দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে থামার নাম নিচ্ছে না। সরকারের নানা পদক্ষেপ এবং বাজার মনিটরিংয়ের পরও সিন্ডিকেটের দাপটে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এর মধ্যে আলু অন্যতম একটি উদাহরণ, যার দাম এখন আকাশচুম্বী। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকার নিচে, অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদন খরচ ছিল মাত্র ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। এই পরিস্থিতি সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যেখানে দামের নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ একেবারেই অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
সরকার শুল্ক কমিয়ে বিদেশি আলু আমদানির সুবিধা দিলেও তাতেও বাজারে দাম কমছে না। ব্যবসায়ীরা কম দামে আমদানি করা আলুও দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে। এর মূল কারণ হচ্ছে বাজারে নিয়ন্ত্রণহীন সিন্ডিকেটের কার্যক্রম, যারা দেশের মানুষের পকেট কেটে নিজেদের লাভবান হচ্ছে। এছাড়া কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ীরা আলু নষ্ট করলেও বাজারে দামে কোনো প্রভাব পড়ছে না, বরং তারা সস্তায় আমদানি করা আলুকে বাজারে প্রচলিত দামে বিক্রি করছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যদি একযোগভাবে বাজার মনিটরিং করে তবে এই সিন্ডিকেটের দখলে থাকা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো পদক্ষেপের প্রভাব দেখা যাচ্ছে না, যার ফলে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে।
এদিকে, কৃষকরা যেহেতু আলুর উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, সিন্ডিকেটের কারণে তাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। এর পাশাপাশি অতিবৃষ্টির কারণে বীজ রোপণে দেরি হওয়া এবং বাজারে আগাম আলুর সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়েছে।
সরকার যদি এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে আলুর মতো সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যও তাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে। বর্তমান অবস্থায় সরকারের উচিত, বাজার মনিটরিংয়ে আরও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা, সিন্ডিকেট বিরোধী কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা এবং ভোক্তা অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তবে একমাত্র এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেই বাজারে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব এবং দেশের সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com