দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশে জোরালো কার্যক্রম শুরু করেছে। দলটির প্রধান লক্ষ্য হলো, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি তুলেছে বিএনপি, যা দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের মূল চাবিকাঠি।
বিএনপির নির্বাচনি প্রস্তুতি শুধু সাংগঠনিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং দলের নেতৃত্ব জনগণের কাছে তাদের প্রস্তাবনা, প্রতিশ্রুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরার কাজেও মনোনিবেশ করছে। সারা দেশে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে। এই কার্যক্রমে বিএনপির তরুণ নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে, যারা আগামী নির্বাচনে দলের হয়ে প্রার্থী হতে চান।
তবে বিএনপির নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংগঠন শক্তিশালী করার পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য অনেক নেতাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা দলের শক্তি ও কাঠামো সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
একদিকে যেমন বিএনপি শৃঙ্খলার দিকে নজর দিচ্ছে, অন্যদিকে তারা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে একটি জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনাও সামনে আনা হয়েছে, যা দলটির নির্বাচনি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা সারা দেশে অবিরত গণসংযোগ এবং জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, যা তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এমনকি বিএনপির সাবেক এমপিরাও, যারা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যারা প্রার্থী ছিলেন, তাদের মধ্যে যারা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, তারা এবার নতুন করে দলের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।
তবে বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, নির্বাচনে জনগণের আস্থা অর্জন। তাদের দাবি, শেখ হাসিনার অধীনে কোন স্বাভাবিক নির্বাচন সম্ভব নয়, তাই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে এই দাবি পূর্ণ হলে বিএনপি কি জাতীয় নির্বাচনে কেবল একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে অংশগ্রহণ করবে, না কি আরও বৃহত্তর গণতান্ত্রিক শক্তির সমন্বয়ে সরকার গঠনের লক্ষ্য নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিএনপির নির্বাচনমুখী প্রস্তুতি এখন দেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত। দলটি যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়, তবে তাদের সামনে একটি বড় সুযোগ আসতে পারে। তবে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা, দলের শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের সমর্থন লাভ—এই তিনটি লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিএনপিকে আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে।