২০২৫ সালে ‘অমর একুশে বইমেলা’র আয়োজনে একটি বড় পরিবর্তন আসছে। এই বছর থেকে বাংলা একাডেমি তাদের ঐতিহ্যবাহী বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে নিজেদের প্রাঙ্গণে আয়োজন করতে বাধ্য হবে। এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, কারণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দীর্ঘদিন ধরেই এই মেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল এবং এখানেই বইমেলা আয়োজনের কারণে বহু মানুষের কাছে এটি একটি স্মরণীয় আয়োজন হয়ে উঠেছিল।
গত ৬ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক শাখা থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়, যাতে জানানো হয় যে, ২০২৫ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা আয়োজন করতে হবে। তবে, বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমি এখনও প্রশাসনিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য আবেদন জানাবে।
বইমেলা আয়োজনের স্থান পরিবর্তন নিয়ে বই প্রকাশক, সাহিত্যপ্রেমী এবং সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন ও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। বইমেলা শুধুমাত্র একটি সাহিত্যিক অনুষ্ঠানই নয়, এটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত। দীর্ঘ সময় ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা আয়োজনের ফলে এটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। সেই সুবাদে, মেলার স্থান পরিবর্তন হলে সেটি কতটা সফল হবে, সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বইমেলা আয়োজন করতে চায়, কিন্তু গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বরাদ্দ না দেওয়ার ফলে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি বাংলা একাডেমি এখন পর্যন্ত কোনো আপিল বা চিঠি পাঠায়নি, যা এই পরিস্থিতি আরো জটিল করেছে।
এদিকে, ১৯৭২ সালে চিত্তরঞ্জন সাহার উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বই বিক্রির আয়োজন শুরু হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সেই সময় থেকে, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছিল বইপ্রেমীদের মিলনস্থল। তবে সময়ের সাথে সাথে মেলার আকার বেড়ে গেলে ২০১৪ সালে মেলার কিছু অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরিত হয়। এরপর ২০২১ সালে বইমেলার নাম পরিবর্তন করে ‘অমর একুশে বইমেলা’ রাখা হয় এবং এর আয়োজন এক নতুন মাত্রায় চলে যায়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা আয়োজনের জন্য নানা কারণে সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি পূর্বাচলে মেলা স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবুও, এটি স্পষ্ট যে, বইমেলার জন্য নতুন স্থান নির্বাচন করা খুব সহজ হবে না। প্রথমত, বাংলা একাডেমির নিজস্ব প্রাঙ্গণে এত বড় আকারের মেলা আয়োজন করা সম্ভব নয়, এবং দ্বিতীয়ত, বইমেলার স্থানান্তরের ফলে যে সাংস্কৃতিক ধারাটি তৈরি হয়েছে, তা হয়তো হারিয়ে যেতে পারে।
অতএব, ২০২৫ সালের বইমেলা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও, একটি বিষয় স্পষ্ট— বাংলা একাডেমি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মেলার আয়োজনে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বইমেলা যেখানেই অনুষ্ঠিত হোক, এটি যে এক সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনার অঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অধিকারী, তা পরিবর্তন হওয়ার নয়।