাবুই পাখি তাদের প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থল হারাচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে এই সুন্দর পাখিটি আমাদের পরিবেশ থেকে প্রায় বিলীন হতে চলেছে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে আমাদের সচেতন হতে হবে। তালগাছসহ বাবুই পাখির জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ শুধু প্রাণিজগতের নয়, আমাদেরও টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। আমাদের উচিত তালগাছ রোপণ ও সংরক্ষণ করে বাবুই পাখির মতো প্রজাতিগুলির আবাসস্থল ফিরিয়ে আনা। শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি আমাদের পরিবেশের স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

বাবুই পাখির শিল্পকর্ম আর কিচিরমিচির শব্দ আমাদের গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অংশ ছিল। এ প্রাণী ও তার পরিবেশ রক্ষার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে আমরা কেবল অতীতে ফিরে তাকিয়ে আক্ষেপ করবো। আমাদের দায়িত্ব এই ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদকে পুনরুদ্ধার করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারে।

add 1


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অন্যান্য লেখা সমূহ

আজকের দিন-তারিখ

  • শনিবার (সন্ধ্যা ৭:৪৫)
  • ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৮ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬
  • ৬ পৌষ, ১৪৩১ (শীতকাল)
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Sundarban IT