বিশ্ব সমাজব্যবস্থায় বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যার মাধ্যমে নারী-পুরুষের সুখ-শান্তি প্রেমণ্ডপ্রীতির মধুরতম বন্ধন সৃষ্টি ও মানব বংশের স্থায়িত্ব ও সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। তবে বাল্যবিবাহ দেশ ও জাতির জন্য অভিশাপ। পৃথিবীর যে কটি দেশ বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১২ থেকে ‘১৮ বয়সের মধ্যে। বিয়ের ১৩ মাসের মধ্যেই ৬৫% মেয়ে সন্তান ধারণ করে। গ্রামের মেয়েদের বেশির ভাগই বিয়ের এক বছরের মধ্যে সন্তান জন্ম দেয়। আর এসব বাল্যবিবাহের অধিকাংশ কারণগুলো হচ্ছে- দরিদ্রতা, সচেতনতার অভাব, প্রচলিত প্রথা ও কুসংস্কার, সামাজিক অস্থিরতা, মেয়েশিশুর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তার অভাব, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, যৌতুক প্রথা এবং বাল্যবিবাহ রোধ-সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া। বাল্যবিবাহের কারণে অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ, মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যহানি, তালাক, পতিতাবৃত্তি, অপরিপক্ব সন্তান প্রসবসহ নানাবিধ জটিলতার শিকার হচ্ছে।
১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ আইন প্রণয়ন করা হলেও এখনো গ্রামগঞ্জে-মফস্বল এলাকাসহ সারা দেশে বাল্যবিবাহ হচ্ছে অহরহ। এ আইনে বাল্যবিবাহের সংজ্ঞায় ছেলেমেয়ের বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত বয়সের নিচে পক্ষদ্বয়ের যেকোনো একজন হলেই সেটি বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য। দেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কল্পে আইন বিদ্যমান। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন রকম কর্মসূচিও পরিচালিত করছে। তবু বাল্যবিবাহ অব্যাহত রয়েছে। বেশির ভাগ বিয়ে আইনের পশ্চাতে এবং গোপনে হচ্ছে বলে এর সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। এরমধ্যে ঢাকার বস্তিতে থাকা ৮০ ভাগ কন্যাশিশু বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। বালকদের মধ্যে এই হার কিছুটা কম। এই বাল্যবিবাহের মূলে রয়েছে সুপাত্র প্রাপ্তি, দরিদ্রতা এবং যৌন হয়রানির ভয়। নানা ধরনের প্রতিরোধ-প্রতিবাদ তবু দেখা যাচ্ছে বাল্যবিবাহ রোধ করা যাচ্ছে না।
বাল্যবিবাহ রোধে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ। বাল্যবিবাহ বন্ধে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি- শিশুর জন্ম নিবন্ধীকরণ আইন মেনে চলা, বিয়ের রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করা, বহুবিবাহ রোধ করা। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ একটি আইন তৈরি করা একান্ত জরুরি। এছাড়াও মেয়েদের শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলতে হবে। বাল্য বিবাহ রোধে সকলকে যার যার অবস্থান সোচ্চার হতে হবে। জনসচেতনতা তৈরি করতে পারলে সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ নিরোধ করা সম্ভব।