দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বেড়েছে। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে উৎপাদনও হচ্ছে। এরপরও কিছুদিন ধরে রাজধানীর কিছুকিছু এলাকা এবং গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদা কম থাকায় গত কয়েক বছরে শীতকাল লোডশেডিংমুক্ত ছিল, তবে এ বছর তার ব্যতিক্রম হয়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের লোডশেডিং আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা। সরকারের সাশ্রয় নীতিতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উচ্চ দরের এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে কমেছে গ্যাস সরবরাহ ফলে কমেছে বিদ্যুতের উৎপাদন। এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং এড়াতে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে হবে ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। শতভাগ বিদ্যুতায়নের অংশ হিসেবে দেশে আরও পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে। পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানির জন্য আগামী মার্চ থেকে জুনের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে, যা মার্চ থেকে জুনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ্বালানির যে অনুমান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) করেছে তার চেয়ে এক-চতুর্থাংশ বেশি। দেশের বিদ্যুতের মোট চাহিদার ২৭ শতাংশই বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে আসে। কাজেই, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করতে না পারলে গ্রীষ্মে বড় আকারে লোডশেডিং হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় সারা দেশেই লোডশেডিং হচ্ছে, খোদ রাজধানীতে এতদিন যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল, সেখান থেকেও সরে আসা হয়েছে। ঢাকার বাইরে লোডশেডিংয়ের অবস্থা তুলনামূলক বেশি খারাপ। অনেক অঞ্চলে ৪-৫ ঘণ্টা করেও বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুতের অভাবে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ছে। নগরীর অভিজাত বিপণি কেন্দ্র থেকে শুরু করে শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে বেচাকেনায় মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। অথচ গ্রাহকেরা নিয়মিত এবং চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের সার্বিক জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি অন্যান্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এমতাবস্থায় এর থেকে নিরসন পেতে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। পাইকারি বিদ্যুতে চলতি বছরে আর্থিক ঘাটতি প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। তা সমন্বয়ে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যহার বৃদ্ধি না করে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ে অন্যায়, অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বন্ধ করতে হবে। সৌরবিদ্যুৎ, বাতাস, বায়োগ্যাস, হাইড্রো, বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিদ্যুৎ যেমন আধুনিক জীবনের অনুষঙ্গ তেমনি উন্নয়নের হাতিয়ার। তাই জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিদ্যুতের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com