বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ঘাটতি রয়েছে। শহর কিংবা গ্রাম, প্রত্যেক এলাকাগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাড়ানো উচিত। কেননা বয়স্ক বা বিধবা ভাতার কার্ড করতে গিয়েও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই। ঘুষের টাকা না পেলে তালিকায় নাম ওঠেনা ভাতাপ্রত্যাশীদের। এক জরিপ বলছে, প্রতিটি কার্ডের জন্য তারা গড়ে ২ হাজার ৬৫৩ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এমনকি ঘুষ দিতে না পারায় ভাতা কার্ড করাতে পারেন না অনেকেট এবং ভাতা প্রদানের দায়িত্বে যেসব মন্ত্রণালয় রয়েছে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের দুর্বলতা রয়েছে। এ ছাড়াও দেখা যায়, অনেকে একাধিক ভাতা পাচ্ছেন, আবার অনেকে একটি ভাতাও পান না। দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে ও পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরে ‘বয়স্কভাতা’ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়।
প্রাথমিকভাবে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাসহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়। পরবর্তীতে দেশের সকল পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশন এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হয়। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অঙ্গিকার হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে বয়স্কভাতাভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে ক্ষমতা গ্রহণোত্তর ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বয়স্কভাতাভোগীর সংখ্যা ২০ লক্ষ জন থেকে বৃদ্ধি করে ২২ লক্ষ ৫০ হাজার জনে এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৫৭ লক্ষ ০১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৫৭ লক্ষ ০১ হাজার বয়স্ক ব্যক্তির জন্য এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৪৪৪.৫৪ কোটি টাকা। এখন বয়স্কভাতা কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আংশিক এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
বর্তমানে সকল উপকারভোগীকে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার নগদ ও বিকাশ এবং এজেন্ট ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে জিটুপি পদ্ধতিতে (গভর্মেন্ট টু পারসন) ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ‘খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাষ্ট্রটা এখন অতিক্ষুদ্র ধনিক গোষ্ঠী, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের হাতের মধ্যে বন্দী হয়ে গেছে। ফলে এত উন্নয়নের পরেও বৈষম্য অনেক বেড়েছে। বর্তমানে বৈষম্য এত বেশি যে সেখানে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।’ এজন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। ‘আমরা আমাদের দারিদ্র্যসীমা কমিয়ে আনতে পারলেও বৈষম্য এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে এটা তুলনাহীন জায়গায় চলে গেছে। প্রতিটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে অনিয়ম ও দুর্নীতি গেড়ে বসেছে। কিন্তু যেসব জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা গরিবের হক কেড়ে নেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই বললেই চলে। তাই বয়স্ক ও বিধবাদের তালিকা তৈরির নামে যাঁরা প্রকৃত গরিব ও দুস্থ ব্যক্তিদের হক মেরে খান, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকা প্রয়োজন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. আব্দুর রহমান
লেখা পাঠানোর ইমেইল: sahityapata24@gmail.com